- এই যে। হুলোদা, বড্ড লেগেছে নাকি গো?
- শুয়ার৷
- আহ্৷ চটছ কেন৷ চটছ কেন৷
- দু'দুটো গুলি লেগেছে রে হারামজাদা।
- বাহ্ রে৷ গুলি যেন একা আমি চালিয়েছি? তুমি বুঝি আমার দিকে তাক করে ফুচকা ছুঁড়েছিলে? মাস্তানদের এ'দল ও'দলের মধ্যে এমন একটু ইন্টুপিন্টু না হলে কি চলে বলো হুলোদা? তবে দু'টো গুলির একটা তো তোমার দাবনায়৷ অন্যটা পেট ঘেঁষে বেরিয়েছে৷ চিন্তা নেই গো।
- দাঁত ক্যালাচ্ছিস কেন রে গুল্টে? হুলো গুণ্ডা ঘায়েল হয়ে পড়ে রয়েছে, মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছে..সে'টা দেখে খুব ফুর্তি! তিলে তিলে কষ্ট না দিয়ে শেষ না করলে পয়সা উসুল হবে না, তাই না?
- মাইরি বলছি হুলোদা৷ তুমি অন্য দলের হোঁতা হতে পারো, কিন্তু তোমায় দিনে একবার মনে মনে সেলাম না ঠুকলে আমার চলেনা৷ কী নিশানা তোমার হাতের পিস্তলে গুরু৷ আর কী র্যালা তোমার! বাজারে সবাই হুলো মাস্তানের নাম শুনলেই বমকে যায়৷
- আমার বডিতে গুলি ঠুসে দিয়ে এখন বলছিস আমায় সেলাম না ঠুকলে চলে না?
- আরে গুলি ঠোকাটা লাইনের কাজ৷ ব্যবসা। সেলামটা তো বুকভরা ভালোবাসা৷
- বাজে ভাট না বকে দে'না দু'টো গুলি আমার খুলিতে পুরে৷ বেঁচে যাই৷ বড্ড যন্ত্রণা রে৷ দে না আর দু'টো ঠুকে রে ভাই গুল্টে৷
- তোমায় ছ'মাস ধরে ফলো করছি জানো হুলোদা৷ তোমার লাশ ফেললে আড়াই লাখ পাওয়ার কথা৷ আড়াই লাখ গুরু৷ ক'দিনের নিশ্চিন্দি৷ তবে তুমি মাইরি গভীর জলের মাছ, তোমায় বাগে আনা যে কী চাপের৷ আমি বেশ বুঝেছি।
- আমি জানি তুই পিছনে লেগেছিলিস৷ তক্কে তক্কে ছিলাম তোকে উড়িয়ে দেওয়ার৷ কিন্তু আজ সুযোগ পেয়েও গুলিটা কী'ভাবে যে ফস্কে গেল..৷ যাক শালা, এ লাইনের এ'ছাড়া আর কী হবে৷ ভ্যানতারা না করে শেষ করে দে গুলটে৷
- আচ্ছা হুলোদা, তোমার ছেলের নাম বাপ্টু, তাই না?
- গুলটে! লাইনের লড়াই, লাইনেই রাখ৷ আমার লাশের সঙ্গে হিসেবকিতেব খতম। বাপটু একটা ছ'বছরের শিশু৷ ওর ক্ষতি করিস না গুলটে৷ তোর পায়ে পড়ি ভাই..।
- ও মা৷ না না৷ কী ফুলের মত মিষ্টি তোমার ছেলে হুলোদা৷ ও স্কুলের গেট থেকে বেরিয়েই তোমার দিকে ছুটে আসে৷ আমি আড়াল থেকে দেখি৷ তুমি ওর গালে সাপটে ইহামি খাও৷ আহ হুলোদা, বুক জুড়িয়ে যায় মাইরি৷ মা কালীর দিব্যি৷
- গুলটে৷ ভাই৷ তোর গায়ে মানুষের রক্ত থাকলে তুই বাপটুর ক্ষতি করবি না৷ শোন না ভাই, আমার বাড়ির মেঝের নীচে চার লাখ টাকা সমেত ব্রিফকেস আছে৷ তুই ওটাও নিয়ে নিস৷ আমার লাশ কুচিকুচি করে কুত্তাদের খাওয়াস৷ কিন্তু আমার ছেলেটার ক্ষতি করিস না, গুলটে আমি তোর পায়ে পড়ি৷
- না গুরু না৷ আমি মাস্তান৷ গুণ্ডা৷ হারামিও৷ কিন্ত, তুমি যা ভাবছ আমি তা নই হুলোদা৷ মা কসম৷ শোনো, আমি তোমার লাশ ফেলতে আসিনি৷ কাছের হাসপাতালে খবর দিয়েছি, এই দু'চার কদমের মধ্যেই আছে৷ লোকজন আসছে তোমায় নিয়ে যেতে৷ বাপটু বাপকে হারাবে, মন মানছিল না হুলোদা৷
- গুল্টে!
- মা কসম৷ ওই দেখো, বললাম না৷ ওই যে, অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ আসছে৷ লোকেশন বুঝিয়ে দেওয়া আছে৷ তোমার কাছে এলো বলে৷ তোমার কিছু হবে না হুলোদা৷ দেখে নিও। বাপ্টুর বাপের কিছু হবে না। আমি আসি।
- তুই যাচ্ছিস? তুই সত্যিই আমায় খতম করবি না ভাই?
- বাপটুর বাপের জান কোন মায়ের ব্যাটা হাতড়ে নেবে বলো৷ তুমি না থাকলে ওকে হামি কে খাবে গুরু? যাক গে, আসি আমি।
- শোন গুল্টে, ক'দিন পর দেখা করিস, লুকিয়ে৷ তোর আড়াই লাখের ক্ষতি হবে না৷ কেমন?
- হুলোদা৷ আর দেখা তো হবে না৷
- দেখা হবে না?
- তোমার বন্দুকের নিশানাকে কি এমনি এমনি সেলাম ঠুকি গুরু? আমি পাঁচটা গুলি ছুঁড়লাম৷ তিনটে নষ্ট, একটা বেজায়গায়, অন্যটা ছুঁয়ে হাওয়া৷ কিন্তু হুলোদা, তুমি যে ওই একটামাত্র ফায়্যার করলে, সে'টা ফস্কেছে ভেবেছ? না গুরু৷ সোজা আমার দু'চোখের মধ্যিখানে৷ ওই ও'দিকে ভালো করে দেখো, আমার লাশ দেখতে পাবে৷ দেখতে পাচ্ছ গুরু? ওই যে, দেখতে পেয়েছ তো! যাক!
- গু..গুল্টে।
- আমার ছেলের বয়স সাড়ে পাঁচ৷ ডাকনাম পিকলু৷ হুলোদা! এক্কেবারে চলে যাওয়ার আগে তোমার কাছে এলাম একটা আবদার নিয়ে দাদা৷ তুমি সুস্থ হয়ে উঠলে, ওই যে আড়াই লাখ টাকার কথা বললে, সে'টা পিকলুর মায়ের কাছে পৌঁছে দেবে? দিলে মা-ব্যাটার ক'টা দিনের জন্য একটা হিল্লে হবে৷ দেবে তো? আমি জানি তুমি দেবে৷ তুমি নিজে বাপ হয়ে এ'টুকু না করে থাকতে পারবে না৷ আসি গুরু, বাপটুকে আমার হয়ে একটা এক্সট্রা হামি খেও পরের বার৷