- কী ব্যাপার দত্ত, অমন ব্যাজার মুখে বসে যে।
- ও কিছু না৷
- আরে ভায়া! বলো না৷
- বললাম তো মন্টুদা, অল ইজ ওয়েল।
- অল যদি ওয়েলই হবে তবে সামনে রাখা ডিমটোস্টটা ঠাণ্ডা করে কলমের মাথা চেবাচ্ছ কেন? দস্তুরের ফাইল খুলে রেখে ফ্যাফ্যা করে জানালার দিকে চেয়ে আছ কেন? বলে ফেলো ভায়া৷ কল্যিগ হিসেবে আমার একটা রেস্পন্সিবিলিটি আছে তো। বলেই ফেলো৷
- বেশ৷ বলেই ফেলি৷
- ডিমটোস্টটা ওয়েস্ট করা ঠিক হবে?
- আপনিই খেয়ে নিন বরং৷ টাচ করিনি৷ মুখ বিস্বাদ হয়ে আছে৷
- বেশ৷ তা, বলো৷ হয়েছেটা কী।
- বাপের ওপর বড় রাগ হচ্ছে মন্টুদা।
- সে কী! হঠাৎ? উনি তো বোধ হয় গত বছরই..।
- গত হয়েছেন। রাইট৷ এবং বিদেয় নেওয়ার আগে আমার জন্য টাকার গদি বিছিয়ে যাননি৷ কলকাতার বুকে দু'টো বাড়ি তিনটে ফ্ল্যাট রেখে যাননি।
- ডিমটোস্টের কসম ভায়া৷ তোমার রাগের ডিরেকশনটা ঠিক ধরতে পারছি না..।
- বাবা যদি টাকার গদিতে বসিয়ে যেতেন তা'হলে বড়সাহেবের জোরজুলুম এমন নিশ্চুপ ভাবে হজম করতে হত না৷ মুখের ওপর একটা কড়া রেসিগনেশন ছুঁড়ে ভ্যাকেশনে বেরিয়ে পড়তাম মন শান্ত করতে। কোনও হিমালয়ান রিট্রীটে বসে পাইপের ডাঁটি চিবুতে চিবুতে পিয়ানো শুনতাম আর বলতাম, "আই ডোন্ট গিভ আ ড্যাম"।
- ওহ, রাগ তা'হলে বাপের ওপর নয়৷
- একশোবার বাপের উপর৷ টাকার গদিটা রেখে না যাওয়া ছাড়াও বহুবিধ কুকর্ম তিনি করে গেছেন।
- যেমন?
- টনটনে আত্মসম্মান বোধ আর তার পাশাপাশি সব হারানোর ভয় রক্তে ট্রান্সফার করে দিয়ে গেছেন৷ মনের মধ্যে প্রিন্সিপাল আর মর্যালিটির বাতিক ইঞ্জেক্ট করে করে এক্কেবারে নাম্বার ওয়ান নেকুমাল বানিয়ে ফেলে রেখে গেছেন৷ কাজেই রাগটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট তাঁর ওপরই৷
- বড়সাহেব খেপচুরিয়াস হলেন কেন বলো দেখি? অবশ্য প্রশ্নটা ভুল হল৷ খেপচুরিয়াস ব্যাপারটাই ওর নর্মাল স্টেট৷ তা আজ হয়েছেটা কী?
- হবে আবার কী। বড়সাহেব ফোন করেছেন৷ ও'দিকে আমি দস্তুরের ফাইল রিকনসাইল করার জন্য ম্যাক্সিমাম কনসেন্ট্রেশনে কাজ করব বলে ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছি৷ তিনবার রিং বেজে গেছে, আমি দস্তুরে দস্তুরমত ডুবে৷ ব্যাস, বস সে'টাকে অ্যানার্কি বলে ধরে নিয়েছেন৷ অতঃপর রেগে আগুন হয়ে তিনি আমার টেবিলের সামনে এসে বলে গেছেন, "আই উইল থ্রো ইউ আউট অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট অ্যান্ড পুট ইউ ইন আ হেল হোল৷ অ্যান্ড দেন আই উইল স্ক্রিউ ইউর কেরিয়ার"।
- বটে। স্ক্রিউ করবে বলেছে? ডিক্লেয়ার করেছে?
- তিরিশ সেকেন্ডের জন্য মনে হল যাই - হাইক্লাস ইংরিজি ঝেড়ে একটা গা কাঁপানো রেসিগনেশনের চিঠি লিখি আনি৷ কিন্তু ওই৷ ছেলের ফিউচার, নতুন ফ্ল্যাটের ইএমআই, বাপের গছানো নার্ভাসনেস; সব মিলে বুঝলাম যে জুতোর হাজার ঘা হজম করতে হলেও, স্যালারির গোদানটা রিফিউজ করার ধক আমার নেই৷
- মনখারাপ ভায়া?
- নিজেকে মিনিমাম বাহাত্তরটা চড় মারার ইচ্ছেটাকে মনখারাপ বলা চলে কিনা জানিনা।
- হায়্যারার্কিতে না হই, তোমার চেয়ে আমি বয়সে বড় তো বটেই৷ তাই সাহস করে একটা বাজে জ্ঞান দিয়ে যাই৷ কেমন?
- ইরশাদ।
- কেরিয়ার স্ক্রিউ করাটা বড়সাহেবের হাতে৷ হক কথা৷ কিন্তু দত্ত, এই মুখের সামনে রাখা ডিমটোস্ট বিস্বাদ করে দেওয়ার ক্ষমতাটা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছ কি মরেছ৷
- আপনিও লেগপুল করবেন মন্টুদা?
- বাপের জন্য মনকেমন করা খোকার লেগপুল করার আগে যেন আমি নরকের কড়াইতে বসে নিমপাতার পোলাও খাই হে দত্ত৷ শোনো, লোকজনকে দুরমুশ করে কেরিয়ার বাগানোটা কর্পোরেটে জগতে নতুন নয়। আর তেমন গুঁতোগুঁতি করে ভাবে বসের চেয়ারবাগানো মানুষের ইগো পোল্ট্রির ডিমের খোসার চেয়েও পাতলা। তারা পাওয়ার বলতে বোঝে 'কেরিয়ার স্ক্রু করে দেওয়া'৷ লেট মি টেল ইউ দত্ত, দে ডোন্ট উইন বাই স্ক্রুইং ইওর কেরিয়ার৷ বাট দে ডু উইন বাই রুইনিং ইওর ডিমপাউরুটিস; ইয়ে, ডিমপাউরুটিটা একটা মেটাফর। অবভিয়াসলি৷ প্রমোশন যায় যাক, ওই ডিমরুটি আর ঠাণ্ডা হতে দিও না ভায়া৷ আর যাই হোক, ওই গাম্বাট-বুদ্ধি বসদের অত সহজে জিততে দেওয়ার কোনও মানেই হয় না।
- আর একটা ডিমটোস্ট অর্ডার করব তা'হলে বলছেন?
- বেড়ে বানিয়েছিল কিন্তু৷ আরও দু'প্লেট বলে দাও বরং৷
No comments:
Post a Comment