- এই যে, সাঁতরা...কোন চুলোয় ছিলে বাপ!
- আসলে লাইটারটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই এ'দিক ও'দিক..।
- উফফ, এ'দিকে আগুন যে আমাদের গায়ে এসে পড়েছে।
- আগুন?
- এ কী...তুমি কি খবরটা পাওনি?
- কোন খবর!
- হরিহরপুরের নাম শুনেছ?
- শহর থেকে আড়াই ঘণ্টার পথ। হাইক্লাস আখের গুড় পাওয়া যায়।
- খাইখাইটা থামাও। সে গাঁয়ের নীচের গোটা ওয়াটার টেবিল আচমকা বিষিয়ে গেছে৷ একশো সতেরোজন ডেড৷ তিনশোর ওপর মানুষ ক্রিটিকাল৷
- মাইগড!
- তবে আর বলছি কী।
- স্যার, এখুনি টীম পাঠাতে হবে তো। সুমন্তরা রেডি আছে কিনা দেখি..। ইয়ে, একটা কথা। এতগুলো মানুষ মারা গেল, এতজন হাসপাতালে..মিডিয়ায় তবু কেউ..।
- কেউ কী?
- কেউ ফলাও করে খবর করল না কেন?
- যে কারণে তুমি এখনই খবর তৈরি করবে না। রয়সয়ে সুতো ছাড়বে।
- কী'রকম?
- মিনিস্টার পাঁকড়াশি আমায় আজ সকালেই সমস্ত জানিয়েছেন। টপ মিডিয়াহাউজগুলো সবাই জানে৷
- ইন্সট্রাকশনটা কী?
- ওয়েটিং ফর দ্য রাইট মোমেন্ট৷
- মানে যে'টা স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল তো। অন্তত হাজারখানেক না মরলে পাত্তাটাত্তা দেওয়া চলবে না৷
- এ'বার কেসটা একটু আলাদা৷ সে জন্যই তোমায় খুঁজছিলাম।
- কী'রকম?
- আজ রাত্রের মধ্যে সমস্ত চ্যানেল এই খবর কভার করা শুরু করবে। কয়েক ঘণ্টা সময় আরও দরকার কারণ সরকারবাহাদুর কেস সাজাচ্ছে।
- কেস? কী কেস?
- ও মা। ওয়াটার টেবিল পয়জনড৷ ক্রিমিনালদের ধরতে হবে না?
- হিউমান ইন্টারভেনশন রয়েছে? বলেন কী! মানুষের শয়তানি?
- তা কেউ জানে না৷ কিন্তু সরকার যদি বলে আমরা জানি না, পাবলিক তা পছন্দ করবে কেন? কতবার তোমায় বলব ভাই সাঁতরা, লোকে কী চায়?
- অ্যাকশন!
- করেক্ট!
- অ্যাকশন দিতে হবে লোককে৷ কাজেই সরকার কেস সাজিয়ে দু'চারজনকে গ্রেপ্তার করবে৷ সেই অ্যাকশনটাই হেডলাইন৷ মৃত্যুটৃত্যু ফুটনোটে৷ ওকে?
- ওকে। কিন্তু গ্রেপ্তার কাদের করবে?
- ও কোন রামশ্যামযদুমদুকে ধরে সুট করে ঢুকিয়ে নিলেই হল। তাতে তোমার আমার কী।
- কিন্তু আদত কারণটা..।
- পাঁকড়াশি জানালে যে গত ছ'মাস ধরে দু'জন প্রফেসর উঠেপড়ে লেগেছিল প্রমাণ করতে যে সুপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরির বিষাক্ত কেমিক্যাল নাকি হরিহরপুরের পানীর জলকে বিষিয়ে দিচ্ছে এবং ব্যাপারটা কয়েকদিনের মধ্যেই এক্সপ্লোড করবে৷
- রাইট৷ প্রফেসর গুপ্ত আর তার সহকারী প্রফেসর গুহ। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। পাত্তা দিইনি৷
- অমন বোরিং গপ্প পাত্তা না দেওয়াটাই আমাদের কর্তব্য সাঁতরা। নয়ত প্রাইমটাইমে ভজন শোনাতে হবে।
- তা ঠিক। কিন্তু এমন বিশ্রী ব্যাপার যে ঘটে গেল..।
- টেররিস্ট অ্যাক্ট। বললাম তো।
- ওহ রাইট৷ কিন্তু ওই দুই প্রফেসর যদি ট্যাঁফোঁ করে..।
- প্রফেসর গুহ সচেতন ও বুদ্ধিমান। তিনি বেশ মোটা ইন্সেন্টিভ নিয়ে একটা সরকারি কমিটির মাথা হতে স্বীকার করেছেন।
- আর গুপ্ত?
- নিখোঁজ।
- আই সী।
- যাকগে৷ সাঁতরা। আজ প্রাইম টাইমে এ'টা থাকছে।
- বেশ।
- ইয়ে। একটা জিনিস মাথায় রেখো৷ হরিহরপুরে আমাদের যে টীম যাবে, তারা যেন এমন সব লোকেশন বেছে নেয় যাতে ক্যামেরায় হাইপিওর মিনারেল ওয়াটারের হোর্ডিংটা ব্যাকগ্রাউন্ডে স্পষ্ট দেখা যায়৷ কনেকশনটা বুঝতেই পারছ৷ বিশুদ্ধ পানীয় জলের ক্রিটিকালিটিটা হাইলাইট করার এটাই ভালো সময়।
- হাইপিওর মিনারেল ওয়াটার৷ ও'টা ওই সুপারটেক গ্রুপেরই তো৷ আর তাছড়া এ'টা শহুরে ব্র্যান্ড৷ হরিহরপুরে ওদের হোর্ডিং আছে?
- আর একঘণ্টার মধ্যে হোর্ডিং দাঁড়িয়ে যাবে। ওদের সিইও নিজে ফোন করেছিল। এই সাবলিমিনাল মেসজিংয়ের অপরচুনিটি ওরা কিছুতেই ছাড়তে চাইছে না৷ আমাদের প্রাইমটাইমের মূল স্পনসরও আজ ওরা৷
- বাহ্, বেশ বড় ডীল হাঁকিয়েছেন দেখছি।
- হ্যাঁ৷ টোটাল উইন-উইন৷ ইলেকশনের আগে টেররিস্ট কাত করে গ্রেট পিআর বুস্ট ফর সরকারবাহাদুর। সুপারটেক গ্রুপের সোনায় সোহাগা৷ আর আমাদের টিআরপি আর টু পাইস৷ কিন্তু তোমায় জোরকদমে সবকিছু এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সাঁতরা৷
- ওউক্কে স্যার। হয়ে যাবে৷ আচ্ছা, হরিহরপুরের মানুষদের বাইটটাইট নিতে হবে কি?
- বাইট নিও৷ তবে ওরা কী বলবে, সে স্ক্রিপ্টটা একবার নিজেই ঝালিয়ে নিও।
- পার্ফেক্ট৷
- আর শোনো, তোমার লাইটারটা আমিই নিয়েছিলাম। আমারটা যে কোন শালা মেরে দিল৷ এই নাও।
No comments:
Post a Comment