আমি আর দাদু একসঙ্গে সুমন আবিষ্কার করেছিলাম৷ বন্ধুর থেকে ধার করা ক্যাসেটে - "ইচ্ছে হল"। তখন সবে ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষা শুরু হয়েছে৷ দুপুরের দিকে পরীক্ষা, তাই সকাল থেকেই বুক ধড়ফড়, গা-কাঁপুনি৷ গোটা বছর মন দিয়ে পড়াশোনা না করার বিশ্রী গ্লানি। সে অস্বস্তি কাটাতে ভরসা ছিল ফিলিপ্সের টেপ-রেকর্ডার আর দাদুর 'আরে এগজামই তো, হাতিঘোড়া-বজরাপানসি তো নয়' মার্কা হাসি৷
সেই সকালগুলোর স্মৃতি ফিকে হওয়ার নয়৷
সুমনের সুরে দাদু মাথা দুলিয়ে চলেছে, হাঁটুতে তাল ঠুকছে, আর 'বাহ্ বাহ্' বলে বিড়বিড় করে চলেছে৷ একদিকে অধরা সিলেবাস মনের কলার টেনে ধরছে আর অন্যদিকে সুমনের বাঁশুরিয়াদাদা বুকের মধ্যে ঢুকে ঝাড়পোছ শুরু করে দিয়েছে৷ মা হাঁকডাক শুরু করেছে স্নানে যাওয়ার জন্য, পরীক্ষার জন্য সময়মত না বেরোলেই নয়৷ কিন্তু ক্যাসেটের সেই দাপুটে সুমন থামছেন না। খাটের এককোণে সুমনাপ্লুত দাদু, ডায়াগোনালি অন্যকোণে আমি৷ মাঝে অদরকারী কিছু বইখাতা৷
দাদু মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে বলছে, "সবজিওয়ালা বন্ধু তো বটেই৷ এই সুন্দর সেন্টিমেন্টটা নিয়ে আমরা আগে গান বাঁধিনি বা শুনিনি কেন বলো দেখি ভাই"? অরুণ মিত্রের উঠে দাঁড়ানোর অ্যাডভেঞ্চার শুনে দাদুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে - সেই ঔজ্জ্বল্যে ভর দিয়েই আমার সুমন-ভালোবাসার দিকে এগিয়ে যাওয়া৷
দাদুর চলে যাওয়া বছর সাতেক আগে, মার্চের এই ১৬ তারিখেই।
সুমনের গান কখনও কোত্থাও যাবে না, সে'টাই বাঁচোয়া৷
শুভ জন্মদিন, সুমন৷
No comments:
Post a Comment