- এই যে ভুলোদা৷ দোলের দিন সন্ধ্যেয় একটু আড্ডা-আড্ডা গা করছিল, তাই ভাবলাম তোমার বাড়িতেই হানা দিই..।
- আরে বিট্টা যে৷ আয় আয় আয়৷ কদ্দিন পর এলি রে ভাই..কদ্দিন পর।
- আছ কেমন?
- ও'সব প্লেস্যান্ট্রি এক্সচেঞ্জ পরে হবে'খন৷ আগে বল কী খাবি...কবজি না ডুবিয়ে নিস্তার পাবি না কিন্তু বিট্টে..এই বলে রাখলাম৷
- হে হে হে হে, সে হবে'খন ভুলোদা৷ অত ব্যস্ত হয়ো না তো..আগে দু'টো সুখদুঃখের গপ্প হোক!
- আরে খাবারদাবার জম্পেশ না হলে আড্ডা জমে নাকি?
- জমে না, তাই না?
- একদমই না৷ তা যদি খাবার অর্ডারই করি বিট্টা, কী প্রেফার করবি - চাইনিজ না মুঘলাই? স্টার্টারে চাইনিজ রেখে যদি মেনকোর্সে ইন্ডিয়ান রাখি..।
- আরে তুমি তো গোড়াতেই শশব্যস্ত হয়ে পড়লে ভুলোদা..শোনো, দুপুরে লাঞ্চটা ভালোই হয়েছে৷ এখনই তেমন খিদে নেই..খানিকক্ষণ গপ্পগুজব করে না হয়...।
- নো স্যার৷ খাওয়ার ডিসিশিন আগে৷ তারপর আড্ডা৷ তবে লাঞ্চটা যদি তোর ওজনদার হয়ে থাকে, তা'হলে চাইনিজ আর মুঘলাই-য়ের মিক্সটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে তাই না৷ এমনিতে ভাবছিলাম ড্রাই চিলি প্রন, চিকেন স্প্রিংরোল আর গার্লিক ফিশ স্টার্টারে। তারপর ডিনারে বিরিয়ানি, মাটন রেজালা আর চিকেন চাপ৷ কী চমৎকার হত ব্যাপারটা! তবে খিদে যখন কম, তখন ওভারডোজ ঝেড়ে লাভ নেই৷ চাইনিজটা বাদই থাক৷ অনলি মুঘলাই ম্যাজিক..কী বলিস?
- সেই ভালো ভুলোদা৷
- অবিশ্যি, কাল আবার সোমবার৷ তোর অফিস আছে৷ বিরিয়ানি রেজালা চাপ ব্যাপারটা গুরুপাক হয়ে যেতে পারে৷
- গুরুপাক, ইয়ে৷ হ্যাঁ মানে..।
- রোব্বারের লাইট ডিনার আর লম্বাঘুম ইজ এসেনশিয়াল ফর আ চমৎকার মনডে৷ তার চেয়ে বেটার প্ল্যান বলি শোন৷
- আহ ভুলোদা, তুমি বেশিই চিন্তাভাবনা করে ফেলছ৷
- ফ্রিজে ভালো রুই আছে৷ জম্পেশ করে কালিয়া বানিয়ে নিই৷ আর তার সঙ্গে পোলাও৷ রান্নাঘরে রান্না আর আড্ডা দুইই জমে যাবে৷
- বাহ্। বাহ্৷ সেই ভালো।
- হিপ হিপ..?
- হুর্...।
- এহ্ হে!
- ক..কী হল?
- না না৷ একটু ক্যালকুলেশনে ভুল হয়ে গেছে ভাই বিট্টে৷ ফ্রিজে রুই নেই, শিঙি আছে।
- মরা শিঙি? ফ্রিজে?
- না না৷ রান্না করা শিঙি৷ আলু পটল দেওয়া৷ পার্সোনাল রেসিপি৷
- শোনো না ভুলোদা...ডিনারের ব্যাপারটা বরং বাদ থাক, প্লীজ৷
- তোর খাওয়াদাওয়া নিয়ে হাজার রকমের বাতিক রয়েই গেল রে বিট্টা৷ খাবার কথা শুনলেই তো গায়ে জ্বর আসে৷ তোর বয়সে আমি কলসি কলসি পোলাও আর হাঁড়ি হাঁড়ি মাটন হাপিশ করে দিচ্ছি৷ আর তুই ডিনারের প্ল্যানেই নার্ভাস৷ বেশ বেশ৷ খাবারদাবারের ব্যাপারে আমি জোর করি না৷ তার চেয়ে বরং শিঙাড়া আর রোল নিয়ে আসি৷ কেমন? সঙ্গে রসগোল্লা৷
- আবার এর জন্যে বেরোতে যাবে কেন ভুলোদা৷
- আরে, দু'মিনিটে যাব আর আসব৷ তবে..।
- তবে?
- আজ তো দোল৷ রানা কি রোলের দোকানটা খুলবে?
- রানাদার রোলের দোকান? খুলেছে৷ আসার পথেই দেখে এলাম তো৷
- উঁহু৷ মন সায় দিচ্ছে না৷ উৎসবপার্বণের দিন৷ কাজেই হাভাতে বাঙালির ডিমান্ড হাই৷ এই দিনটায় খাবারদাবারের দোকনগুলো বাসি জিনিসপত্র চালাবার তাল করে৷
- তা..তা হবে হয়ত৷
- আলবার তাই৷ এ যুগে আর কাউকেই ভরসা করা যায় না রে ভাই। ডিমে প্লাস্টিকের কুসুম৷ পচা মাংস..উফ ব্যাব্যাগো।
- তা ঠিক৷ ঠিক৷
- তুই কি শিঙাড়া ব্যাপারটাকে সেফ ভেবেছিস?
- সেফ নয়?
- বাজারের যত পচা আলু, যেগুলো আমি আর তুই বেছে সরিয়ে রাখি৷ সে'গুলো কোথায় যায় জানিস?
- কোথায়?
- স্ট্রেট টু শিঙাড়াস৷ সাধে কি বাঙালির অম্বল-বুকজ্বালা এমন স্ক্যান্ডালাস ভাবে বেড়ে গেছে।
- ভুলোদা, খাওয়াদাওয়াটা আজ বাদই থাক না...গল্প হলেই তো হল।
- কিছুই খেতে চাইছিস না দেখছি৷ আমার আবার কাউকে ভালো করে খাওয়াতে না পারলে মন ভরে না কিছুতেই৷
- তুমি বরং কড়া করে এক কাপ কফি খাওয়াও৷
- ক্যাফেইন? তার চেয়ে ফলিডল চাইলে পারিস বিট্টা। খেলে খাবি হাই কোয়ালিটির চা৷ আর্ল গ্রে চলবে?
- অফ কোর্স৷
- এক্সলেন্ট চয়েস৷ কিন্তু বিট্টা রে, আমার পছন্দের আর্ল-গ্রে কিছুতেই পাড়ার দোকানটা সাপ্লাই দিতে পারছে না৷ আর চায়ের ব্যাপারে কোনও কম্প্রোমাইজ আমি বরদাস্ত করতে পারিনা৷
- ভুলোদা, আমার আচমকা মনে পড়ল৷ একটা জরুরী কাজ আমি ভুলেই মেরে দিয়েছিলাম৷ মাইরি৷ আড্ডাটা বরং না হয় অন্য কোনওদিন..।
- অগত্যা৷ তাই হোক৷ তবে শোন, নেক্সট দিন কিন্তু পাত পেড়ে খেতে হবেই৷ আর সে'দিন তোর কোনও গাঁইগুঁই শুনব না৷ মাটন, দেশী মুর্গি আর অন্তত তিন রকম মাছ৷ প্লাস হাইক্লাস রাবড়ি৷ রিফিউজ করলে গাঁট্টা খাবি৷
- বেশ বেশ, তাই হবে'খন৷ আজ আসি?
- যাবি? আয়৷ তবে নির্জলা বেরিয়ে যাবি? এদ্দিন পর এলি বাড়িতে তুই বিট্টা। এদ্দিন পর।
- আচ্ছা, এক গেলাস জলই দাও না হয়৷
- অফকোর্স। আচ্ছা শোন বিট্টা, আজ ওয়ান-ডে ম্যাচটা দেখতে গিয়ে খাওয়ার জলটা ভরা হয়নি৷ শোন ভাই, রান্নাঘরে গিয়ে দেখ বাঁদিকের দেওয়ালে ফিল্টার লাগানো আছে৷ আর এই যে দু'টো বোতল৷ চট করে ভরে আন তো দেখি৷ আর রান্নাঘর থেকে আসার সময় একটা গেলাসও নিয়ে আসিস৷ কেমন? জল না খেয়ে খবরদার যাবি না কিন্তু!