- আচ্ছা অভ্র, আপনি কবিতা পড়েন?
- ক..কবিতা? পোয়েট্রি?
- ভূতের নাম শুনলেন? নাকি ভল্ডেমর্ট?
- ভূত বা ভল্ডেমর্ট শুনলে ঠিক গলা শুকিয়ে যায়না, হাতের তালু ঘামতে শুরু করেনা, হাড়-কাঁপানো পরীক্ষার হলের গন্ধ নাকে আসে না, সামান্য লেবুজলের জন্য মন আঁকুপাঁকু করে না, জুনের দুপুরে কলকাতায় বসে গায়ে শাল জড়াতে ইচ্ছে করে না৷ কিন্তু কবিতা পড়লে হয়। বুঝতেই পারছেন, আদা-কাঁচকলা ইকুয়েশনে রয়েছে আমার মাথা আর কবিতা৷
- চীনেবাদামের ভাঙা খোসার সঙ্গে আপনার তুলনা চলতে পারে৷
- কী জানেন রুবি, কবিতার লাইনগুলো কেমন কপালে গোঁত্তা খেয়ে ছিটকে যায়। গদ্যফদ্য দিব্যি সুটসাট ব্রেনে ঢুকে জাঁকিয়ে বসে পড়ে৷ কিন্তু পদ্য হলেই মগজের ইলেক্ট্রিক ফেন্সে শক খেয়ে এলোমেলো হয়ে যায়।
- একটা গোটা জীবন কবিতা অ্যাপ্রিশিয়েট না করে কাটিয়ে দেবেন?
- রুবি, আমি কিন্তু চেষ্টা করেছি অনেক৷ বিশ্বাস করুন৷ গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে প্রচুর বইও কিনেছি একসময়৷ সে'গুলোকে সে'গুলোকে কোস্টার হিসেবে ব্যবহার করি৷
- আপনি ক্রিমিনাল অভ্র।
- কবিতার বইকে ডিসরেস্পেক্ট করেছি বলে?
- না৷ নিজের কবিতা বোঝার ক্ষমতাটাকে অগ্রাহ্য করছেন বলে।
- যাহ শালা৷ ওহ, সরি৷ আই মীন...।
- নিজেকেই বরং কড়াভাবে শালা বলে একটা মজবুত গাঁট্টা মারুন অভ্র।
- আমি শালা কবিতা বুঝি?
- কবিতা পড়ে আপনার গলা শুকোয়, হাতের তালু ঘামে, ছেলেবেলার পরীক্ষার হলের সুবাস নাকে আসে, বুকভরা হাঁসফাঁস টের পান লেবুজলের জন্য, জুন মাসের গরম উড়িয়ে দিয়ে গা-কাঁপুনি টের পান৷ এ সমস্তই কবিতা অ্যাবজর্ব করে ফেলতে পারার সিম্পটম৷ ওই ইলেক্ট্রিক ফেন্স আপনার মনের ভাঁওতা৷ আপনি এস্কেপিস্ট অভ্র৷
- এই যে, আপনার কফি শেষ হয়েছে? তা'হলে এ'বার ওঠা যাক৷
- আপনি এস্কেপিস্ট? অভ্র?
***
রুবির ট্যাক্সিটা চোখের আড়াল হওয়ার পরেও খানিকক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অভ্র৷ অটোওলা ধমক না দিলে হয়ত আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকত৷ এই রুবি মেয়েটা ভারী অদ্ভুত৷ গত বছর দেড়েকে অন্তত আড়াইশো কাপ কফি খাওয়া হয়ে গেছে একসঙ্গে। অথচ এদ্দিনেও সম্পর্কটাকে 'আপনি' থেকে 'তুমি'তে টেনে তোলা গেলনা।
রুবি যে ঠিক কী চায়, সেটা বুঝে ওঠার আশাই ছেড়ে দিয়েছে অভ্র৷ শুধু কেমন একটা বিচ্ছিরি মায়া, আর খানিকটা স্নেহ৷ তাছাড়া ওই যে, রেস্টুরেন্টের টেবিলের ওপর রাখা নুনের ডিবেটা টেনে নিতে গিয়ে নিজের আঙুলের ডগায় রুবির আঙুলের স্পর্শ৷ ব্যাপারটা ঈষৎ গোলমেলে। রুবির ট্যাক্সি এতক্ষণে নির্ঘাৎ দেড়দুই কিলোমিটার দূরে, তবু আঙুলের ডগার ছ্যাঁতটা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
"যাহ্ শালা", অস্ফুটে বলে উঠল অভ্র৷ পকেট থেকে রুমাল বের করতে হল হাতের ঘাম মুছতে৷ অথচ এই চিটচিটে গরমের মধ্যেও যেন একটা কনকন গায়ে এসে ঠেকছে৷ কী আশ্চর্য! নাহ্, বেশ বিরক্তই বোধ করছিল সে৷ দু'কাপ কফি খেয়েছে আধঘণ্টা আগেই, তবুও যেন গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে৷ সামনের ফুটপাথে একটা লেবু জলের দোকান দেখতে পেয়ে সামান্য স্বস্তি পেল অভ্র৷ এ'বার মিনিমাম দু'গেলাস ঢকঢক করে না খেলেই নয়৷
No comments:
Post a Comment