- আর পালানোর চেষ্টা করিস না ভাই ভুতো।
- খামোখা টেনশন নিচ্ছেন দারোগাবাবু৷ আপনি মন দিয়ে ড্রাইভ করুন দেখি৷ আরে, আমি পালাতে চাইলে কি আমায় ধরতে পারতেন? এমন জীপে বসিয়ে আদর করে থানার দিকে নিয়ে যেতে পারতেন?
- তুই বলছিস তোকে ধরায় আমার কোনও কেরামতি নেই?
- অধ্যাবসায় অবশ্যই আছে৷ নয় নয় করে অন্তত বছর তিরিশ তাড়া করে বেড়াচ্ছেন।
- সত্যিই ভাই৷ মাঝেমধ্যে মনে হয় তোর কথা যত ভেবেছি, তত বোধ হয় বৌকে নিয়েও ভাবিনি। একটা মায়া আছে তোর প্রতি, বুঝলি।
- মিথ্যে বলবনা দারোগাবাবু, সে মায়া আমি আপনার চোখে দেখেছি বটে৷
- তা ভুতো, তুই কি চুরিটুরি সত্যিই ছেড়ে দিবি?
- হাড়গোড়ের ফ্লেক্সিবিলিটি কমছে৷ পাইপ বেয়ে ওঠা নামার স্পীড কমে যাচ্ছে, জানালার গ্রিল খুলতে গিয়ে শব্দ করে ফেলছি৷ খুচখাচ চুরি চালানো যেত বটে, তবে ব্যাপারটার মধ্যে আর্ট থাকবে না আর। তাই ভাবলাম, খেলো হয়ে যাওয়ার আগে সরে পড়াই ভালো।
- এ জন্যই তোকে আমার এত পছন্দ। সত্যিই তো৷ গাভাস্কার বলতেন, এমন সময় রিটায়ার হবে যাতে লোকে জিজ্ঞেস করে 'হোয়াই' ইন্সটেড অফ 'হোয়াই নট'।
- আপনারও তো কালই রিটায়ারমেন্ট৷ তাই না দারোগাবাবু?
- আমরা তো সরকারবাহাদুরের চাকর। নিজের রিট্যায়ারমেন্ট তো নিজের পছন্দমত হওয়ার নয়৷ কাল হিসেবমত শেষ দিন। তেমনটাই হবে৷ তবে রিটায়ার করার আগে যে তোকে অ্যারেস্ট করতে পেরেছি ভুতো, সেটা ভেবে বেশ একটা প্রচ্ছন্ন গর্ব বোধ করছি। ভুতো চোরকে তো গত তিরিশ বছরে কোনও শর্মাই ধরতে পারলে না৷ এই একটা বড় পালক নিজের মুকুটে সেঁটে বিদেয় নিতে পারব।
- দারোগাবাবু৷
- বলে ফেলো।
- আমি চোরছ্যাঁচড় মানুষ৷ তবু, যেহেতু ওই মায়ার কথা বললেন, তাই সাহস করে জিজ্ঞেস করছি৷ আমায় হাজতে পোরার আগে, একবার নিজের বাড়িতে বসিয়ে চা খাওয়াবেন?
- তোর মতলবটা কী বল তো ভুতো? নিশ্চয়ই সরে পড়ার প্ল্যান ছকেছিস কোনও।
- মা কালীর দিব্যি৷ বললাম তো, পালানোর ইচ্ছেই যদি থাকবে তবে ধরা দিলাম কেন৷
- চা খাবি? সঙ্গে ডিমের কচুরি? মিনু, মানে আমার মিসেস, জব্বর বানায়৷
- তাই হোক স্যার। বৌদিকেও প্রণাম করে আসা যাবে৷
**
- ভুতো! নেমে আয় জীপ থেকে। এই আমার বাড়ি৷
- আজ্ঞে দারোগাবাবু, জানি।
- জানিস? এই বাড়িতে তো আমি গত মাসেই শিফট করেছি।
- আজ্ঞে, গত হপ্তায় আপনার বাড়িতে এসেছিলাম। চুরি করতে।
- হোয়াট! দারোগার বাড়িতে চুরি!
- আপনার স্পেশ্যাল নাইটডিউটি ছিল। আমি ভাবলাম, শেষ চুরিটা আপনার আস্তানাতেই হোক। ইচ্ছে ছিল সেই শেষ চুরি সেরে ফেলে তারপর ক্যানিংয়ের কাছে একটা গাঁয়ে গিয়ে জুড়ে বসব। নিজের নাম পালটে একট বাড়ি কিনব, মুদীর দোকান দিয়ে গা মৌজ করে দিন কাটাব। কিন্তু বৌদি সব গোলমাল করে দিলেন।
- মিনু? মিনু কী করলে?
- যা আপনি তিরিশ বছরে পারেননি৷ বৌদি আমায় পাকড়াও করলেন৷ ইয়ে, কনুইয়ের চোটটা দেখুন দারোগাবাবু৷ বৌদি জুডো জানে।
- তা জানে।
- আপনার মত ভুঁড়িও নেই৷
- শাটাপ ভুতো।
- কাজেই ফ্লেক্সিবিলিটি বেশি। পাশ কাটিয়ে বেরোতে পারলাম না। অবশ্য পাকড়াও করার পর বসার ঘরের চেয়ারে বেঁধে রেখে মাছভাজা আর চা খাওয়ালেন। এবং বোঝলেন, পাপের সামান্য প্রায়শ্চিত্ত না করলে ক্যানিংয়ের মুদীর দোকান চলবে না৷ কাজেই একটু জেলের মুখ দেখাটা জরুরী।
- বলিস কী! এত কিছু হল, তবু মিনু থানায় খবর দিল না?
- দিলেননা। কারণ আমাদের ডীল হল৷
- ডীল? দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী দারোগা অমিত দত্তর স্ত্রী শেষে চোরের সঙ্গে সমঝোতা করলে?
- আজ্ঞে। বৌদি আমায় ছেড়ে দিলেন৷ একটা শর্তে৷
- কী শর্ত?
- আপনাদের বত্রিশ বছরের বিয়ে৷ অথচ থানার কাজে আপনি এতই ব্যস্ত যে এত বছরে একদিনও ডিউটি শেষ করে সময়মত বাড়ি ফেরেননি৷ আপনার মত মুখ গুঁজে কাজ করার লোক ডিপার্টমেন্টে খুব কম, কিন্তু বৌদিকে এত অবহেলা করে আপনি ঠিক করেননি৷ বৌদির বড় সাধ, রিটায়ার করার আগে অন্তত একটা দিন আপনি বিকেল-বিকেল বাড়ি ফিরে ওঁর সঙ্গে চা বিস্কুট খাবেন। বৌদি আমায় এই শর্তে সে'দিন ছেড়ে দিলেন যে আপনি রিটায়ার করার আগে অন্তত একদিন আমি আপনাকে সময়মত বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব৷
- ওহ..মিনুটা সত্যিই..এত কিছু করে আমার জন্য অথচ আমি এদ্দিন কিছুই..।
- যাক। এ'বার থেকে করবেন।
- তা বলে ভেবো না তোমায় হাজতে চালান করা হবে না।
- ও মা। বৌদিকে কথা দিয়েছি যে জেলের ভাত ক'দিন খেয়ে তারপর ক্যানিংয়ের সন্ন্যাস৷ তার আগে নয়।
- বেশ৷ এ'বার চট করে জীপ থেকে নেমে আয়৷ মিনু কচুরি ভাজবে, আর আজ চা'টা বরং আমিই বানাব৷ আয় ভুতো। আয়৷ ওয়েলকাম টু দারোগাবাড়ি।
No comments:
Post a Comment