- প্রবীর? আয়, বস।
- সময় কম বড়দা। টাকাটা?
- ওই যে৷ টেবিলের ওপর। এনভেলপ।
- চললাম।
- গুনে দেখবি না?
- থাক।
- চারটেকেই কি গঙ্গায় ফেললি?
- বড়দা। কাজ হাসিল। নগদ হিসেব মিটিয়ে দিয়েছ৷ খেল খতম। হিসেব জেনে কী করবে৷
- কাল পরশু আবার কোথায় ভেসে উঠবে৷ পুলিশ খামোখা দৌড়ঝাঁপ শুরু করবে। তাই আর কী..।
- এদ্দিনে তোমার হয়ে অন্তত শ'তিনেক লাশ ফেললাম৷ তোমার দিকে কেউ আঙুল বাড়িয়েছে কি?
- আসলে কী জানিস, চারজনকেই সরাতে বলতাম না৷ কিন্তু ওই, বিজনেসে এমন গোলমাল পাকাতে শুরু করেছিল৷
- আমি মাইনে করা মানুষ৷ ও গল্পে আমার কাজ নেই৷
- প্রবীর।
- কিছু বলবে বড়দা?
- সিংঘানিয়ার পোষ্যরা কেউ তোকে দেখেনি তো?
- জিতু দেখেছিল।
- ওদের সেই ম্যানেজার? অবশ্য সে ব্যাটা নিজেও গুণ্ডা৷ কিন্তু সে যদি দেখে থাকে..। ঝামেলা পাকাবে না তো? ভালো করে শাসিয়ে এসেছিস তো?
- লাশকে শাসিয়ে কী হবে৷
- ওহ৷ ওকেও তুই...।
- দেখে ফেলেছিল৷ না দেখলে বেঁচেবর্তে থাকত৷
- তোর মাথাটা বড্ড গরম।
- জিতুর জন্য তোমায় তো বাড়তি টাকা দিতে বলিনি। কোল্যাটেরাল ড্যামেজ৷
- বলছি, বুলেটেই নামিয়েছিস তো সবকটাকে?
- বুলেটের যা দাম আজকাল৷ অবশ্য প্রসেসটা তোমার জেনেও কাজ নেই।
- তোর মেজাজটা দিনদিন বড় খটখটে হয়ে যাচ্ছে প্রবীর। আমি তোর এম্পলয়ার৷ ভুলে যাস না।
- তুমি এম্পলয়ার৷ তা ঠিক৷ তবে আমি তো ক্লার্ক নই।
- লাশ কোথায় ফেলেছিস৷ সে'টা আমার জানা দরকার।
- এদ্দিন তো সে দরকার পড়েনি।
- আজ পড়ছে৷
- থাক৷ আজ আসি।
- ও কী রে৷ এনভেলপটা রেখে যাচ্ছিস কোথায়।
- লাশের হিসেব যে দেবে, কাজ তাকেই দিও৷ টাকাটা রইল।
- উফ। তোর সব কথাতেই রাগ। নে, টাকাটা রাখ। ইয়ে, চা খাবি?
- আসি।
- চ', তোকে এগিয়ে দিই একটু।
***
- প্র..প্র..প্রবীর।
- বড়দা৷ বলো।
- আমি..আমি কোথায় বল দেখি..।
- বেশি ভেবে কী হবে বড়দা। থাক না।
- আমায় কোথায় এনেছিস?
- বড্ড বেশি ভাবছ।
- তুই..তুই সন্ধ্যেবেলা বাড়ি এলি, যাওয়ার সময় আমি তোকে এগিয়ে দিতে এলাম..। তারপর কিছু মনে পড়ছে না কেন?
- জিরিয়ে নাও বড়দা৷
- তুই আমায় কিডন্যাপ করেছিস? গুম করবি তুই আমায় রাস্কেল?
- আমি কিডন্যাপার নই৷ জানোই তো।
- আমি নিজের বাড়িতে নেই কেন? এই ঘুপচি ঘরটায় আমায় এনেছিস কেন প্রবীর? তুই আমায় আটকে রাখবি? র্যানসম চাইবি? তুই এত বড় নিমকহারাম?
- না বড়দা৷ খানিকক্ষণ পরেই ছেড়ে দেব। তোমার অনেক কাজ।
- হেঁয়ালি ছাড়৷ ব্যাপারটা ভালো হচ্ছে না৷
- এম্পলয়ারের মেজাজ বিগড়োচ্ছে নাকি?
- আমি তোকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি। কোন সাহসে আমায় ধরে এনেছিস রে তুই? কী ভেবেছিস, তুই কি আমার একমাত্র পোষা গুণ্ডা?
- না। তোমার তো রীতিমত নারায়ণী সেনা পোষা রয়েছে। আর সে জন্যেই তোমার মনে হচ্ছিল আমায় একটু শায়েস্তা করা দরকার৷ তাই না?
- মাইনে দিয়ে পুষি তোকে৷ তোর কাজের মেথড জানার রাইট আমার আছে।
- আর সে'টা জানতে না পেরে তুমি আমার পিছনে স্পাই লাগিয়েছ। পুলিশে ফাঁদে ফেলার ধান্দাও করছিলে৷ জানি৷ খবর পেয়েছি৷
- ইয়ে, শোন প্রবীর৷ তুই ওভাররিয়্যাক্ট করছিস৷ আমায় ফিরিয়ে নিয়ে চ'। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় না হয়..।
- কোথায় ফিরবে?
-ও মা৷ বাড়িতে।
- সে সুযোগ আর কোথায় বলো।
- কী ব্যাপার বল তো৷ কী সব আজেবাজে কথা বলছিস।
- তোমায় এম্পলয়ার হিসেবে বয়ে বেড়াতে বেড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম বড়দা। এ'বার আমিই তোমার এম্পলয়ার৷
- তোর মাথাটা গেছে৷ তুই বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছিস।
- বড়দা৷ আমার কাজের মেথডটাও এ'বারে জানবে৷
- আমায় তুই ধরে রাখতে পারবি না!
- তোমায় তো আমি বেঁধে রাখিনি৷ দরজাটাও হাট খোলা৷ এই দ্যাখো, হাতে ছুরি পিস্তর কিস্যু নেই৷ তুমি ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছ না কেন?
- আমি..আমি..আমি..।
- কেন পারছ না?
- প্রবীর, আ..আমি বেরোতে পারছি না কেন?
- কারণ আমি এখন এম্পলয়ার৷ আমি না বলা পর্যন্ত পারবে না। তবে চিন্তা কোরোনা৷ তুমিও পাতি ক্লার্ক নও৷
- আমি..আমি কোথায়..।
- আমার অফিসে। একটু পরেই জিতু এসে তোমায় সব বুঝিয়ে দেবে।
- জিতু?
- ওই যে, সিংঘানিয়াদের ম্যানেজার৷
- তুই ওকে খুন করিসনি?
- কথার খেলাপ আমি করিনা৷ আমি খুনি, তাই বাজে মিথ্যেও বলিনা৷ যে'টা তোমার মত বিজনেসম্যানের জন্য জলভাত।
- আমি কিছুই..।
- আমার খুনের কারখানাটা বড্ড বড় বড়দা৷ রোজ কত শত অর্ডার৷ অত লাশ নদীতে ফেললে দেশে মড়ক লাগবে যে৷ আর গুণী মানুষের হাতে প্রতিটা লাশই প্রডাক্টিভ রিসোর্স। নষ্ট করলে আমার ব্যবসাটা চলবে কেন? কাজেই তারা আমার হয়ে কাজ করে বেড়ায়। আমিই তাদের এম্পলয়ার৷ বড়দা, এখন আমিই তোমার মালিক। সবচেয়ে বড় কথা মাইনে দেওয়ারও ঝামেলা নেই, বেগার খাটার আর্মি আর কী৷
- তুই কী সব...!
- খবরদার..আর তুই নয়৷ মালিককে তুই বলে ডাকাটা ভালো দেখায় না। যাক৷ তোমায় জিতুই সব বুঝিয়ে দেবে৷ সামনের হপ্তা থেকে ফিল্ডে নামবে'খন৷ এখন আসি৷ কেমন?