- বড়দা!
- কী ব্যাপার সুমন, এত নার্ভাস কেন?
- ইয়ে, এই যে। পার্সেল।
- বলিস কী! এই মাত্র এলো?
- এই মাত্তর।
- দাঁড়া৷ নার্ভাস হোস না৷
- নার্ভাস হব না? এ পার্সেল যে অনিলদারই পাঠানো তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই৷
- তা অবশ্য নেই..। কিন্ত..।
- কিন্তু আবার কী..। গতকালই হুমকি দিয়েছিল না..আমাদের উড়িয়ে দেবে? আজকেই উড়ো পার্সেল৷ আর ইয়ে, বাক্সের গায়ে কান লাগিয়ে দেখো৷ খুব সূক্ষ্ম একটা শব্দ আছে৷
- দেখি..।
- শুনলে?
- টিক টিক টিক৷ সাংঘাতিক৷
- ফাটল বলে।
- তুই শালা এ'টা নিয়ে ঘরে ঢুকলি কেন?
- কী করবটা কী! ছুঁড়ে ফেলবটাই বা কোথায়?
- পুলিশ ডাকব? বম্ব স্কোয়্যাড?
- আমরা অনিলদার রাইভাল গ্যাং৷ নেকুপুষুসুন্টুনিমুন্টুনি পাবলিক নই৷ পুলিশ এ আড্ডায় এলে আরও বড় ক্ষতি৷ এ'খানে যা মালপত্তর, মিনিমাম বত্রিশবার ফাঁসি হবে।
- অনিলের বোমায় উড়ে যাওয়ার চেয়ে পুলিশের ফাঁস ভালো৷
- বড়দা৷ পার্সেল নিয়ে আসা মেসেঞ্জারটিকে পাকড়াও করতে পেরেছি৷
- মেসেঞ্জার?
- দরজার সামনে বোমা পার্সেলটা রেখে দিয়ে কেটে পড়ার তাল করছিল৷ ক্যাঁক করে ধরেছি৷
- বলিস কী৷
- বোমা রাখতে কে এসেছিল জানো? ওই বোবা হুলো।
- বোবা হুলো? ও তো আমাদের স্পাই ছিল৷ মাসে মাসে মাইনে দিতাম যে অনিলদার গ্যাংয়ের খবর আমাদের চালান করার জন্য৷
- দু'দিকেরই খাচ্ছিল রাস্কেলটা৷ কিন্তু আমাদেরই বিট্রে করল৷ অনিলদার বোমা নিজে বয়ে আনল৷
- শোন সুমন৷ এক কাজ করি৷ এ পার্সেল এখানে রেখে, বোবাহুলোকে বগলদাবা করে আমরা কেটে পড়ি বরং৷
- বাহ্৷ এ পার্সেলের বোমা ফেটে তারপর সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাবে তো৷ অন্তত দু'শো কোটির মাল এ আড্ডায় রয়েছে বড়দা৷
- আরে আপনি বাঁচলে বাপের নাম৷ আর তাছাড়া, এত টাকার মাল অনিলদার দলের হাতে অন্তত পড়বে না৷ সে'টা একটা বাঁচোয়া।
- ওই হুলোটাকেও ফেলে যাই না৷ বোমায় সে ব্যাটাও উড়ে যাক৷
- না। ওকে দরকার৷ পরে অনিলদার সঙ্গে বোঝাপড়ায় সুবিধে হবে৷ আর সময় নষ্ট নয়৷ বাক্সটা এখানেই থাক৷ আমি গাড়ি বের করছি৷ তুই ওই হুলো ব্যাটাকে বস্তায় পুরে নিয়ে আয়৷ জলদি সুমন, বাক্সের টিকটিক আওয়াজটা বেড়েছে মনে হয়৷
***
- অনিলদা৷ গোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে দেখেছি৷ কেউ নেই৷
- মালপত্র?
- সবই আছে৷ দেড়শো কোটির মাল, কম সে কম৷ বেশিও হতে পারে৷
- সব ভালো করে দেখে নিয়েছিস তো অপু?
- হ্যাঁ। সুমন আর বড়দা কেটে পড়েছে নির্ঘাৎ৷ তবে ইয়ে অনিলদা, হুলোকেও বোধ হয় নিয়ে গেছে উঠিয়ে৷ হুলোকে কোথাও দেখছি না৷
- গুড।
- গুড? হুলো আমাদের ভালো হ্যান্ড ছিল৷
- ইনএফিশিয়েন্সি বরদাস্ত করা যায় রে অপু৷ চোরাগোপ্তা বাটপারি নয়৷ হুলো মানুষটা বেশ গোলমেলে৷
- বম্ব পার্সেলটা ভিতরের ঘরে থেকে নিয়ে এসেছি৷ এই যে। ডিঅ্যাক্টিভেট করে ফেলি?
- বম্ব পার্সেল?
- বোবাহুলোকে দিয়ে যে'টা পাঠালে অনিলদা। ডিটোনেটরটা কোথায় বলো। সে'টাও দরকার।
- ও বাক্সে বোমা নেই অপু৷ নিশ্চিন্তে খুলে দেখ৷
- সে কী! বোমা নেই এ'তে?
- খুলে দেখ না৷
- বেশ...এ কী৷ এ তো তোমার সেই আদ্দিকালের দম দেওয়া অ্যালার্ম ঘড়ি৷
- আমার বড় প্রিয়৷ ফিরে পেয়ে নিশ্চিন্ত হলাম।
- ওহ, তুমি বোমা পাঠাওনি? আমি ভাবলাম..।
- বড়দা আর সুমনের গ্যাং আজকাল বড্ড বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল৷ ওদের না সরালে চলছিল না৷ আমাদের লাইনেও তো মার্কেট শেয়ার বলে একটা ব্যাপার আছে নাকি৷
- কিছুই বুঝছি না অনিলদা।
- বোমা পাঠিয়েছি৷ ডিটোনেটও করেছি৷ বড়দা আর সুমন দু'জনেই এতক্ষণে শতটুকরো হয়ে মাটিতে মিশে গেছে৷ নির্ঘাৎ৷ বাক্সে বোমা রাখিনি, নয়ত এত টাকার চোরাইমাল হাতে না এসে উড়ে যেত৷ বোবাহুলোকে দিয়ে আমি পার্সেল বোমা পাঠাইনি রে৷ পার্সেল দিয়ে বোবাহুলো-বোমা পাঠাতে হল, ফর বেস্ট রেজাল্টস যাকে বলে। যাকগে, ঘড়িটা আমার অফিসে পৌঁছে দিস, কেমন?
No comments:
Post a Comment