- এই যে! মন্ত্রী!
- আজ্ঞে, হুকুম করুন রাজামশাই।
- শুনেছি দেশের লোকের নাকি বড় কষ্ট?
- তা ওলাউঠা না কী একটা রোগ ছড়িয়েছে বটে৷ গাঁয়ে গাঁয়ে মড়ক৷
- মড়ক? তা'বলে আবার চড়কের মেলাটা বানচাল হবে না তো?
- সে কী কথা রাজন! পরশু যে সে মেলার উদ্বোধন! আপনি ফিতে কাটবেন৷ পায়রা ওড়াবেন৷ মেঠাই বিলি করবেন৷
- বেশ বেশ বেশ৷ তা ওই কাঙাল ভোজনের ব্যাপারটা রেখেছ তো? চাষাভুষোর ব্যাটাগুলোর প্রতি আমার বড় মায়া৷
- আজ্ঞে, ওলাউঠায় লোকে একটু হয়রান। এর মধ্যে ওরা পাত পেড়ে খেতে চাইবে কি?
- কেন চাইবে না? সারাদিন খালি রোগ, মহামারী, মড়ক নিয়ে কান্নাকাটি করলে হবে? একটু পজিটিভিটি চাই যে৷
- তবু...কাঙালিভোজনের জন্য যদি যথেষ্ট কাঙাল না জোটে?
- তবে শালাগুলোকে টেনেহিঁচড়ে এনে বসানো চাই৷ রাজা নিজে খাওয়াতে চাইছে, খাবে না মানে? ওদের বাপ খাবে। শোনো মন্ত্রী৷ প্রচার চাই। বিশ্বের সেরা কাঙালি ভোজন করিয়েছে রাজা; এ খবর লোকের মুখেমুখে ঘোরা চাই৷
- যেয়াজ্ঞে রাজন৷ রাজ্যের সব দেওয়াল জুড়ে লেখা হবে৷ ইস্কুলে পড়ানো হবে৷ দোরে দোরে গিয়ে বোঝানো হবে। আর ইয়ে, নেহাৎ কেউ বুঝতে না চাইলে তাকে দু'ঘা দেওয়া হবে৷
- তোফা! আর শোনো হে, প্রথম কাঙালির পাতে খিচুড়িটা আমি দেব৷ নিজের হাতে৷ তা দেখে লোকে ধন্য ধন্য করবে৷
- রাজা দয়ার সাগর৷ তাই হবে৷
- তবে শোনো, মন্ত্রী৷ মহামারীর মধ্যে আবার যেন ওই ছোটলোকগুলোকে আমার ছুঁতে না হয়৷
- তাই হবে৷
- বেশ বেশ৷ তা, যা জিজ্ঞেস করার জন্য তোমায় ডেকেছিলাম৷ দেশের লোকজন নাকি কষ্টে আছে?
- ওই যে৷ মহামারী৷ মড়ক। আর নিন্দুকে যা বলে আর কী৷ ডাক্তার বদ্যি কম, চিকিৎসে হচ্ছে না৷ এদের হাজার রকমের বায়নাক্কা।
- শালা অকৃতজ্ঞের দল। আরে জন্মিলে টেঁসিতে হবে, অমর কে কোথা কবে; এ তো শাস্ত্রের কথা৷ দু'চারজন লোক না হয় টপাটপ মরলই বা৷ আগামীকাল না মরে আজ মরল না হয়৷ তা'তে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হল শুনি? আর এ'দিকে এই যে এত্তবড় মেলার আয়োজন করছি, তার কি কোনও দাম নেই?
- কুকুরের দল মহারাজ৷ কুকুরের দল৷ ওরা কি আর ঘিয়ের মর্ম বুঝবে? ওদের সেই একই ঘ্যানঘ্যান। ওষুধ দাও রে, পথ্য দাও রে৷
- যত হাড়বজ্জাত প্রজা জুটেছে আমার কপালে!
- সত্যিই মহারাজ৷ সত্যিই।
No comments:
Post a Comment