Tuesday, August 17, 2021

সামান্য প্রতিবাদ



- প্রটেস্ট করব ঘোষদা?

- এ ছাড়া আর উপায় কী আছে বল৷

- মানে, একটা লিখিত রিকুয়েস্ট দেওয়া যেতেই পারে৷ আমরা সবাই মিলে যদি ম্যানেজমেন্টকে কনসিডার করতে বলি, মানে..একটু নরম সুরে যদি..। 

- অনুরোধ কাকুতিমিনতি তো কম করা হয়নি। জানিস তো সব৷ 

- কিন্তু তাই বলে অফিসের মধ্যে দিনদুপুরে স্লোগান হেঁকে সিন ক্রিয়েট করব? 

- সিন ক্রিয়েট? কী বলছিস! তুই খুব ভালোভাবেই জানিস যে বিমলদার চাকরিটা যাওয়াটা উচিৎ হয়নি। অন্যায়টা আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে৷ এর পরেও তুই হেসিটেট করছিস কেন?

- তোমার কী ধারণা? অফিসে হইহট্টগোল করলে বিমলদাকে ওরা ফিরিয়ে নেবে?

- মে কাইন্ডলি কনসিডার বলে ঝুলোঝুলি করলে লাভ হবে কি?

- তাই বলে..। শোনো ঘোষদা, এ'রকম একটা হঠকারি কিছু করলে শেষে আমাদের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে৷ তার চেয়ে বরং আমরা সবাই মিলে যদি কিছু টাকাপয়সা কন্ট্রিবিউট করে বিমলদাকে সাহায্য করি..।

- মৃণাল৷ এ'দিককার স্লোগান হইহল্লা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না৷ তুই তোর টেবিলে ফেরত যা৷ ভাবিসনা আমি রেগে বলছি, রিস্কটা আমি জানি, বুঝি। এবং, সে রিস্ক নিতে না চাওয়াটা যে অপরাধ নয় সে'টাও বিশ্বাস করি৷ শুধু একটা রিকুয়েস্ট, তুই অন্তত বিমলদাকে টাকা অফার করিসনা, কেমন?

Saturday, August 14, 2021

বংপেনের জ্যেঠু




- তুমি লেখালিখি করো?

- (উজ্জ্বল মুখে) ইয়ে জ্যেঠু, আমার একটা ব্লগ আছে৷ বংপেন৷ 

- ওহ্৷ আমি ভাবলাম লেখোটেখো বোধ হয়৷

- (পালিশ করা বিনয় বাগিয়ে) ওই ব্লগে সামান্য দু'চার লাইন..। কখনও সখনও..।

- ভেরি গুড। ভেরি গুড৷ খুব খুশি হলাম শুনে৷ এ'বার আস্তে আস্তে লেখার চেষ্টা করো৷ 

- (সামান্য থমকে) ওই, বেসিকালি লেখাই তো৷ ব্লগে৷ ফেসবুকে৷ ট্যুইটারে।

- ব্লগ। ফেসবুক। ট্যুইটার। ভেরি গুড। এই তো চাই৷ নীড অফ দ্য আওয়ার যাকে বলে৷ গুড। 

-  হ্যাঁ৷ তাতেই সামান্য...অপর্যাপ্ত আর কী...লেখালিখি।

- জানি তো৷ দেখেছি৷ অল্প পড়েছি। শোনো, আমি বেশ টেক স্যাভি কিন্তু৷ 

- ( হাঁফ ছেড়ে) ওহ, হ্যাঁ! সেটাই বলছিলাম৷

- আমিও তাই বলছিলাম৷ এ'বারে তা'হলে লেখালিখির চেষ্টা শুরু করলেই হয়। শেখার কোনও বয়স তো নেই৷

- (এ'বার দমে যেতেই হল) না মানে...ওগুলোও তো..মানে..।

- ওগুলো কী? 

- (মরিয়া) লেখা৷ 

- সে কী!

- (হাহাকার) লেখা নয়?

- সকালবেলা কেউ কাগজ পড়তে চাইলে তুমি তার দিকে চপের তেল চুপচুপে ঠোঙা এগিয়ে দেবে?

- (থতমত) সে কী!

- এগজ্যাক্টলি।

- (মরিয়া) কিন্তু ব্লগে...জ্যেঠু মানে...আফটার অল..প্রসেসটা তো লেখালিখির৷ আউটপুট যাই হোক..।

- অফিসের মেমো বানাতে গেলেও প্রসেসটা লেখারই৷ জানালার বাইরে আকাশ দেখলে, রবীন্দ্রসঙ্গীত গুনগুন করলে, তারপর লিখলে 'দিস ইজ টু ব্রিং টু ইওর কাইন্ড অ্যাটেনশন'..ইত্যাদি৷ সে'টাও দিব্যি লেখা৷ বাট নট টু বি ক্যাটেগরাইজড অ্যাজ লেখালিখি।

- (মিইয়ে যাওয়া সুরে) হচ্ছে না বলছেন? মিডিয়াম চেঞ্জ করতে হবে?

- লেখালিখি তো প্ল্যানচেট নয়৷ যে ভূতের ব্যাটাবেটি রেস্পন্ড করছে না বলে মিডিয়াম চেঞ্জ করবে। 

- (রুমালের মা, বারুইপুরের আইফেল) ইয়ে৷ তাও বটে৷ কিন্তু, একদু'বার ছাপাও হয়েছে কিন্তু, আমার লেখা৷ 

- ভেরি গুড৷ ভেরি গুড৷ ছাপা হয়েছে৷ ব্লগ আছে৷ ফেসবুক আছে৷ তা'হলে লেখালিখির চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?

- ক্ষতি নেই৷ না?

- ইউ মাস্ট৷ তবে আই মাস্ট সে, তোমার ব্লগটা দিব্যি জমজমাট। ক্রিস্প৷ তরতরে৷ 

- এ'বার আসি জ্যেঠু৷

- আর তোমার ট্যুইটগুলোও ভালো হচ্ছে৷ 

- আসি জ্যেঠু৷

- গুড গোয়িং৷ চালিয়ে যাও৷ ব্রাভো!

- আসি। 

- এসো। আর লেখালিখির ব্যাপারটাও চেষ্টা করে দেখো, কেমন?

Monday, August 9, 2021

দ্য মঙ্ক অফ মাসকাবারি



এক সময় মনে হত মনের মত রেস্তোরাঁ বা বইয়ের দোকান খুঁজে পাওয়ার মত আনন্দ আর হয়না৷ পছন্দের রেস্তোরাঁর নির্দিষ্ট একটা টেবিলের প্রতি বাড়তি মায়া তৈরি হত, জুটে যেত খাবারদাবারের অর্ডার নেওয়া পরিচিত হাসিমুখ৷ মাসে বারদুই সে'খানে গিয়ে গা এলিয়ে দিতে পারলেই নিশ্চিন্দি৷ খাবার স্বাদটাই সে'খানে শেষ কথা নয়, সে'খানে জমে উঠত আড্ডা৷ হুড়মুড় থাকত না, সে'খানে মেনুকার্ড ধরে "আজ কী খাব" ভেবে ভেবে হন্যেও হতে হত না; কারণ সমস্তটাই বড্ড পরিচিত৷ অথবা ধরুন, প্রিয় বইয়ের দোকানের ম্যানেজারের সঙ্গে খেজুর জুড়তে পারার অসীম তৃপ্তি; তিনি আমার পছন্দ বুঝবেন, আমার আব্দারগুলো মনে রাখবেন৷ একমাস সে'খানে ঢুঁ না মারলে পরেরবার জিজ্ঞেস করবেন, "অনেকদিন পর যে...ভালো একটা সাজেশন আছে৷ আগে চা'টা আসুক, তারপর বলছি"৷ সে বইয়ের দোকানের ছোট প্লাস্টিকের টুলটাই হচ্ছে থেরাপি চেয়ার৷ সে'টায় বসে একের পর এক নতুন বইয়ের পাতা উলটে যাওয়া; সেলুনে নবরত্ন তেল দিয়ে ঝাড়া আধঘণ্টা মাসাজ করালেও সে স্বস্তি মিলবেনা। 

কিন্তু, আজকাল মনে হয় আদত তৃপ্তি রয়েছে একটা মনের মত মাসকাবারির দোকান খুঁজে পাওয়ার মধ্যে৷ বয়স? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা। তবে একটা জবরদস্ত সেকেলে 'যা চাইবেন তাই পাবেন' মার্কা দোকান, যে'খানে খরিদ্দার-দোকানির মধ্যে 'মাইডিয়ার' গল্পগুজবের সুযোগ রয়েছে, তেমন একটা মান্থলি ডেস্টিনেশন খুঁজে পাওয়ার মধ্যে যে হাইক্লাস নির্বাণ রয়েছে, সে'টা অস্বীকার করা সম্ভব হচ্ছেনা। 

ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে সুপার-স্মুদ মাখনে-ছুরি ব্যাপার আছে বটে, তবে আলাপচারিতার তেমন সুযোগ নেই৷ মালপত্তর ট্রলি-কার্টে ফেলো, বিলিং কাউন্টারে যাও, অফার-ডিসকাউন্ট বুঝে নাও, খেল খতম৷ প্রবল এক্সেল-শিট মার্কা অভিজ্ঞতা৷ কিন্তু এই একটা চমৎকার সাতপুরনো 'মম অ্যান্ড পপ স্টোর' খুঁজে ফর্দ ধরিয়ে দেওয়ার তৃপ্তিই আলাদা। দোকানের উদ্যোগী কর্মীরা সে ফর্দ হাতে চনমনে স্টাইলে কাজে লেগে পড়বেন৷ আর ক্যাশবাক্সের সামনে বসা কাকার সঙ্গে শুরু হবে গল্প, আউট-অফ-দ্যি-ফর্দ শৌখিন জিনিসপত্তরের আইডিয়া জুটবে তাঁর থেকেই৷ 

" বার্মা থেকে একটা বিশেষ ধরণের নুডল আনিয়েছি৷ ইন্সট্যান্ট নয়৷ তবে স্বাদে ইন্স্ট্যান্টলি কাত করবেই৷ নিজে টেস্ট করেছি তাই কনফিডেন্ট"। 
অথবা
"মুরুক্ক সম্বন্ধে আপনার আগ্রহ আমি নোটিস করেছি। একটা স্পেশ্যাল গার্লিক ফ্লেভারের মুরুক্কু আনিয়েছি৷ হোম-মেড। দু'বাক্স দিয়ে দিচ্ছি। আমার গ্যারেন্টি"। 
অথবা
"শুনুন, সিক্কিম থেকে বড় এলাচ এসেছে৷ আপনার ফর্দে আমিই অ্যাড করে দিয়েছি"৷ 

এমন গল্প-আড্ডায় মাসকাবারি এগোবে৷ ম্যানেজারবাবু মাঝে একবার ক্যাশবাক্স ছেড়ে আমার জিনিসপত্র প্যাক করার প্রসেসটা যাচাই করে আসবেন৷ শেষে বিল তৈরি হবে কলমে, লেটারহেডের নীচে সাদা পাতায়৷ ঢাউস ক্যালকুলেটরে হিসেব হবে৷ দু'হাজার একশো বাহাত্তর টাকা রাউন্ড অফ হয়ে যাবে দু'হাজারে৷ তিনহাজার দু'শো বাইশ তিন হাজারে৷ গল্পটা হয়ত ভালো জমবে যেদিন রাতের দিকে তাঁর দোকানে যাব, কর্মীরা দোকান বন্ধ করার তোড়জোড় চালাচ্ছে, অন্যান্য খরিদ্দার নেই৷ টাকার লেনদেন শেষ, আমার মালপত্তরের ব্যাগ পাশেই রাখা৷ ক্যাশবাক্সে প্রণাম ঠুকে খানিকক্ষণ দিলদরিয়া গল্পে মজবেন দোকানি কাকা; সৎ উপদেশ দেবেন খান দুই, খাবার অভ্যাস রিফাইন করতে বলবেন, " ফর্দে অত প্যাকেজড ফুড...নট গুড..নট গুড" মার্কা মৃদু তিরস্কারও জুটে যেতে পারে৷ হয়ত কোনও একদিন দু'জনেই একসঙ্গে দোকান থেকে বেরোব, তিনিই বলবেন, "চলো, পার্কিং পর্যন্ত তোমার সঙ্গে হেঁটে যাই"। দোকানের বাইরের সম্পর্কে "আপনি" থেকে "তুমি"-তে প্রমোশন পাবো। 

এমন একটা মাসকাবারির দোকান কপালে জুটলেই- প্রাণের হেঁসেলে শুরু হবে আরাম-চচ্চড়ি রান্নার ব্যস্ততা।

Sunday, August 8, 2021

সোনার ছেলে



- এ'বার তো একটা সংবর্ধনার ব্যবস্থা করতে হয় হে দত্ত।

- অফিসের জুনিয়র ক্যাশিয়ার দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে৷ এশিয়াডে সোনার মেডেল পেয়েছে৷ এ তো আমাদের সকলের জন্য গর্বের ব্যাপার স্যার৷ সংবর্ধনা তো হওয়াই উচিৎ৷

- তা ছোকরা দেশে ফিরছে কবে?

- পরশু, সকাল এগারোটায় দমদমে নামছে৷ অফিস থেকে আমিই না হয় ওকে রিসিভ করব..।

- রিসিভ করবে? সে কী! অফিস কামাই করে এয়ারপোর্ট যাবে গায়ে হাওয়া লাগাতে? 

- না মানে, এত বড় একটা অ্যাচিভমেন্টের পর মনোজ ফিরছে৷ তাই ভাবছিলাম অফিসের তরফ থেকে একটা ফুলের বোকে নিয়ে যদি..।

- মনোজ না হয় এশিয়াডে মেডেল পেয়েছে৷ তোমার টেবিলের পেন্ডিং ফাইলগুলো তো কমেনি। অফিসের জরুরী কাজ বাদ দিয়ে  এয়ারপোর্ট ঘুরতে যাওয়ার কোনও দরকার নেই৷ 

- ওকে স্যর। 

- আর ফুলটুল ডায়রেক্টলি ওই সংবর্ধনা সভায় দিলেই হবে। আর সে ব্যাপারটাও চট করে সেরে ফেলতে হবে৷ মনোজ অফিস জয়েন করলেই৷ 

- ওকে স্যর। 

- তুমি বরং কিছু জরুরী ব্যাপার নোট করে নাও৷ সেই সংবর্ধনা সভায় ফুল ছাড়াও একটা মানপত্র চাই। দরকার একটা উপহার; উপহারের বাক্সটা ঢাউস হতে হবে কিন্তু তাই বলে খরচটা যেন ঢাউস না হয় দত্ত। ওই মিক্সার গ্রাইন্ডার গোছের কিছু একটা দিয়ে দিও৷ তেমন কোনও বড় ব্র‍্যান্ড দরকার নেই আবার, এ তো এশিয়াড। অলিম্পিক টলিম্পিক হলে তাও বুঝতাম৷ আর হ্যাঁ, উপহারটা আমি ওর হাতে তুলে দেব৷ মনে করে ফটোগ্রাফার ডেকো৷ সেই ছবি একটা প্রেস রিলিজে লাগিয়ে রিলীজ করতে হবে। পরের দিন দু'একটা কাগজে ছাপিয়ে দিও'খন; ম্যানেজিং ডিরেক্টর অফ মালকানি ইন্ডাস্ট্রিজ ফেলিসিটেটস এশিয়াড মেডাল উইনার। কেমন? রিলিজ করার আগে ড্রাফটটা আমায় দেখিয়ে নিও একবার৷

- ইয়ে স্যর, সংবর্ধনা সভায় স্পীচটীপ কিছু থাকবে নাকি?

- আলবাত। 

- বেশ৷ মনোজের এশিয়াড এক্সপিরিয়ন্স শেয়ারিংয়ের জন্য তা'হলে একটা আধ ঘণ্টার স্লট রেখে দিই? 

- আধ ঘণ্টা? তোমার সবেতেই শুধু ফাঁকিবাজির ফিকির দত্ত৷ অফিসশুদ্ধু লোকজন আধঘণ্টা কাজ কামাই করে মনোজের বকবক শুনবে? এ'দিকে এই কোয়ার্টারে রেভিনিউ যে পড়তির দিকে, সে'খেয়াল আছে কি?

- তা'হলে..।

- মনোজ মিনিট পাঁচেক বলুক না৷ কী বলতে হবে সে'গুলো আমি লিখিয়ে দেব৷ ওই, কোম্পানির সাপোর্ট না থাকলে আমি এদ্দূর যেতে পারতাম না৷ থ্যাঙ্কস টু আওয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইত্যাদি ইত্যাদি৷  আমি বলে দেব, তোমার কাজ ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়া৷ 

- বেশ স্যার৷ তাই হবে। 

- উম্...ওই সভায় আমিও না হয় দু'চারটে কথা বলব'খন৷ আফটার অল, সে'টা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ আমি প্রাইমারিলি এক্সেলেন্সের সম্বন্ধেই বলব৷ একটু মোটিভেশনাল ইয়ে হবে আর কী৷ স্পোর্টিং স্পিরিটের রেফারেন্সও থাকবে৷ ওই, আমার জন্য মিনিট পনেরো-কুড়ির একটা স্লট রাখলেই হবে৷ 

- বেশ৷ 

- আর শোনো, দত্ত। এই'সব ঝুটঝামেলা মিটে গেলে মনোজকে একটু কাউন্সেল করতে হবে৷ খেলাটেলা ভালো ব্যাপার তবে অফিসের কাজে বেশি ফাঁকি পড়লেই চাপ৷ আরে আমিও তো প্রতি রোব্বারে গল্ফ খেলি, তাই বলে কি অফিসের প্রায়োরিটি ভুলে গেলে চলে? এশিয়াডের নাম করে সে ব্যাটা বড্ড বেশি ছুটি নিয়ে ফেলেছে৷ পরপর কয়েকটা উইকেন্ড যেন সে ছুটি না নিয়ে অফিসের জমা কাজগুলোকে সাফ করে৷ আর এ'বারে তার পুজোর ছুটি ক্যান্সেল। 

- তাই হবে স্যর৷ ইয়ে, আর কোনও ইন্সট্রাকশন?

- সংবর্ধনা সভার জন্য জব্বর সব ব্যানার ফেস্টুন চাই কিন্তু দত্ত৷ লোকে যেন টের পায় যে আমাদের কোম্পানি স্পোর্টিং ট্যালেন্টকে কালটিভেট করতে জানে৷ কেমন?

- জো হুকুম স্যর।

Tuesday, August 3, 2021

শিবু চৌধুরি আর প্রেমের চিঠি


প্রেমের চিঠি পাওয়ার মধ্যে যে কী ফুরফুরে একটা ভালোলাগা মিশে আছে৷ শিবু চৌধুরি সে'টা বিলক্ষণ জানেন৷ একুশ বছরের বিয়েও শিবুবাবুর প্রেমে মরচে ফেলতে পারেনি, তাছাড়া গিন্নীর মধ্যেও এখনও সেই তোলপাড় ব্যাপারটা আছেই৷ সে জন্যেই তো আজও এই হাবুডুবুটুকু টিকে আছে৷ চাকরীর টানে বারোমাস কলকাতার মেসে থাকতে হয় শিবুবাবুকে, কিন্তু তার মন পড়ে থাকে উত্তর বাঙলার এক শহরতলির আঠাশ নম্বর হরিমোহন দত্ত লেনে৷ গিন্নী সে'খানে সেলাই করছে, না খোকার ওপর চেঁচিয়ে হদ্দ হচ্ছে, না দুপুরের দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে পান খিলি করে মুখে পুরছে; এই ভেবেই তাঁর মন সারাক্ষণ উড়ুউড়ু হয়ে থাকে।  হপ্তায় তিনটে চিঠি তিনি লেখেন, গিন্নী লেখেন দু'টো৷ তা'তেই অবশ্য শিবু চৌধুরি নিজেকে ধন্য মনে করেন; তিনি জানেন আদেখলামোটা তাঁর মধ্যেই বেশি৷

শুক্রুবার অফিস থেকে ফিরে মেসের স্যাঁতস্যাঁতে বাথরুমটায় ঢুকে মার্গো সাবান কচলাতে কচলাতে টপ্পা ধরেছিলেন শিবুবাবু৷ টপ্পার সুর স্যাট করে কেটে দিয়ে বাথরুমের মধ্যে রুমমেট অনন্তর হাঁক ভেসে এসেছিল; "চিঠি এসেছে শিবুদা"! মনটা চলকে উঠেছিল শিবুবাবুর৷ এ হপ্তায় দু'টো চিঠির কোটা পেরিয়ে এ'টা তিন নম্বর। শিবু চৌধুরি জানেন যে গিন্নী তিন নম্বর চিঠি তখনই লেখেন যখন বাড়তি মাখোমাখো ভালোবাসা ভূতের মত ঘাড়ে চাপে৷ অনন্তকে " আসছি!" বলে টপ্পা থেকে গজলে চলে গেলেন ভদ্রলোক৷ বারোয়ারি মার্গোর বদলে নিজের পার্সোনাল স্টকের লাক্স সাবানটা প্যাকেট ছিঁড়ে বের করলেন৷ অবশ্য তিনি জানেন যে প্যাকেট ছেঁড়া মাত্রই এ সাবান বারোয়ারি খাতায় চলে গেল; মেসের সে'টাই অলিখিত নিয়ম৷ প্রেমের চিঠি বাঘের শিকার নয়, বরং সুরাসমেত শৌখিন কারুকাজ করা সোনার বাদশাহী পেয়ালার সঙ্গে তার তুলনা চলতে পারে৷ সে রহিসি জিনিসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে নেই৷ কাজেই তাড়াহুড়ো না করে স্নানে মন দিলেন ভদ্রলোক৷ 

স্নান সেরে বেরিয়ে এসে বসন্তকে চট করে আদা দেওয়া চায়ের পাশাপাশি কড়া করে ডবল ডিমের মামলেট ভেজে আনতে বললেন৷ এও জানিয়ে দিলেন রাতের খাবার তিনি বাইরেই খাবেন৷ তিন নম্বর চিঠি পড়ার পর মেসের ট্যালট্যালে ঝোল প্রাণে সইবে না৷ পরেশের দোকানের রুটি মাংস ছাড়া আজকের মেজাজটা কেউ ছুঁতে পারবে না৷ এরপর গোটা গায়ে পন্ডসের সুগন্ধি পাউডার ছড়িয়ে, গায়ে প্রিয় আকাশী রঙের ফতুয়াটা চাপিয়ে, নিজের চৌকিতে এসে আয়েস করে বসলেন শিবু চৌধুরি। অনন্ত টিউশনি পড়াতে যাওয়ার আগে এনভেলপখানা তার চৌকির ওপরেই বালিশচাপা দিয়ে রেখে গেছে৷ 

আধঘণ্টার মাথায় চা আর মামলেট শেষ করে এনভেলপখানা হাতে নিলেন শিবুবাবু৷ গিন্নীর হাতের লেখায় মেসের ঠিকানাটা বার বার পড়েও যেন মন ভরেনা৷ খামের গায়ে কি মুসুরডাল আর কেয়োকার্পিন তেল মেশানো একটা মিঠে গন্ধ লেগে আছে? ব্যাপারটা স্রেফ বাড়াবাড়ি,  কিন্তু অমন কাব্যিক কল্পনা সামান্য মাথায় না খেললে তো প্রেমটাই মাটি৷ যা হোক৷ হপ্তায় তিন নম্বর চিঠির গুরুত্ব শিবু চৌধুরি জানেন। বেশির ভাগ হপ্তাতেই এই তিন নম্বর চিঠির সোহাগ তার কপালে জোটেনা৷ আর শিবুবাবুর ক্ষুদিরামের হিসেব বলছে যে এত বছরে এই নিয়ে এ'টা হল তিন নম্বর চিঠি পাওয়া সাতান্ন নম্বর হপ্তা। 

এ'চিঠি পড়ার আমেজটাই আলাদা৷ সাধারণ রুলটানা ফুলস্কেপ কাগজের ওপর সস্তা ডটপেনে লেখা চিঠিটা  মেলে ধরতেই বুকের মধ্যে ভালোবাসার তোলপাড় টের পেলেন শিবুবাবু৷ আজকেত চিঠিতে রয়েছে রুই মাছের ঢাকাইয়া কোপ্তার রেসিপি৷ আর কিচ্ছু না, স্রেফ রেসিপিটুকু; এ'টাই তিন নম্বর চিঠির নিয়ম৷ গিন্নীর হাতের রান্নায় ম্যাজিক রয়েছে, কোনও কবিতার ছন্দ বা গানের সুরের সঙ্গে তুলনা করা  সে গুণের বর্ণনা অসম্ভব৷ গিন্নীর নিজস্ব রেসিপি অজস্র অথচ তার এতই লজ্জা যে সে নিজে সে'সব কিছুতেই লিখবে না৷ অনেক চেষ্টার পর, অনেক ঝুলোঝুলি খুনসুটির পর গিন্নীকে নিমরাজি করানো গেছিল যে শিবুবাবুর জন্য মনখারাপ মাত্রা ছাড়ালে সে নিজের কোনও একটা নিজস্ব রেসিপি যত্ন করে লিখে তাকে পোস্ট করবে৷ রুই মাছের ঢাকাইয়া কোপ্তার রেসিপিটা ঝাড়া একুশবার পড়লেন শিবু চৌধুরি৷ প্রতিটা ধাপে ধাপে বাড়ির রান্নাঘর আর গিন্নীর গায়ের সুবাস নিজের নাকে আর বুকে টের পাচ্ছিলেন তিনি৷ এমনটাই প্রত্যেকবার হয়৷ দিনে হাজারবার মোবাইল ফোনে কথা হলেও, এ' উষ্ণতার সঙ্গে সেই হ্যাঁগো-ওগোর তুলনা চলে না৷ 

পড়া হয়ে গেলে বুকশেল্ফের পিছন দিকে রাখা সবুজ ফ্ল্যাটফাইলটা বের করে গিন্নীর সাতান্ন নম্বর রেসিপিটা যত্ন করে ফাইল করলেন তিনি৷ একশো এক হলেই এ ফাইল বগলদাবা করে মনু দত্তের অফিসে ছুটতে হবে৷ ভদ্রলোকের সঙ্গে কফিহাউসের আড্ডায় আলাপ, ভারী মাইডিয়ার মানুষ৷ পেশায় নতুনধারা প্রকাশনীর কর্ণধার। এর জন্যে কিছু টাকাও আলাদা করে ফিক্স করে রেখেছেন শিবুবাবু; মনু দত্ত নিজের টাকা খাটাতে না চাইলেও "সুতপার ১০১ ভালোবাসার রান্না" ছাপা হতেই হবে৷ হটকেকের মত বিক্রি যে হবে সে নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই, ভালোবাসার কদর মানুষকে যে করতেই হবে৷ বইটে ছাপা হলে গিন্নীকে বেশ জব্বর একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে, আর শাজাহানের তাজমহলকেও দিব্যি ছ'গোল দেওয়া যাবে৷ 

বাটারফ্লাই

ভদ্রলোক আমার হোমিওপ্যাথির চেম্বারে এসে বসতেই খটকা লেগেছিল৷ নাকের নীচে অমন বাটারফ্লাই গোঁফ এমনিতেই এ যুগে বেমানান৷ তার ওপর বিজ্ঞাপনে দেখা ঠিক অবিকল সেই সে'রকম মাথা জোড়া চকচকে টাক, গোলগাল চেহারা, থুতনিতে কাটা দাগ, মোটা কালো ফ্রেমের চশমা৷ ঠিক যেন থিয়েটারের স্টেজে উঠবেন বলে মেকআপ করে বসে আছেন, এমন চেহারা খবরের কাগজের আবছা ছবিতে একবার দেখেও ভুলে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই৷ এমন কী বিজ্ঞাপনের ছবিতে যে পোশাকে তাকে দেখা গেছে, এখনও তাই পরে রয়েছেন; চেক হাফ শার্ট আর ধুতি - ঠিক যেন পঞ্চাশের দশক থেকে কেউ টাইম মেশিনে উড়ে এ যুগে এসে পড়েছে। 

নিঃসন্দেহে এ ভদ্রলোক সেই ফেরব্বাজই৷ স্থানীয় পুলিশস্টেশন থেকে গত পরশুর আনন্দবাজারে এ লোকটির ছবিসহ বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছিল যে এই মহৎপ্রাণ নাকি বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন নামে নিজেকে পরিচয় দিয়ে লোকজনকে ঠকিয়ে চলেছেন,  একে দেখলেই যেন থানায় খবর দেওয়া হয়৷ সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো এখনও পর্যন্ত লোকটা কোনও চুরিছিনতাই করেছে বলে খবর নেই৷ তবে ব্যাপারটা অত্যন্ত ফিশি, কোনও বিদেশী গুপ্তচর হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই৷ 

হোমিপ্যাথি করে আজকাল ক'পয়সাই বা জোটে৷ মাস দুয়েক আগে তাই সেক্রেটারিটিকে বিদেয় দিতে হয়েছিল, তার মাস-মাইনে আমার পক্ষে চালানো বেশ মুস্কিল হচ্ছিল। রুগীর ভীড়ও তেমন হয়না আজকাল৷ কাজেই নামধাম লেখানোর দরকারও তেমন থাকেনা৷ দিনে দু'চারজন বড় জোর জোটে, সবাই পুরনো পেশেন্ট৷ কেউ কেউ তো ওষুধ ন্য, স্রেফ আড্ডা বা তাস খেলার লোভে এসে বসেন। তা, হঠাৎ এই ভদ্রলোক টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেই পিলে চমকে গেছিল, তবে নার্ভাসনেসটা চেপে রাখতে পেরেছিলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্ল্যান কষে নিয়েছিলাম,  ওষুধের পুরিয়া আনার বাহানায় পাশের ঘরে গিয়ে মোবাইল থেকে থানায় ফোন করব৷ কিন্তু ভদ্রলোক চেয়ার টেনে বসে প্রথমেই যে কথাটা বললেন তা'তে না ভেবড়ে উপায় ছিলনা৷ 

"আমায় চিনতে পারছিস না পিলু"?

বলে কী! ভাঁওতাবাজির ব্যাপারেও ফ্রন্টফুটে খেলছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখলাম। 

"আপনাকে তো আমি চিনি বলে মনে হচ্ছে না", গলা সাফ করে বললাম৷ 

" আমি অনি! অনিন্দ্য হালদার৷ জানি ব্যাপারটা গোলমেলে, কিন্তু ভাই...তুই বিশ্বাস না করলে যে আমায় জলে পড়তে হবে। বাড়িতে বৌ ছেলে পর্যন্ত..."। ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বরে একট অদ্ভুত ঠাণ্ডা সুর মেশানো রয়েছে যেন। কিন্তু মহাফেরব্বাজ ব্যাটা। অনিন্দ্য হালদার আমার ছেলেবেলার বন্ধু, ক্লাসমেট৷ ছ'ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা, টেনিস খেলা চাবুক চেহারা। ক্লিন শেভেন আর মাথায় দিব্যি ফুরফুরে চুল৷ হাইকোর্টের দাপুটে উকিল। এ ভদ্রলোক অনিন্দ্য হালদার হলে আমি রোনাল্ড রেগ্যান। 


দাঁত চেপে বললাম, "দেখুন আমি হোমিওপ্যাথি করি৷ আপনার যদি কোনও সমস্যা থাকে খুলে বলুন.."। ততক্ষণে আমি সে ঠগবাজের দিক থেকে চোখ না সরিয়েই মোবাইলে মেসেজ টাইপ করতে আরম্ভ করেছি। দারোগা সমাজপতি আবার আমার হোমিওপ্যাথির ভক্ত৷ ওর হাঁটুর ব্যথায় নাকি আমার পুরিয়া ম্যাজিকের মত কাজ দিয়েছে৷ থানাও আমার চেম্বার থেকে পাঁচশো মিটারের মধ্যেই রয়েছে। আমার এস-এম-এসে সে ছুটে আসবেই। তাছাড়া থানা থেকেই এর খোঁজ চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, কাজেই তাদেরও তাগিদ কম নয়। 

"তোর জায়গায় থাকলে আমিও অবিশ্বাস করতাম। কিন্তু পিলু, আমি বড়ই বিপদে পড়েছি৷ শোন, আমিই অনি৷ অনিন্দ্য! আমরা ছেলেবেলায় ইংলিশ স্যারের সিগারেটের বাক্স থেকে সিগারেট চুরি করেছি৷ তোর প্রেমের চিঠির বানান আমিই ঠিক করে দিয়েছি৷ তোর কাছ থেকে আমি প্রায়ই হজমের ওষুধ নিয়ে থাকি। সান্যালবাড়ির রোব্বারের ব্রিজের আড্ডার তুইই আমার পার্টনার"। প্রতিটা কথা ঠিক, অথচ এ ভদ্রলোক অবশ্যই অনিন্দ্য নয়৷ মহাগোলমেলে লোক৷ পেটে পেটে সাংঘাতিক কোনও মতলব ভাজছে নিশ্চয়ই৷ 

সে তখনও বলে চলেছে, "শোন পিলু, ঠিক এ'রকম চেহারার একজনই আমার সঙ্গেও দেখা করতে এসেছিল গতকাল বিকেলে৷ সে তার পরিচয় দিলে অমিয় বলে। আমিও উড়িয়ে দিয়েছিলাম, ইনফ্যাক্ট ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিই। অথচ..", ভদ্রলোক ফস করে আমার হাত টেনে ধরলেন আকুতি নিয়ে। অমিয় আমার আর অনিন্দ্যর আর এক ক্লাসমেট, এখন প্রমোটারি করে৷ হাজরায় অফিস খুলে জাঁকিয়ে বসেছে৷ কিন্তু তার চেহারাও পেটানো, এ গোলগাল বাটারফ্লাই গোঁফওলার সঙ্গে কোনও মিলই নেই৷ এ'সব বাজে কথা বরদাস্ত করা যায়না৷ 

" আপনি যেই হোন না কেন৷ অনিন্দ্য নন", বলতে বাধ্য হলাম, "আর মিনিট দশেক অপেক্ষা করুন। দারোগাবাবু এসে পড়লেন বলে। তখনই একটা ফয়সালা হবে'খন"। থানাপুলিশের উল্লেখ শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সে ভদ্রলোক পত্রপাঠ বিদায় নিলেন৷ আমি অবশ্য তাকে আটকানোর চেষ্টাও করলাম না, হুস করে পকেট থেকে রিভলভার বা ছুরি বের করলেই গেরো৷ সমাজপতি দারোগা এলে বরং আশপাশে খানাতল্লাশি করে দেখবে'খন৷ 

কিন্তু সমাজপতি আসার পর যে খতরনাক ব্যাপারটা ঘটল সে'টা আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি৷ সমাজপতি আমায় খুব রগড়ালেন ঝাড়া আধঘণ্টা, " বল্ রাস্কেল! পল্লব ডাক্তারকে তুই কোথায় গুম করে রেখেছিস? বল্"।

যত বলি আমিই পল্লব ডাক্তার, সমাজপতি কিছুতেই সে কথা বুঝতে চায় না৷ আমার নাকের নীচে বাটারফ্লাই গোঁফ যে আচমকা উদয় হয়েছে সে'টা বেশ টের পাচ্ছিলাম, মাথার নতুন গজানো টাকেও ফ্যানের হাওয়া লেগে কেমন শিরশির করছিল। পরনের ফতুয়া আর পাজামা পালটে যে হাফশার্ট আর ধুতি হয়ে গেছে সে'টাও দিব্যি বুঝতে পাচ্ছিলাম।  বুঝলাম এ নিয়ে বাক্যব্যয় করে লাভ নেই৷ সারেন্ডার করলাম৷ 

ইন্সপেক্টর সমাজপতি আমায় প্রায় টেনেহিঁচড়ে নিজের জীপের কাছে নিয়ে গেলেন, তাঁর মুখে তখনও একই বুলি, "পল্লব ডাক্তারের যদি কোনও ক্ষতি হয়...জানবি তোর একটা হাড়ও আস্ত থাকবে না"। 

জীপের স্টিয়ারিং ধরে বসেছিল সমাজপতির চ্যালা হাবিলদার সুখদেও প্রসাদ৷ সুখদেও আমাদের দু'জনকে দেখে একটা বেদম বিষম খেলো। তারপর "জুড়ওয়া ক্রিমিনাল জুড়ওয়া ক্রিমিনাল" বলে দু'চারবার বিশ্রী হাঁক পেড়ে জীপ থেকে লাফিয়ে নেমে হাওয়া হয়ে গেল।