Sunday, June 5, 2022

সাইকেলজিক

শেষে এক জ্যাঠতুতো দাদা ঠেলেঠুলে কোনওক্রমে শিখিয়ে ছেড়েছিল৷

কিন্তু দাদা হলে যা হয় আর কী। সামান্য ফুর্তির সুযোগ না থাকলে সে মহৎ কাজ করবে কেন? দু'চাকার ওপর ব্যালেন্সটা সবে খানিকটা ধরেছি। খোলা মাঠে টলমলিয়ে সাইকেলসহ এগিয়ে গেছি খানিকটা৷ অমনি সে দাদা চেঁচিয়ে বললে,  "দারুণ, ব্রাভো৷ এক্কেবারে হিরোর মত চালাচ্ছিস৷ এ'বারে শোন ভাই, আসল মজা টের পেতে হলে হ্যান্ডেল থেকে দু'হাত সরিয়ে প্যাডেলের স্পীড বাড়িয়ে দে৷ তারপর চুলের মধ্যে আঙুল চালাতে চালাতে, স্টাইল মেরে শিস দিতে দিতে চালা৷ দ্যাখ ঘ্যাম কাকে বলে"।

যদিও শিস দিতে পারতাম না (এখনও চেষ্টা করলে ওই পার্সেলমাউথ ফ্যাসফ্যাসের বেশি কিছু বেরোবে না)৷ কিন্তু আমার চেয়ে অনেক বড় সেই দাদা আমায় হিরো বলেছে৷ সে'টা কদর না করলে চলবে কেন?

তখন যদিও মাথার চুলে কদমছাঁটে মুড়িয়ে কাটা৷ সে চুলে আঙুল চালানো অসম্ভব৷ তবু৷ অমন মোটরবাইক চালাতে পারা, সিগারেটের প্যাকেট পকেটে নিয়ে ঘোদা দাদা আমায় হিরো বলেছে৷ সে সম্মান তো ফেলনা নয়৷ 

কাজেই হিরোর মত ঘ্যামপ্রকাশ করতে হল। ইন্সট্রাকশন কানে আসা মাত্রই প্যাডেলে জোর দিয়ে হ্যান্ডেল থেকে হাত সরিয়ে নিলাম৷ আর সে অবাধ্য সাইকেলও নির্দ্বিধায় আমায় সরিয়ে দিলে৷ বলা ভালো, উড়িয়ে দিলে৷ মুখ দিয়ে উত্তম মার্কা শিসের বদলে একটা মারাত্মক নবদ্বীপ মার্কা আর্তনাদ বেরোল; ' বাবা গো'! আমি দু'বার বাউন্স খেয়ে চিৎপাত। হাঁটুফাঁটু কনুইটনুই ছড়েটড়ে একাকার কাণ্ড৷ বাপের ভাগ্যি হাড়গোড় ভাঙেনি৷ ও'দিকে সেই ট্রেটার হারকিউলিস সাইকেলটাও ফ্ল্যাট আমার ঠ্যাঙের ওপর৷ 

দাদাও মাটিতে লুটোপুটি, তবে পেট চেপে, হাসির চোটে৷ সেই থেকে বাড়াবাড়ি রকমের হেল্পফুল দাদাদের দেখলে একটু সমঝে চলাটাই আমি সমীচীন বলে মনে করি৷

No comments: