- এই যে গুরুদেব।
- কী ব্যাপার চ্যালা..। মনটন খারাপ নাকি?
- আরে সাংঘাতিক মনখারাপ গুরু।
- ও'টা বোধ হয় থার্ড পেগের এফেক্ট।
- নেশার ঝিমঝিম যে লেগেছে সে'টা ডিনাই করছি না, তবে এ মনখারাপ মাতলামোর নয় গো।
- নতুন করে প্রেমেট্রেমে পড়োনি তো? মাঝবয়সে এসে অমন ছুকছুক একটু হতেই পারে।
- আরে না না। এ বয়সে নতুন করে প্রেমের চেয়ে ওই গৃহপালিত এক্সারসাইজগুলোই বেশি এন্টারটেনিং। এনগেজিং। এই যেমন ধরো গিন্নী লুচি বেলে চলেছে আর প্যারালালি আমি ভেজে চলেছি। পার্ফেক্ট রিদমে। সব ক'টা লুচি নিখুঁত, কোনও এ'দিক ও'দিক নেই। ওই নতুন প্রেমের 'ওগো-হ্যাঁগো-তোমায় ছাড়া দুনিয়া ব্ল্যাকহোল-গো'..ও'সব আর এই বয়সে সইবে কেন বলো গুরু।
- তা'হলে চ্যালা, হোয়াই দ্য মনখারাপ?
- জীবনের ট্র্যাজেডিটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে গুরু। সে জন্যেই হাহাকার।
- কী'রকম?
- এই ধরো পুজো আসছে। ছেলেবেলার এক্সাইটমেন্টটা ট্রিগার করতে চাইছি কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না। ভাবছি এন্তার খাওয়াদাওয়া করব। বিরিয়ানিতে সাঁতার কাটব, চপ-কাটলেটে ভেসে যাব। ভেবে যেমন আনন্দ হচ্ছে, তেমনি বুক শুকিয়ে যাচ্ছে রিয়েলিটির কথা ভেবে৷ আজকাল সল্টেড বাদাম চিবুলেও বুকজ্বালা। কোথায় বিরিয়ানি, কীসের কাটলেট। সেই ট্যালট্যালে চিকেন স্ট্যুতেই স্বস্তি। বড় জোর ট্যাংরামাছের পাতলা ঝোল। তারপর ধরো প্যান্ডেল প্যান্ডেল ঘুরে রাতকাবার করাটা একসময় মনে হত ঘ্যাম। এখন ভীড় ভাবলেই বুক কেঁপে উঠছে। পুজোসংখ্যা ডাইজেস্ট করতে না পেরে ক্যালভিন আর হবসের স্ট্রিপ পড়ে সময় কাটাচ্ছি৷ আচ্ছা গুরু, সবই কি ক্লিশে? এ'সব কি আর কোনওদিনই জেনুইনলি উপভোগ করতে পারব না? আর, দ্য বিগার ফিয়ার। ইরিট্রিভেবলি বুড়িয়ে গেলাম নাকি? গুরু?
- ক্লিশে উড়িয়ে দেবে বিদগ্ধ মানুষজন। তোমার আমার সে দায় নেই হে চ্যালা। চেনা পরিচিত ভালোলাগাগুলোকে জড়িয়ে ধরব, বুক বাজিয়ে ডিফেন্ড করব। মনের সুখে সে'সব ক্লিশেকে আগলে রাখব। অত ভেবে অফিসের স্প্রেডশিট সাজিও, বৃষ্টি নামলে বেগুনী অন্বেষণ করাতেই আমাদের মুক্তি।
- তবে 'পুজো আসছে পুজো আসছে' করে লাফিয়ে উঠতে পারছি না কেন? কেউ কানের কাছে পুজো-পুজো ঘ্যানঘ্যান করলেই কান মুলে দিতে ইচ্ছে করছে কেন?
- সে'টা ক্লিশে ডিমোলিশন নয়। বরং ইয়ার্নিং ফর ইট।
- গুরু, উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিতে ঠেকেছিলাম। বাংলায় বলো।
- ছেলেবেলায় পুজোটা তুমি মামাবাড়ি কাটাতে, তাই না?
- প্রতি বছর। উইদাউট ফেল। আহা। গুরু, সে কথা মনে পড়ায় 'পেটে মদ, বুকে হুহু, চোখ জল' সিচুয়েশন হয়ে গেল। আর দাদু। আর দিদা। আর মামাবাড়ির পাড়ার সে আটপৌরে পুজো। আর সে মানুষগুলো। আর সে পাত পেড়ে খিচুড়ি খাওয়া। আর দাদু। আর দিদা। আর সে অষ্টমীর সন্ধ্যের থিয়েটার। আর নবমীর জলসা। আর ইয়ে, দশমীর সিদ্ধি। আর দাদু। আর দিদা।
- ওয়াটার ওয়াটার এভ্রিহোয়্যার নট আ ড্রপ টু ড্রিঙ্ক। চারদিকে পুজো পুজো ভাব চ্যালা, অথচ তুমি তোমার পুজোয় ফিরতে পারছ না।
- দাদু দিদা সে পুজো বগলদাবা করে হাওয়া।
- একটা কথা বলি চ্যালা?
- নিশ্চয়ই গুরু।
- তোমার দাদু দিদা তোমার ভালোবাসার পুজোর স্মৃতি তৈরি করে গেছেন, যে স্মৃতি নেড়েচেড়ে আজও তুমি চাঙ্গা হয়ে ওঠো। তাই না? তেমনই, নিজের বুড়োটেপনায় আটকে না থেকে, অন্য কচিকাঁচাদের হয়ে ভালোবাসার পুজো তৈরির দায়ও তো তোমার ওপর খানিকটা বর্তায়, তাই নয় কি?
- দায়? আছে, তাই না?
- আলবাত। আর সে'টা দায়ভার নয়। আমার ধারণা সে'টাও বেশ তৃপ্তির।
- গুরু, পুজো সত্যিই চলে এলো৷ তাই না?
- একদম! একদম!
No comments:
Post a Comment