কে কী'ভাবে লীভ অ্যাপ্লিকেশন ব্যাপারটাকে ম্যানেজ করে জানি না৷ কিন্তু অফিসে ছুটি চাইতে যাওয়াটা আমার কাছে একটা অতি-বিচ্ছিরি রকমের স্ক্যান্ড্যাল৷ বলে রাখি, যারা ছুটির দাবী অবলীলায় পেশ করতে পারেন, তাদের আমি অত্যন্ত সমীহ করি (সমীহটা রীতিমতো আন্তরিক)৷ কিন্তু কী'ভাবে যেন আমার কাছে ব্যাপারটা ভজকট কেমিক্যাল ইকুয়েশন ব্যালেন্স করার চেয়েও জটিল বলে মনে হয়।
ছুটি চাওয়ার আগেই যে'ভয়টা ঘাড়ে চেপে বসে সে'টা হল মার্ফির মারের আতঙ্ক৷ প্রথমেই আমি নিজের মনের মধ্যে একটা কুরুক্ষেত্র গোছের সেটিং তৈরি করে ফেলি৷ আমি ছুটি চাইতে গেলেই নির্ঘাৎ কোনও জরুরী মিটিং রিভিউ চলে আসবে৷ আমার ছুটি নেওয়ার দিনেই কোনও বড়কর্তা মারকাটারি লেভেলের ছক কষে বসবেন৷ হাজার রকমের দুশ্চিন্তা দানা বাঁধে; এই বুঝি অফিসে যুদ্ধ লেগে গেল৷ এই বুঝি বস রথে রিল্যাক্স করে বসা কেষ্টার মত জ্ঞান দেবেন, "বেশি ন্যাকাপনার কাজ নেই ভাই অর্জুন, তুমি ইন্টারভ্যাল চাইলেও যুদ্ধ তোমায় ফুরসৎ দেবে না"। আর মার্ফিদাদার বদান্যতায় দেখি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের বিটকেল আশঙ্কাগুলো টপাটপ ফলেও যায়৷ অথচ আড়াই দিন দিয়ে ভেবে চলেছি লটারিতে আড়াই লাখা টাকা পাওয়ার কথা, সে'সব ফলবার কোনো চান্স নেই।
এরপর রয়েছে কনফিডেন্সের অভাব৷ যেন ক্যাসুয়াল লীভ নয়, বসের থেকে দেড়খানা কিডনি চাইছি৷ ও মেজাজ নিয়ে নব্বুইয়ের দশকে ভারতীয় ক্রিকেট টীম অস্ট্রেলিয়ার পিচে ব্যাটিং করতে নামত৷
আর ওই ঘ্যানঘ্যানানির চোটে যদি ছুটি আদায় করে নেওয়াও যায়, তা'হলেও মনের মধ্যে একটা গোলমেলে বোধ উদয় হয়৷ ছুটিটা নিয়েই ফেললাম? (যেন ছুটি নয়, গঞ্জিকা-সেবনের অনুমতি হাতিয়েছি)৷ একটা অজানা অপরাধবোধ তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়৷ আগবাড়িয়ে বাড়তি কাজ এবং অকাজ কাঁধে তুলে নেওয়া শুরু হয়; যেন ছুটিতে যাওয়ার আগে নিজেকে ড্যাংশপেটা না করলেই নয়৷ ছুটি (বিশেষত যদি লম্বা ছুটি হয়) যত এগিয়ে আসে, তত নার্ভ কাঁপতে থাকে; এই বুঝি সব গোল্লায় গেল৷
একসময় মনে হয়; ধ্যাত্তেরি ছাতারমাথা ছুটি৷ বয়ে গেছে৷ এর চেয়ে অফিসের রগড়ানি আর ট্র্যাফিকে পেষাই হওয়াই ভালো; নির্বাণ সে'খানেই৷ ছাপোষা চাকুরের ছুটির প্ল্যান মানে হল গিয়ে ওই গতজন্মের খুচরো পাপের হিসেবকিতেব।
No comments:
Post a Comment