লোকজন বড্ড বেশি ছিদ্রান্বেষী হয়ে পড়েছে। কথায় কথায় শুধু খুঁত ধরে গপ্প ফাঁদা। গা জ্বলে যায়। ইচ্ছে করে দি কষিয়ে দু’ঘা। এই সবে একটু বাজারে বেরিয়েছি টপ কোয়ালিটি পাবদা খুঁজতে। সবেমাত্র খান-সাতেক দোকান ঘোরাঘুরি করে পাবদার পাশাপাশি সামান্য চিংড়িও তুলে নিয়েছি। সবে একটু দেশী মুর্গির খোঁজ করব কিনা ভাবতে ভাবতে একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটা স্পেশ্যাল আদা চা অর্ডার করেছি। সবে ভাবতে শুরু করেছি ফেরার পথে সামান্য রাবড়ি আর জিলিপি নিয়ে ফিরব। এমন সময় নজরে পড়ল; কী বিশ্রী ভিড় বাজারে।
কী বিশ্রী ভীড়। দেশে আলফা বিটা গামা ল্যাম্বডা আর কত রকমের বিশ্রী করোনা ভ্যারিয়ান্ট নেচে বেড়াচ্ছে অথচ লোকে যেন সাপের পাঁচ দেখে রাস্তায় নেচে বেড়াচ্ছে। এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছে, এ ওর সঙ্গে গপ্প জুড়েছে; যেন কল্পতরু মেলা। মাছের দোকানে ভীড়, মুর্গির দোকানে ভীড়, মাংসের দোকানে ভীড়, রাস্তায় অটো আর রিক্সার ভীড় – যাচ্ছেতাই! আরে এ’দিকে দেশে যে প্যান্ডেমিক চলছে সে’বিষয়ে কারুর কোনও হেলদোল নেই। এই ইনডিসিপ্লিনের জন্যই এ দেশের কিস্যু হল না আর হবেও না। অকারণে এত লোকের বাইরে বেরোনোর দরকারটা কী? দিব্যি ভাবলাম ফাঁকায় ফাঁকায় অল্প মাছ আর যৎসামান্য মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরে যাব – কিন্তু তার কি আর উপায় আছে?
চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে তৃপ্তি পেলাম বটে কিন্তু মনে স্বস্তি ফিরল না। আশেপাশের মানুষজনের ওপর একটা বিশ্রী রাগ তৈরি হচ্ছিল। এমন লারেলাপ্পা পপুলেশন নিয়ে দেশের প্রগ্রেস ঘটবে কী করে? লোকে মাস্কটাও ঠিক করে পরছে না! রাবিশ! এ দেশে দরকার ডিকটেটরিয়াল শাসন। এক্কেবারে কড়া হাতে শাসন না করলে এ সমাজ যে লাটে উঠবে। বিরক্তি যখন চরমে উঠল তখন দু’নম্বর চায়ের কাপের অর্ডার দিয়ে চায়ের দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চিতে বসে পড়লাম। খুব খারাপ লাগছিল দেশের এবং দশের কথা ভেবে। এমন অবক্ষয় দেখলে মাস্টারদা বড় কষ্ট পেতেন, সুভাষবাবু বোধ হয় লজ্জায় প্লেন থেকে স্বেচ্ছায় ঝাঁপিয়ে পড়তেন; অবশ্যই মাস্ক পরে তবে প্যারাসুট ছাড়া। গান্ধীজী সুতো বোনা ছেড়ে আনমনে চরকায় তেল দিয়ে যেতেন শুধু। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক থেকে।
ভাবনার মধ্যে সবে একটা পোয়েটিক ফ্লো এসেছে, এমন সময় অনিরুদ্ধর সঙ্গে দেখা। ছোকরা আমার চেয়ে বয়সে ছোট, একসময় আমার পাশের ফ্ল্যাটে থাকত। ভারী মুখচোরা ছিল এক সময়। তবে বাবুটি এখন লায়েক হয়েছেন, কী’সব এনজিওর সঙ্গে মিলেমিশে এদিকওদিক ফোঁপরদালালি করে বেড়ায়। কথায় কথায় ডোনেশন চায় বলে আমি সচরাচর এড়িয়ে চলি। কিন্তু আজ এক্কেবারে দুম করে সামনে চলে এলো, পাশ কাটাতে পারলাম না।
যেই না “আরে অনি যে” বলে আমি নিজের মাই-ডিয়ার স্টাইলে খেজুর করতে এগিয়ে গেছি, অমনি সে’ব্যাটা ফস করে বলে উঠলে, “এ বিচ্ছিরি সময়ে এমন রসিয়ে মাছের বাজার না করলেই নয় দাদা? আর ভীড়ের মধ্যে নিজে মাস্ক নামিয়ে চা গিলছেন গিলুন, অমন হা-হা করে আমার দিকে এগিয়ে আসার কী আছে। আমি একটা টীম নিয়ে এসেছি এ এলাকাটা ডিসইনফেক্ট করতে। চায়ের দোকানে বসে রকের আড্ডা পরে হবে’খন। আপনিও এ’ভাবে গা এলিয়ে বসে না থেকে বাড়ি ফিরে যান”।
সাধে কি বলি লোকজন বড্ড বেশি ছিদ্রান্বেষী হয়ে পড়েছে? কথায় কথায় শুধু খুঁত ধরে আর গপ্প ফাঁদে! আমি সাদা-মনে-কাদা-নেই সাতে-নেই-পাঁচে-নেই মানুষ, অনিরুদ্ধর এমন সব শুচিবাই ডায়লগ শুনে আমার গা জ্বলবে না? যত্তসব!
No comments:
Post a Comment