- অভি, লেট বাই থার্টি ফাইভ মিনিটস।
- সরি মানুদা৷ মাইরি, সরি৷ আসলে নিউইয়ারের মুখে লোকজনের এত হুজুগ৷ ট্র্যাফিকে ফেঁসে গিয়েই..।
- বাজে কথা না বাড়িয়ে আগে চা চাপিয়ে দে।
- আহ, তোমার বাড়িতে এলাম৷ কোথায় তুমিই স্টোভ জ্বালিয়ে..।
- গুরুজনের মুখে ওপর বেশি কথা বলতে নেই।
- আচ্ছা, পাঁচ মিনিট দাও। একটু জিরিয়ে নিই। বাপ রে! বাসে সে যে কী ভিড়!
- চায়ের সঙ্গে একজোড়া অমলেটও ভেজে আনিস, কেমন? ফ্রিজে আছে ডিম৷
- উফ, তোমার সেবা করতে এলাম নাকি?
- রাতের বিরিয়ানিটা আমিই খাওয়াব তো৷ অত তিতিবিরক্ত হচ্ছিস কেন।
- বলছিলাম, আর কেউ আসছে নাকি মানুদা?
- সে কী! আমার বাড়িতে আর আসবেটা কে৷ আত্মীয়স্বজন বলতেও তুই৷ বন্ধুবান্ধব বলতেও তুই৷ তুই কি নিউ ইয়ার্স ইভ পার্টি এক্সপেক্ট করে এসেছিস এ'খানে? তা'হলে পত্রপাঠ তোর ওই গদাই দত্তদের তাসের আড্ডায় চলে যা৷ চাই কী সে'খানে দু'দাগ দামী মদও জুটতে পারে৷ মাগনায়।
- গদাই দত্তের আড্ডায় আজ সিঙ্গল মল্টের পাশাপাশি শুনেছি বিপুল সেনও থাকবে৷ স্টার অ্যাট্রাকশন!
- থিয়েটার অভিনেতা বিপুল সেন?
- গতবছর তিনটে সিনেমাও রিলিজ করেছে ওর৷ তিনটেই সুপারহিট৷
- গদাই দত্ত আসর জমাতে জানে বটে৷ তা' সে'খানে তো তোর অবাধ যাতায়াত৷ সেই হাইক্লাস ফুর্তি ছেড়ে এই ব্যাচেলরের বিমর্ষ আস্তানায় কী করছিস রে অভি?
- অ্যানুয়াল হ্যাবিট৷ এ'বারেও ভাবলাম যাই৷ তোমায় চা-অমলেট খাইয়ে আর বিরিয়ানি প্রসাদ পেয়ে বছর শেষ করলে আগামী বছর ভালো কাটবে৷
- তা অবশ্য ঠিক৷
- চাকরীটা ভাবছি ছেড়ে দেব।
- আমায় দিয়ে রেসিগনেশন লেটার লেখাবি?
- ধুস৷
- তবে?
- আমি কিন্তু সিরিয়াস।
- এ তো ভালো কথা। কদ্দিন আর ন'টা-ছ'টার ছকে আটকে থাকবি৷ তোর ট্যালেন্ট আছে৷ অধ্যাবসায় আছে৷ ভাবনা কী?
- এই এনকারেজমেন্টের জন্যই তোমার কাছে আসা৷
- চট করে চা'টা বানিয়ে আন৷ তারপর তোর চাকরী ছাড়ার প্ল্যান সবিস্তারে শোনা যাবে৷
**
- সত্যি অভি, তুই চা'টা বড্ড ভালো বানাস৷ দশে সাড়ে দশ।
- অমলেটটা কত স্কোর করেছে?
- দশে সোয়া সাত৷ পেঁয়াজটা যথেষ্ট মিহি করে কুচোসনি৷ সামান্য বেশি ভেজে ফেলেছিস৷ তাই সামান্য নম্বর কাটতে হল।
- ডিউলি নোটেড।
- কবে ছাড়ছিস? চাকরী?
- ভাবছি সামনের হপ্তাতেই বসকে চিঠি ধরিয়ে দেব। তারপর মুক্তি।
- মুক্তি! বাহ্!
- তুমিই বলো মানুদা৷ এই অজস্র ফাইল, খামোখা মিটিং, গাম্বাট সব টার্গেট; দিনের পর দিন, মাঝেমধ্যে মনে হয় জম্বি হয়ে পড়েছি৷
- জ্যান্ত লাশ হয়ে পড়ে থাকা মোটেও কাজের কথা নয়।
- থ্যাঙ্ক ইউ৷ আমি জানতাম তুমি অন্তত বুঝবে।
- তা, রেসিগনেশনের পর?
- প্ল্যানটা এখনই ঠিক কষে রাখিনি৷ তবে লেখালিখি করেই আয়টায় করার চেষ্টা করব'খন৷ কিছুদিনের স্ট্রাগল৷ তবে ম্যানেজ ঠিক হয়ে যাবে।
- এই তো চাই৷ রিস্ক না নিলে চলবে কেন? চিরকাল দুধেভাতে নেকুপুষু হয়ে পড়ে থাকলে শাইন করবি কী করে?
- মানুদা৷ তোমার কথা শুনে বুকে বল পাচ্ছি৷ সামনের বছরটা অন্তত অন্যরকম একটু..।
- এই দাঁড়া, বিরিয়ানিটা অর্ডার দিই।
**
- উফ্৷ বিরিয়ানিটা এক্কেবারে টপক্লাস ছিল মানুদা। দশে বারো।
- আর চাপটা?
- দশে নয়৷ আর একটু ঝাল দিতেই পারত।
- কী ভাবলি? রেসিগনেশনটা নিয়ে?
- নামিয়েই দি৷
- নিশ্চয়ই নামাবি।
- সুমি একটু চিন্তিত৷ অবশ্য ওর আপত্তি নেই৷ তাছাড়া ওর চাকরীটাই তো আমার ভরসা।
- সুমি কনফিডেন্ট মেয়ে৷ তোকে ঠিক সামলে নেবে।
- মানুদা।
- বল।
- গদাই দত্তের তাসের আড্ডায় কেউ কোনওদিনও বিশ্বাস করবে না যে এই পনেরো বছরের চাকরীটা ঝুপ করে ছেড়ে দেওয়ার দম আমার আছে। যতবার বলেছি, উড়িয়ে দিয়েছে।
- দ্যাখ অভি, গদাই দত্তের আড্ডায় সিঙ্গল মল্ট থাকতে পারে৷ কিন্তু তোর মত ক্রিয়েটিভ মানুষকে চেনার ধক ওদের নেই৷
- ওদের আমি থোড়াই পাত্তা দি৷ তোমার ওপিনিওনটাই জানার দরকার ছিল।
- তুই যাই করিস, শাইন করবি৷ এ আমি নিশ্চিত।
- আর এক কাপ চা বসাই মানুদা?
- হোক।
***
- বাহ্৷ এই না হলে চা৷ চমৎকার বানিয়েছিস অভি।
- আরে, বারোটা বেজে দুই৷ হ্যাপি নিউ ইয়ার মানুদা।
- হ্যাপি নিউ ইয়ার।
- জানো, চাকরীটা ছাড়তে একটু হলেও বুক কাঁপবে।
- স্বাভাবিক।
- আসলে..নিজের ক্রিয়েটিভ প্যাশনকে আদৌ পাত্তা না দেওয়াটা যে অন্যায় হচ্ছে..সেই অনুভূতিটা মাঝেমধ্যেই ট্রাবল দেয়।
- এই যে ছটফট তোর মধ্যে আছে। সে'টাই তোর প্যাশন অভি।
- গদাই দত্তরা যাই বলুক৷ আমি ভীতু নই মানুদা৷ চাকরী ছাড়ার সাহস আমার আছে৷
- আলবাত আছে৷ কিন্তু তোর প্রমাণ করার কিছুই নেই৷ আর একটা কথা বলি অভি? একত্রিশ ডিসেম্বর রাত্রে তুই এই বুড়োটার সঙ্গে আড্ডা জমাতে এসেছিস, সে'টাও কম দুঃসাহস নয়।
- আমি তো প্রতি বছরই শেষ দিনটা তোমার সঙ্গেই কাটাই মানুদা।
- রাইট।
- প্রতি বছর চাকরী ছাড়ার প্ল্যানটাও বুক বাজিয়ে বলতে আসি।
- আসিস।
- অথচ ছাড়া হয় না।
- একদিন ঠিক ছাড়বি। একদিন অন্য কিছু করবিই, দারুণভাবে৷
- ঠিক ছাড়ব একদিন না একদিন! শালা গদাই দত্ত আর তার দলবল যতই খোঁটা দিক। ও'দের ঠিক দেখিয়ে দেব।
- আলবাত!
**
- হ্যালো!
- হ্যালো, মানুদা৷
- বল সুমি।
- অভি আছে?
- ও তো এই বেরোল৷ ট্যাক্সি নিয়েছে৷ আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে।
- শুনেছ নিশ্চয়ই৷ প্রতিবারের মত এ'বারেও ওর নিউ ইয়ার রেজোলিউশন; চাকরী ছেড়ে লেখালিখি নিয়ে পড়ে থাকবে।
- জানি।
- তোমার কী মনে হয়, এ'বারে সত্যিই ছাড়বে?
- প্রতিবারের মত এ'বারেও অভি গদাই দত্তের আড্ডায় নিজের স্টেটাস আপগ্রেড করতে চেয়ে চাকরী ছাড়তে চাইছে রে সুমি। নিজের প্যাশনের টানটা হয়ত এখনও সে'ভাবে চাগাড় দেয়নি ওর মধ্যে৷ তুই তো জানিস, আমার কাছে সে ফিবছর আসে শুধু সে'টুকু নিজেকে মনে করাতে। আর হ্যাঁ, আমার কাজ ওকে মনে করানো গদাই দত্তদের জাজমেন্টাল জ্ঞান-টীকা-টিপ্পনিই শেষ কথা নয়, ওর মধ্যে সত্যিই সৎসাহস আছে৷ আর আছে হাইক্লাস চা বানানোর ক্ষমতা। তোর বরটা সত্যিই একটা ক্রিয়েটিভ জিনিয়াস।
- হে হে৷ তা বটে৷ পরের বছর আমিও কিন্তু যাব অভির সঙ্গে, তোমার ফ্ল্যাটে৷ বিরিয়ানি আমাকেও খাইও৷
- জো হুকুম। হ্যাপি নিউ ইয়ার সুমি।
- হ্যাপি নিউ ইয়ার মানুদা৷ গুড নাইট৷