Sunday, November 6, 2022

রামলীলা আর মেলা


নয়ডা স্টেডিয়াম লাগোয়া ময়দানে রামলীলার জবরদস্ত মেলা দেখে এলাম আজ৷ সে'খানে পৌঁছনো মাত্রই বেগুসরাইয়ে মেলা ঘোরার সুখস্মৃতি দিব্যি মনের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে গেল। হাইক্লাস মেলার সমস্ত রসদই ছিল। বিভিন্ন সাইজের নাগরদোলা, রকমারী খাবারদাবারের ঝলমলে সব স্টল, কচিকাঁচাদের হইহল্লা, আধবুড়োদের মাতব্বরি, খতরনাক মউত কা কুয়া, ছোটখাটো একটা সার্কাস, বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটানোর আয়োজন, জিলিপির দোকান; সাজসরঞ্জামের অভাব ছিলনা৷

যা বুঝলাম, নাগরদোলার টিকিটের দাম হুহু করে বেড়েছে৷ অবশ্য কোনও কিছুর দামই তো পড়তির দিকে নয়, নাগোরদোলাওলাদের আর কী দোষ। তবে খরচ বাড়লেও, তাতে মেলামুখো মানুষের আগ্রহ মিইয়ে যায়নি৷ আর যাই হোক, করোনায় দু'বছর দমবন্ধ করে বসে থাকার পর চলাফেরা জমায়েত হৈ-হুল্লোড় সবে শুরু হয়েছে যে।

গোড়াতেই বলেছি। এ মেলা খানিকটা বিহারের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে৷ সেই উস্কানি পূর্ণতা পেল লিট্টির দোকানে এসে৷ লিট্টিদাদা ব্যস্ততাও চোখে পড়ার মত৷ ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজনের মেলায় লিট্টির এই সমাদর দেখে খানিকটা গর্বও হল বটে৷ বিহারের প্রতি আন্তরিক টানটা রয়ে গেছে দেখছি।

আমাদের ও'দিকে মফস্বলের মেলায় রোলের দোকানের যেমন দাপট, এ'দিকে সে দাপট বোধ হয় টিক্কিচাট গোছের স্টলগুলোর৷ দিল্লী, নয়ডার দিকে মানুষের চাটভক্তি চোখে পড়ার মত৷ আর শত-ব্যস্ততার মধ্যেও এই তরুণ চাট-আর্টিস্ট পোজ দিতে বা খেজুরে গল্প জুড়তে পিছপা হচ্ছেন না৷ সে উষ্ণতায় মনে হয়; কোভিডকে বোধ হয় আমরা সত্যিই খানিকটা দমিয়ে দিতে পেরেছি৷ খানিকটা অন্তত।
মিষ্টিমুখের আয়োজনও ছিল, গরম গুলাবজামুনের দেখলাম বেশ কদর৷ মিঠেপানের দোকানও জুটে গেল৷ বেশিরভাগ দোকানই সামাল দিচ্ছে অল্পবয়সী ছেলেপিলের দল; মেলার ভ্যাগাবন্ড দোকান বলে তাদের 'ফোকাস অন সার্ভিস এক্সেলেন্স' ফিকে হয়ে যায়নি৷ আর আজকাল একটা মস্তসুবিধে; ছোটখাটো দোকানেও ইউপিআই বা ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে টাকা দেওয়া যাচ্ছে। কাজেই পকেটে তেমন টাকাপয়সা না থাকলেও দিব্যি টপাটপ গোলাপজাম সাফ করে দেওয়াই যায়।

খাওয়াদাওয়া-নাগরদোলা; এ'সব তো হল৷ এ'খানে এসে রামলীলার যাত্রাপালা (অবশ্য যাত্রা কথাটা এ'দিকে অচল) দেখবনা তা কী'করে হয়৷ ইয়াব্বড় মাঠ, এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত কালো মাথার গিজগিজ৷ আর পালার সে কী এনার্জি৷ ইমোশনের সে কী মার্ভেলাস টানাপোড়েন। আধমাইল দূরে দাঁড়িয়েও সে থ্রিল অনুভব করা যায়৷ আর জানা-প্লটে অভিনয় করেও যে এমন উত্তেজনা মাঠভর্তি দর্শকদের মধ্যিখানে ছড়িয়ে দেওয়া যায়; সে'টা ভেবে দু'একবার ব্রাভো বলতেই হয়। দূর থেকে দেখার একটা অসুবিধে হল খোকার হাইটের প্রবলেম। অগত্যা খোকাকে কাঁধে নিয়ে মিনিট পনেরো রামের বিয়ে দেখলাম৷ সীতার 'বিদাই'য়ের সময় জনকরাজার সে কী হৃদয়বিদারক বুক-চাপড়ানো কান্না; তা শুনে পাথুরে মানুষকেও নড়েচড়ে বসতেই হবে৷
শেষপাতে অত্যন্ত খারাপ (এবং পোড়া) তেলে ভাজা সুস্বাদু পাপড় চিবুতে চিবুতে বাড়ি ফিরলাম। অল ইজ ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল৷

No comments: