Saturday, November 6, 2021

লেনিনের মাদুলি



- আচ্ছা শ্যামলদা, আফগানিস্তান নিউজিল্যান্ড ম্যাচটার ব্যাপারে আপনার গ্রহ-নক্ষত্র কী বলছে?

- সে কী হে লেনিনকুমার! শেষে আমার জ্যোতিষবিদ্যের ওপর রিলাই করতে হচ্ছে?

- বাজে কথা বলবেন না৷ জাস্ট চেক করছি আপনার হিসেবটিসেব কোনদিকে ফ্লো করছে৷ আফগানিস্তান একটা মিরাকল কিছু করতে পারবে কিনা..।

- বেস্পতিটার ট্র‍্যাজেক্টরি চিন্তায় রেখেছে ব্রাদার৷

- অবভিয়াসলি ও'সব গাঁজাখুরিতে আমার বিশ্বাস নেই৷ ফলাফল যা হবে সে'টা খেলার মাঠেই হবে৷ স্কিল দিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে৷ নিউজিল্যান্ড জিতবে, সে'টাই তো স্বাভাবিক৷ আপনি কি ভেবেছেন, আমি আপনার বৃহস্পতির মুভমেন্টের ভরসায় ম্যাচ দেখব?

- মিরাকল ছাড়া গতি নেই হে লেনিনকুমার৷ 

- মিরাকলই তো! নবি রাশিদকে এনক্যাশ করে উইলিয়ামসনদের ঠেকানো? আকাশের চাঁদ আঁকশি দিয়ে নামাতে চাওয়ার মত ব্যাপার। 

- তা বটে৷ তাই বলছিলাম৷ বেস্পতির কলারটা যদি টেনে ধরা যেত..।

- যত্তসব ডার্কএজের ব্যাপারস্যাপার..ইউ শুড বি অ্যাশেমড অফ ইওরসেল্ফ শ্যামলদা।

- একটা ছোটখাটো যজ্ঞ বুঝলে ভাই লেনিন৷ শ'পাঁচেক টাকার মত খরচ৷ মাত্র। 

- তার চেয়ে টাকাটা জলে ভাসিয়ে দিলেই হয়৷

- আর তারপর একটা মাদুলি ধারণ করে ম্যাচটা দেখতে হবে৷ তার জন্য দরকার আরও ওই শ'তিনেক৷  

- আউটরেজাস কথাবার্তা৷ ছিঃ শ্যামলদা৷ 

- তবে তুমি মার্ক্স কোট করা মানুষ ভায়া। মাদুলি বাঁধলে জাত যেতে পারে৷ আমি বরং ও মাদুলি মায়ের পায়ের জবা ছুঁইয়ে এক্সট্রা পাওয়ারফুল করে নেব'খন৷ সে মাদুলি না পরে স্রেফ পকেটে রেখে খেলা দেখলেই বেস্পতিকে কন্ট্রোল করতে পারবে৷ 

- নাহ্৷ এ'সব গুল সহ্য করা যায় না৷ আমি চললাম৷ মাদুলি নয়৷ আমার ভরসা কোহলিতেই৷ 

- বেশ বেশ৷ তা এসো'খন৷ তবে ইয়ে লেনিনভায়া, আমার পেটিএমে হুট করে আটশো টাকা ট্রান্সফার করতে গেলে কেন?

- ও কিছু নয়৷ আপনি গুরুজন৷ বিজয়ার প্রণামী অফার করলাম৷ 

- থ্যাঙ্কিউ ভায়া৷ থ্যাঙ্কিউ৷ 

- শ্যামলদা, একটা মিরাকেল যদি ঘটানো যায়..।

- মাদুলিটা পৌঁছে দেব, তুমি শুধু তিনবার গায়ত্রী মন্ত্রটা জপে নিয়ে পকেটে রেখে ম্যাচ দেখতে বসো'খন৷ আরে মার্ক্সকাকা কিছু মনে করবেন না৷ বেস্পতিকে একটু টাইট দিতে পারলেই..।

- বেশি কথা আবার কেন৷ আসি আমি।

- সেই ভালো লেনিনভায়া৷ এ'বার এসো৷ আমি ব্যবস্থা করছি৷

Tuesday, November 2, 2021

মৃণাল সামন্তের ছক



মন্ত্রী অমল ব্যানার্জীর সেক্রেটারি মৃণাল সামন্ত শশব্যস্ত হয়ে নিজের অফিসের লাগোয়া বারান্দায় পায়চারি করছিলেন৷ মন্ত্রী মশাই একটা মোক্ষম গোল পাকিয়েছেন৷ অবিশ্যি উঁচু দরের মানুষরা গোলমাল পাকাবেন বলেই মাইনে দিয়ে সেক্রেটারি রাখেন৷ সে'দিক থেকে ভেবে দেখলে মন্ত্রীদের অল্পবিস্তর গোলমাল পাকাতে না দিলে সেক্রেটারীর চাকরী রাখা মুশকিল৷ কিন্তু এ'বারের সমস্যাটা একটু উদ্ভট৷

এক বিটকেল শখের পাল্লায় পড়ে একটা এয়ারগান কিনেছিলেন অমলবাবু৷ সে এয়ারগান তিনি ব্যবহার করেন না, তবে রোজ সকালে সে'টা হাতে নিয়ে ইজিচেয়ারে আধঘণ্টা বসে মেডিটেট করেন৷ আজ সকালে, সামনের মাসের ইলকেশনের কথা ভাবতে ভাবতে আচমকা এয়ারগানের ট্রিগারে আঙুল পড়ে যায়৷ তা'তে বিশেষ ক্ষতি হয়নি, শুধু কাছেপিঠে উড়ে বেড়ানো একটা কাক খামোখা মারা যায়৷ এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল৷ পশুপ্রেমীদের থেকে সামান্য হুজ্জুত আশা করেছিলেন সেক্রেটারি সামন্ত৷ ও'সব 'ইস্যু' চেপে দিতে তিনি সিদ্ধহস্ত৷ আর সামান্য যে'টুকু নেগেটিভ পাবলিসিটি হবে, পলিটিক্সে সে'টা বেশ উপকারি৷

কিন্তু সমস্যাটা দাঁড়ালো অন্য জায়গায়৷ মন্ত্রীর ব্যালকনি থেকে এয়ারগান ছোঁড়া হল, সে গুলি হজম করে একটা সে কাক ঢ্যাপাৎ করে ব্যালকনির সামনের রাস্তায় পড়ে গেল; অথচ সে'টা কোনও গসিপবাজ রিপোর্টারের চোখে পড়ল না? সামনেই ইলেকশন, এ'দিকে একটা কাক নিকেশ করেও কোনও কাগজের পাঁচ নম্বর পাতার হেডলাইনেও আসতে পারলেন না মন্ত্রীবাবু? রামোহ্! অথচ এইত্তো, এই সে'দিনই অপোজিশনের সমীর সমাজপতি সাবুর খিচুড়ি খেয়ে তিন মিনিটে চারটে ঢেঁকুর তুলেছিলেন বলে অন্তত পাঁচজন রিপোর্টার ফলাও করে 'স্টোরি' করেছিল৷ মিডিয়া ফোকাসের বাইরে চলে যাওয়া হল পলিটিকাল প্লেগ৷ আরে বাবা কাজকর্ম করবে আমলারা, নেতা বাতেলা-বক্তৃতা ছেড়ে কাজ-কাজ করে কীর্তন শুরু করলেই সমূহ বিপদ৷ আর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা অন্য জায়গায়; সামনের ইলেকশনে সমাজপতির ব্যাটা জিতলে সেক্রেটারি সামন্তর আন্ডার দ্য টেবিল টু পাইস আসাটাও বন্ধ হয়ে যাবে৷

নাহ্৷ কাকহত্যাটা এত সহজে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলে চলবে না৷ একটা খতরনাক আইডিয়া ভেবে না বের করলেই নয়৷

**

- অমলবাবু, নিউজ আঠারো ঘা-তে আপনাকে স্বাগত জানাই৷ আচ্ছা স্যার, আপনি কোনওদিন ভেবেছিলেন যে একজন মন্ত্রীর পদ থেকে হুট করে আপনি সোজা চীফমিনিস্টারের চেয়ার হাঁকিয়ে বসবেন?

- দেখুন, রিপোর্টাদের আমি ফ্র্যাঙ্ক ওপিনিওন দিতেই পছন্দ করি৷ কাজেই আপনাকে বলি, কয়েক মাস আগেও এ'টা ভাবনি৷ তাছাড়া, মানুষের হয়ে কাজ করে যাওয়াটাই আমার একমাত্র ফোকাস৷ চেয়ারটেয়ার নিয়ে ভাবিনা৷ তবে আজ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে বেশ ভালোই লাগছে৷ আর এই দায়িত্বের গুরুভারটাও সামাল দিতে হবে৷ তাই না?

- ভোটের মাসখানেক আগে, সেই বিদেশী উগ্রপন্থীদের পাঠানো ড্রোনটাকে নিজের হাতে গুলি করে নামানোটাই কিন্তু টার্নিং পয়েন্ট ছিল, তাই না?

- আমি তো নিমিত্ত মাত্র৷ ওপরওলা দেশের এবং দশের দায়িত্ব এ অধমের কাঁধে চাপিয়ে পাঠিয়েছেন৷ যতটুকু ক্ষমতায় কুলোয়, করার চেষ্টা করি৷ আর ওই ড্রোন ইন্টারসেপ্ট করার দিনটা আজও স্পষ্ট মনে আছে৷ ব্যালকনিতে বসেই সেই কাকটাকে আমি স্পট করি৷ খানিকক্ষণ অবজার্ভ করতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যে' ও'টার মুভমেন্ট আর পাঁচটা কাকের মত নয়৷ বেশ যান্ত্রিক একটা ব্যাপার রয়েছে, ঠিক যেন কেউ রিমোটে কন্ট্রোল করছে সে'টাকে৷ নিজের এক্সপিরিয়েন্স থেকে বুঝতে পারলাম, যে' ও'টা কাক নয়, ড্রোন৷ আর ডেফিনিটলি কোনও বদ উদ্দেশ্য নিয়ে আসা ড্রোন৷ তখন কি আর পুলিশকে কনটাক্ট করার সময় ছিল?

- ছিল না, তাই না?

- আলবাত সময় ছিল না৷ অগত্যা এয়ারগানটা হাতে নিয়ে নিজেকেই একটা চেষ্টা করতে হল৷ অবশ্য, একটার বেশি ফায়্যার করতে হয়নি৷ ছেলেবেলায় আমার গুলতির টিপও মার্ভেলাস ছিল যে৷

- গোটা শহরের মানুষ আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে৷ অমন খুনে একটা টেররিস্ট আউটফিটের পাঠানো ড্রোন৷ উফ, আপনি যদি সে'টাকে না নামাতেন..। ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়!

- সবই ওপরওলার কৃপা মশাই৷ হু অ্যাম আই? মিস্টার নো-বডি। আমি তো নগন্য একজন৷ অতি পাতি! মানুষের ভালোবাসায় আজ চীফ মিনিস্টার হয়েছি, তারা জোরজার করলে কাল প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিতে হতে পারে। জনতাজনার্দনের সেবা করতে পারছি, সে'টাই বড় কথা৷। তাই না?

বাঁধিবি



- বাড়ি ফিরছ ভায়া?

- নাহ্!

- সে কী! পুজোয় বাড়ি ফিরবে না?

- নাহ্৷

- ছুটি পাওনি?

- নাহ্!

- যাহ্! কেন, সেই জরুরী রিভিউ মিটিং এড়ানো গেলো না বুঝি?

- নাহ্!

- কোনও ভাবেই না?

- নাহ্!

- ওহ্। তা, মন খুব খারাপ ভায়া?

- ওই৷ সামান্য। অতি অল্প৷ তবে এ বাজারে মাসের শেষে স্যালারি পাচ্ছি, পাতে চাট্টি ভাত পড়ছে। সে'টা তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷

- সেই৷ নুনের দায়৷ বাঁধা তো পড়তেই হবে৷

- আমায় বেঁধেছে বটে৷ ফিজিক্যালি৷ অফিসে রোজ কার্ড পাঞ্চ করার সময় পাড়ার পুজো প্যান্ডেলের কথা ভাবব৷ পাওয়ার পয়েন্টে কাজ করার সময় পুজো কমিটির হয়ে চাঁদার বিল কাটার কথা ভাবব৷ এক্সেলে হিসেব কষার সময় হাটারির মেনু কার্ডের কথা ভাবব৷ রিভিউয়ের সময় পাড়ার ইয়ারদোস্তের ঘুগনি সহযোগে সঙ্গে খেজুরে আড্ডা দেওয়ার কথা ভাবব৷ আমায় বাঁধছে বাঁধুক৷ কুছ পরোয়া নহি৷ মন ফুড়ুৎ হবেই৷ মাইরি৷ প্রতিটা 'ইয়েস স্যার'য়ে চাপা ঢ্যাংকুরাকুর মিশিয়ে দেবই৷ দেখে নেবেন।

- আলগা গিঁট? তা'তে শেষ পর্যন্ত বাঁধা পড়বে না বলছ?

- নাহ্! কভি নহি৷ নেভার!

অ্যাপোক্যালিপ্স

- এই যে স্যার৷ জ্ঞান ফিরেছে তা'হলে৷ চারদিকে তাকিয়ে দেখুন৷ এই বজরাই হচ্ছে এখন আপনার আস্তানা৷
- বাহ্৷ আপনার এই বজরাটা দিব্যি তো৷
- স্টেট অফ দ্য আর্ট মশাই৷ স্টেট অফ দি আর্ট৷
- বেশ৷ একটু জিরিয়ে নিই৷
- হ্যাঁ। বেশ তো৷ এ'খানে তো আপনার অখণ্ড অবসর৷ সামান্য ব্র্যান্ডি দিই? নাকি চা করে আনব? শুধু ব্ল্যাক টী পাবেন কিন্তু৷
- আপনি কিডন্যাপার৷ আপনি যখন বলছেন, তখন অখণ্ড অবসরই সই৷ যা দেবেন খেতে, তাই রুচবে৷
- অমন খিটখিটে মেজাজে কথা বলবেন না প্লীজ৷ বড় আশা করে আপনাকে নিয়ে এসেছি৷
- তুলে এনেছেন বলুন।
- এহ হে, কিডন্যাপিংয়ের ব্যাপারটা নিয়ে আপনি বেশ ইরিটেটেড বোধ করছেন৷ তাই নয় কি স্যর?
- ইরিটেটেড হওয়া উচিৎ নয়, তাই না? না হয় একটু ক্লোরোফর্ম শুঁকিয়ে চ্যাংদোলা করে তুলে এনেছেন৷ এ আর এমন কী৷
- শুনুন স্যার৷ অমন চ্যাটাংচ্যাটাং কথা বেশি বলবেন না৷ আমি আপনাকে প্রাণে বাঁচিয়েছি৷
- কিডন্যাপ করে?এই বিচ্ছিরি একটা স্টীমারে এনে আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন?
- এক্সকিউজ মি! এ'টা স্টীমার? চারদিকে চেয়ে দেখুন মশাই৷ এ'টা বজরা৷
- তা আমার প্রাণরক্ষা কী'ভাবে করেছেন?


- যে'ভাবে করার কথা ছিল৷ প্রলয় শুরু হয়ে গেছে৷ অর্ধেক পৃথিবী অলরেডি জলের তলে৷ কলকাতা ভেসে গেছে আজ ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ। এক্কেবারে যাকে বলে ডিলিউজড৷ বাকি দুনিয়াটা ডুবে যাবে আগামীকাল দুপুরের মধ্যে৷ সে জলও অবিশ্যি বিষিয়ে যাবে৷ টোটাল ডেস্ট্রাকশন। ধুয়েমুছে সাফ।
- অ্যাপোক্যালিপ্স?
- ইয়েস স্যার৷
- কিডন্যাপার৷ গুল শিরোমণি৷ আপনার বায়োডেটাটা বেশ ইম্প্রেসিভ কিন্তু৷
- উড়িয়ে দিতে পারেন৷ তবে অল্প সময়ের মধ্যেই মালুম হবে, আমি ভুল বলছি না৷
- আপনি নোয়া?
- নোয়া নয়৷ নোয়া ট্যু পয়েন্ট ও৷
- এ'টা আপনার আর্ক ট্যু পয়েন্ট ও?
- আরে মশাই এ তো আর বিফোর ক্রাইস্ট নয়৷ এ'টাও আর্ক নয়, শৌখিন বজরা৷ বললাম তো৷
- গা জ্বলে যাচ্ছে৷
- অবিশ্বাস কেটে গেলে স্বস্তি পাবেন। পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে স্যার৷ আমরাই শুধু রইনু বাকি৷
- তা, ইয়ে৷ আমার এনেছেন কী মতলবে? আপনিও পুরুষ৷ আমিও তাই। যদি পৃথিবীকে রিপপুলেট করতেই হয়, তা'হলে তো আমরা সাফিশিয়েন্ট নই৷ তাছাড়া জন্তুজানোয়ার আর গাছপালার স্যাম্পেলগুলো কই?
- আরে ধুর ধুর৷ আমার বয়ে গেছে এ'সব জঞ্জাল আবার রিক্রিয়েট করতে৷ সব বিষিয়ে গেছে স্যার। সব। এবার সব কিছু ধুয়েমুছে সাফসুতরো হয়ে গেলেই মঙ্গল৷
- তা ভাই, আমিও তো সেই বিষাক্ত পৃথিবীরই একজন। আমিও ভেসে গেলেই ভালো হত না?
- না স্যার৷ না৷ শেষ আলোটুকু আপনার সুরেই ছিল৷ তাই আপনাকে নিয়ে আসা৷ এ বজরায় কয়েক মাসের খাবার মজুদ করা আছে৷ আপনার গিটার, মাউথঅর্গান আর কীবোর্ডটাও আনিয়ে রেখেছি৷ আর রিপপুলেট করার গবেটামো নয়৷ এ'বারে শুধু আপনার গানে গানে ভেসে গিয়ে ফুরিয়ে যাওয়া৷ ব্যাস৷ হিসেব খতম৷ দুনিয়াদারীর হাড়বজ্জাতি আর সহ্য হয় না৷
- আমরা সত্যিই কোথায় আছি বলবেন?
- আমি মিথ্যে বলছি না সুমনবাবু৷ অনন্ত সাগরে আর নিরেট অন্ধকারে; আমরাই শেষ দুই প্রাণবিন্দু৷ আপনার গানই শেষ আলো৷ সে আলো নেভার পর সমস্ত শেষ৷
- ভাই নোয়া..।
- আর গাঁইগুঁই নয় সুমনবাবু৷ ওই যে আপনার গীটার৷ এই নিন, ধরুন। এ'বার একটা গান হোক দেখি৷ আমার আর আপনার কিন্তু সত্যিই আর কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই।

Monday, November 1, 2021

পিলুর দাদা



- কী রে পিলু৷ ঘুমোসনি?

- নাহ্ রে দাদা৷ ঘুমটা ঠিক..ঠিক জুতসই ভাবে আসছে না।

- ঘাপটি মেরে পড়ে থেকে কী হবে বল৷ বরং উঠে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে বই পড়৷ তাক ভর্তি তো না পড়া বই৷

- সত্যিই৷ কত যে না পড়া আর আধপড়া বই। তবে কাল অফিস তো, তাই বেশি দেরী করে ঘুমোলে..।

- শুয়ে থেকেও ঘুমোতে পারছিস কি আদৌ? বরং খামোখা আরও টেন্স হয়ে পড়ছিস। একটু অন্যদিকে মন দিলে ঘুমটা আসবে বরং। বই না পড়িস, গান শোন। নিদেন পক্ষে পায়চারি কর খানিকক্ষণ৷ 

- নাহ্, গান বা হাঁটাহাঁটির চেয়ে বরং বইই ভালো৷ একটা চমৎকার বই পড়ছি, জানিস দাদা৷ শেষের দিকে আছি৷ 

- কোন বই রে পিলু?

- টারা ওয়েস্টওভারের আত্মজীবনী,  এডুকেটেড৷ বেশ ইন্সপ্যায়ারিং৷ আর কয়েক পাতাই বাকি আছে৷ সে'টাই বরং শেষ করি গিয়ে৷ 

- সেই ভালো৷ ঘুম নিয়ে যত টেন্স হবি, ঘুম তত কাঁচকলা দেখিয়ে দূরে সরবে৷ তার চেয়ে এই ভালো।

- নাহ্। বিছানায় শুয়ে ছটফট করার চেয়ে এই ভালো৷ 

- তবে! বললাম তো৷ 

- তা হ্যাঁ রে দাদা, তুই এই অসময়ে এ'খানে যে?

- ভেবে দেখ দেখি৷ আমি কেন এসেছি। 

- এক মিনিট৷ সত্যিই তো! তুই কেন এসেছিস? দাদা?

- কেন এসেছি? তোর টানেই যে ভাই৷ 

- দাদা, তোকে আমি দেখতে পারছি কেন? তোকে তো আমার দেখতে পাওয়ার কথা নয়৷

- এ'বার থেকে দেখতে পারবি৷ আর তো আমাদের কোনও তফাৎ রইল না৷ তাই ঝুপ করে এসে পড়লাম৷ আমি জানতাম একটা বই মাত্র কয়েক পাতাই পড়া বাকি আছে তোর৷ পিলু, ঘটনাটা সদ্যই ঘটেছে৷ পেজমার্ক দেওয়া বই শেষ করার সুযোগ পাওয়া যায় রে, আমি জানি। এ'বার চট করে বইটা শেষ করে ফেল৷ ততক্ষণ আমি অপেক্ষা করছি না হয়৷ তারপর দুই ভাই মিলে সরে পড়ব'খন৷ 

ওয়েস্টওভারের বইটা যখন খুলে বসল পিলু, তখন খাটে শুয়ে থাকা নিজের শরীরটার দিকে তাকিয়ে শিরশিরে একটা ভূতের ভয় অনুভব করতে পারল যেন৷ আর ব্যাপারটার বিটকেলপনায় নিজেই ফিক করে হেসে ফেলল সে।