দু'হাজার বাইশ৷ পয়লা জানুয়ারি৷ রাত একটা।
নিউ ইয়ার পার্টিতে নেচে-কুঁদে, রিমঝিমে নেশায় বুঁদ হয়ে, যুধিষ্ঠির বাড়ি ফিরছিলেন। কেলোর কীর্তিটা টের পেলেন বাসস্ট্যান্ডে এসে৷ কোন শালা পকেট কেটে মানিব্যাগ নিয়ে হাওয়া৷
নেশা গেল চটকে। ধেচ্ছাই৷ মানিব্যাগে তিনশো বাইশটাকা ছিল, পুরোটাই গচ্চা। এ'দিকে মানিব্যাগ ছাড়া শেষ ইন্দ্রপ্রস্থ মিনিটায় ওঠা যাবে না। এখন উপায়?
কপাল একেই বলে, এত রাত্তিরেও বাসস্ট্যান্ড এক্কেবারে ফাঁকা নয়৷ বেঞ্চিতে আধশোয়া হয়ে যে মাতালটা শুয়ে সে ব্যাটা যুধিষ্ঠিরের রীতিমতো চেনা; যক্ষ৷
পিঠে চাপড় খেতেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসলে যক্ষ৷
- আরে! যুধিদা যে।
- হ্যাপি নিউ ইয়ার ভাইটি।
- হ্যাপ্পি হ্যাপ্পি ন্যু ইয়ার ধম্মরাজ৷ তা লাস্ট ইন্দ্রপ্রস্থ মিনি ধরবে তো? পাঁচ মিনিটে আসছে।
- যক্ষ৷ ভাইটি। কুড়ি টাকা ধার দে দেখি৷ পরশুই দিয়ে দেব।
- তুমি শালা মহাফেরেব্বাজ৷ বড় গলায় বলছ দিয়ে দেব৷ অথচ কে জানে, ফিসফিস করে হয়ত বলবে 'ইতি গজঃ'৷ আমি কি দ্রোণের মত বুড়োহাবড়া নাকি৷
- অমন বলিস না ভাই৷ কে যেন মানিব্যাগটা মেরে দিয়েছে৷ কুড়িটাকা না হলেই নয়৷ লাস্ট বাস কিছুতেই মিস করা চলবে না। এই শীতের রাতে বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে আমার সাইনাস মাইনাস হয়ে যাবে।
- টাকা দিতে পারি৷ তবে সেই পুরনো শর্ত যুধিদা।
- সেই কফি উইথ যক্ষ খেলতে হবে?
- করেক্ট। ছ'টা প্রশ্ন। সবকটার সঠিক উত্তর দিতে পারলেই জ্যাকপট। তা'হলে শুধোই?
- দেরী করে লাভ নেই৷ শীত বাড়ছে। জিজ্ঞেস কর৷
- ইয়ে, বিড়ি আছে?
- আছে।
- আহ, সে'টা প্রশ্ন নয়৷ দাও দেখি একটা।
- ওহ হো৷ এই যে৷
- থ্যাঙ্কিউ৷ এ'বার। শুধোই৷ কেমন?
- হোক।
- এ দুনিয়ায় সবচেয়ে আশ্চর্যের কী যুধিদা?
- জীবনে কেউ ফেসবুক ট্যুইটারে তর্কে জেতেনি৷ অথচ তবু মানুষের টাইমলাইন কাঁপানো তর্কের শখ আর আগ্রহ কিছুতেই কমে না৷
- ঠিক৷ সবচেয়ে সুখী কে?
- যে মানুষ খবরের কাগজ রাখে স্রেফ অরিগ্যামি প্র্যাক্টিস করতে৷ আর যে নিউজ চ্যানেল ব্যবহার করে স্রেফ বারান্দায় বসা কাকচিল তাড়ানোর জন্য।
- বাতাসের চেয়েও দ্রুতগামী কে?
- মিম।
- স্বর্গের চেয়েও উঁচু কী?
- ল্যাদ।
- পৃথিবীর চেয়েও ভারী কী?
- নিউইয়ার রিজোলিশনের বোঝা।
- গুড৷ গুড৷ তুমি গুরু হাইক্লাস মানুষ৷ ফাইনাল প্রশ্ন৷ করি?
- নিশ্চয়ই।
- ভালোবাসা কী গুরু?
- ভালোবাসা?
- কী হল গুরু৷ আউট অফ সিলেবাস? ভেবড়ে গেলে দেখছি৷
- ভালোবাসা..। হুঁ..। ভা..লো..বা..সা..।
- তোমার বাড়ি ফেরা আটকে গেল যে গুরু৷ কুড়ি টাকা তো পেলে না।
- ভালোবাসা কী..এ'টাই তোর প্রশ্ন?
- একদম৷ হোয়াট ইজ লাভ যুধিদা? টেল মি!
- শীতের রাত৷ এখন রাত সোয়া একটা৷ নিউ ইয়ার। শহর জোড়া হুল্লোড়৷ অথচ তুই একা এই বাসস্টপের বেঞ্চিতে নেতিপেতি হয়ে পড়ে রয়েছিস৷ মনখারাপ ভাই দক্ষ?
- এ কী! প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এ'সব কী যুধিদা!
- তোর প্রশ্ন ভুলিনি৷ উত্তরও দেব৷ তুই জিজ্ঞেস করেছিস ভালোবাসা কী। ভালোবাসা কী জানিস? তোর কুড়িটাকার দরকার আপাতত আমার নেই৷ ভোরের দিকে দিলেই হবে।
- ও মা৷ সে কী!
- লাস্ট বাসে ফিরে আর কাজ নেই৷
- কেন? ফিরবে না?
- তোর সঙ্গে গেঁজিয়ে কাটাবো ভাবছি রাতটা৷ নতুন বছরের প্রথম রাত, এমন একাবোকা হয়ে পড়ে থাকবি কেন রে রাস্কেল? তার চেয়ে দু'ভাই গপ্পটপ্প করে কাটিয়ে দেব'খন৷ কী বলিস?
- পার্ফেক্ট। ছ'টা প্রশ্নের উত্তরই তুমি ঠিকঠাক দিয়েছ৷ আর ভোরের দিকে কুড়িটাকা নয়৷ তোমায় আমি রীতিমতো ট্যাক্সিতে বসিয়ে দেব।
- হেহ্।
- থ্যাঙ্কিউ যুধিদা। হ্যাপি নিউ ইয়ার।
- হ্যাপি। হ্যাপি।
No comments:
Post a Comment