- দত্ত, আজ একটু লেট করে ফেললে দেখছি৷
- আর বলেন কেন গোলকদা৷ বাতাসে এত ইমপিউরিটি..।
- এয়ার পলিউশন কি তোমাদের মুভমেন্টকে এফেক্ট করে?
- গোলক সমাদ্দারের মত পোড় খাওয়া প্ল্যানচেটিয়ের তো সে'টা জানা উচিৎ৷ তবে পলিউশন বাদেও দেরী হওয়ার আরও একটা কারণ আছে৷
- সে'টা কী..।
- আপনার এই ড্রয়িংরুমে একটা বিশ্রী ভাইব্রেশন টের পাচ্ছি বুঝলেন। কাজেই মিডিয়ামে ল্যান্ড করতে সামান্য অসুবিধে হচ্ছিল।
- মিডিয়ামে ল্যান্ড করতে প্রব্লেম? দিবাকরের শরীরে ঢুকতে অসুবিধে? সে কী!
- দোষটা অবিশ্যি দিবাকরের নয়৷ মিডিয়াম হিসেবে ও সত্যিই অতুলনীয়৷
- নয়ত আর তাকে মাসমাইনে দিয়ে পুষছি কেন বলো৷ আরে আমার সেক্রেটারির দরকারটাই বা কীসে৷ তা, ওই বিশ্রী ভাইব্রেশনের কেসটা কী ভাই দত্ত? সন্ধ্যেবেলা খানিকক্ষণ ভজন শুনেছিলাম বটে৷ তা'তে রুমের পরিবেশ নষ্ট হয়নি তো?
- আহ, ও'সব সুপারস্টিশনের কোনও মানে হয়? আরে বাবা ভূতেরা ভজন দিব্যি ভালোবাসে৷ কীর্তন হলে তো তোফা৷ ওই রামনামে ভূত ভাগানোর ব্যাপারটা জাস্ট বোগাস৷
- তা'হলে অসুবিধেটা কোথায় সে'টা খুলে বলো৷ প্ল্যানচেটে বিঘ্ন মোটে ভালো কথা নয়৷ এর আগে তুমি বা তোমার ইয়ারদোস্তরা যবে যে অসুবিধের কথা বলেছ, সে'সব দূর করতে আই হ্যাভ লেফট নো স্টোন আনটার্নড৷ তাই নয় কী?
- সে জন্যেই তো আপনার মত প্ল্যানচেটিয়ের কাছে হরেকরকম আত্মা নিশ্চিন্তে সারেন্ডার করে৷
- অবিশ্যি, দিবাকরেরও ক্রেডিট রয়েছে৷ ওর মত হাইক্লাস মিডিয়াম ছাড়া এ'সব সম্ভব হত না৷
- কিন্তু প্ল্যানচেট জিনিয়াস তো আপনিই, তাই নয় কি গোলকদা?
- হে হে হে৷ তা, সবই তো জানো হে দত্ত৷ আমি একা রিটায়ার্ড মানুষ৷ ভগবানের দয়ায় আমার যা আছে তা দিয়ে দু'বেলা দরাজ হাতে হরির লুঠ বিলোলেও জীবনটা দিব্যি কেটে যাবে৷ এই প্ল্যানচেটের শখ নিয়েই পড়ে রয়েছি৷ মাঝেমধ্যে তোমাদের ডেকে গল্পগুজব করে বাকি দিনগুলো আনন্দে কাটিয়ে দেব, এ'টুকুই আশা৷ তা এই বিশ্রী ভাইব্রেশনের কেসটা তো তলিয়ে দেখা উচিৎ৷ তোমরাই হলে গিয়ে আমার জীবনের ধ্রুবতারা, তোমাদের ল্যান্ডিংয়ে অসুবিধে হলে যে ক্যালামিটি ঘটে যাবে৷
- আপনার এই ঘর মিস্টিক পাওয়ারে পরিপূর্ণ , বুঝলেন৷
- মিস্টিক পাওয়ার। জানো দত্ত, অন্য আত্মারাও তাইই বলে কিন্তু৷ আশেপাশে খুব জোরালো যন্ত্রণা বা নির্মম দুঃখ কোথাও ভেসে বেড়ালেই নাকি তার ছোঁয়া আমার এই প্ল্যানচেট জোনে এসে পড়ে। এই গত হপ্তাতেই সান্যালের আত্মাও ঠিক এ কথাটাই বললে।
- সান্যালের আত্মা তো রীতিমতো মজবুত৷ আমাদের দুনিয়ায় সে বেশ কেউকেটা একজন।
- ও পাড়ায় যে তুমিও একজন এলিট হিসেবে সুনাম অর্জন করেছ তা আমি জানি কিন্তু৷ অবিশ্যি এটা শুনতে তোমার বিনয়ে বাধে, তা আমি বুঝি। যাক গে, নেগেটিভ
ভাইব্রেশনটা কীসের বলো তো?
- আজ কেন জানিনা মনে হল যেন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাহাকার ভেসে বেড়াচ্ছে যেন আপনার এই প্ল্যানচেট জোনে৷ আর সে সব হাহাকারে বাতাস ঘোলাটে হয়ে পড়ে কিনা..মিডিয়ামকে গ্রিপ করতে বড় ঝ্যামেলা হয়।
- ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হাহাকার..।
- বাতাসে কেন ভাসছে বলুন তো দেখি গোলকবাবু?
- উম..।
- কেন?
- আই থিঙ্ক আই নো।
- ব্যাপারটা কী?
- এ পাড়াতে একটা অনাথ আশ্রম আছে৷ তাদের হরদম হরেক রকমের বায়নাক্কা৷ আর মনু মিত্র হল সে আশ্রমের সেক্রেটারি, আজকাল খুব যাতায়াত আরম্ভ করেছে ডোনেশনের জন্য। বলে ফান্ডের অভাবে নাকি ছেলেমেয়েগুলোর নিউট্রিশন মার খাচ্ছে৷ দু'পাঁচশো টাকা নয়, এক্কেবারে দশ হাজার চেয়ে বসলে৷ আরে, টাকা কি খোলামকুচি নাকি?
- নয়ই তো৷ টাকা কি গাছে ফলে?
- আমিও তাই বললাম মনুকে। কিন্তু সে মহাত্যাঁদড়।
- টাকা অমন ফস করে দিলেই হল নাকি৷
- তুমিই বলো দত্ত, কী বিশ্রী জুলুম৷
- তবে কিনা, ওই খোকাখুকুদের হাহাকার আপনার এই প্ল্যানচেট জোনের বাতাসকে এমন বিষিয়ে তুলছে..। আমাদের পক্ষে একটু ডিফিকাল্ট হয়ে পড়েছে কমিউনিকেশন..।
- আরে শোনো দত্ত, তোমরা হলে প্রায়োরিটি। আর হাজার দশেক আর এমন কী৷ এইত্তো, গেল মাসে এক আত্মা এমনই ফাঁপরে পড়েছিল৷ তার সমস্যা দূর করতে একটা দাতব্য চিকিৎসালয়ে দিয়ে দিলাম কড়কড়ে পঁচিশ হাজার টাকা। তারপর এই ধরো মাস চারেক আগে এ'রকমই চাপে পড়ে একটা ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প ফস করে স্পনসর করে ফেলেছিলাম। তুমি ওই বাতাসে ভেসে বেড়ানো খোকাখুকুদের হাহাকার নিয়ে ভেবো না। ওর একটা হিল্লে আমি কালই করে দেব৷ মনু দশ চেয়েছিল, কাল ওকে ডেকে আমি সোজা কুড়ি হাজারের চেক লিখে দেব৷ ঝ্যামেলা খতম।
- তাই বলে অতগুলো টাকা গোলকদা...।
- আরে কোয়ালিটি আত্মাদের জন্য কুড়ি হাজার আর এমন কী হে.. ও নিয়ে তুমি ভেবো না৷
**
- হ্যালো, মনুদা!
- হ্যাঁ, বলো দিবাকর।
- শুনুন। আপনার কাজটা হয়ে গেছে৷ কালকেই হয়ত গোলকবাবু আপনাকে ডাকবেন চেক লিখে দিতে৷
- কী বলছ দিবাকর..গোলকবাবু অনাথ আশ্রমে ডোনেট করতে রাজী হয়েছেন?
- আমি তো বলেইছিলাম। উনি ঠিক রাজী হবেন৷ ইন ফ্যাক্ট, একটু জোরাজুরি করলে উনি দশ হাজারের অনেক বেশি টাকা অফার করবেন৷ বলে রাখলাম, কথাটা মাথায় রাখবেন। শুধু আমার ব্যাপারটা পাঁচকান করবেন না যেন।
- নিশ্চয়ই নয়৷ দিবাকর, তুমি সত্যিই জাদু জানো৷ তুমি গোলকবাবুর সেক্রেটারি হয়ে আসার পর থেকেই দেখছি অমন চশমখোর মানুষও কর্ণের মত দানধ্যান করে চলেছে। আমেজিং!
- থিয়েটার ছেড়ে এই সেক্রেটারির খাজা চাকরী নিয়ে তো আমি এমনি এমনি পড়ে নেই মনুদা। চারদিকে এত হাহাকার, সে'সব সামাল দিতে প্রত্যেককে কিছু না কিছু তো করতেই হবে৷ তাই না?
2 comments:
সত্যি কথা! এতো হাহাকার!! এতো রকম, এতো জনের হাহাকার!!! প্রত্যেকেই যদি অন্যের চোখের জল মোছানোর জন্য এগিয়ে না আসে, তাহলে তো কিউমুলেটিভলি হাহাকার বেড়েই চলবে!!
Asadhran
Post a Comment