- কী রে! ফোন ধরছিলিস না কেন?
- ধ..ধরলাম তো৷
- ছ'নম্বর কলে?
- ও, ওই একটু ব্যস্ত..।
- কাঁচকলা ব্যস্ত৷ কাওয়ার্ড কোথাকার!
- ক..কীসের কাওয়ার্ড বুকিন? দুম করে এদ্দিন পর ফোন করে এইসব..।
- বেশ করব বলব৷ যাক গে, কেমন আছিস?
- চমৎকার! ফ্যান্টাস্টিক৷
- কোথায় আছিস?
- কেন? কী মতলব?
- বল না বিলু! কোথায় আছিস? পড়তে গেছিস? নাকি ক্লাবে বসে ক্যারম পিটিয়ে সময় নষ্ট করছিস?
- সা..সামনে এগজ্যাম৷ পড়ার খুব চাপ।
- সেই তো বড়জোর টেনেটুনে পাশ করবি। চাপ নিয়ে হবেটা কী!
- আরে, শোন। এ'বারে ব্যাপারটা একটু আলাদা৷ জব্বর প্রিপারেশন৷ বাপ্পাদা বেশ কনফিডেন্ট, টপক্লাস নম্বর পাব৷ শুধু আর একটু..আর একটু খাটতে হবে..।
- শোন না বিলু..এই সদ্য পাড়ায় ঢুকলাম৷ বাড়িতে এসে হাত-পা ধোয়ার আগে তোকে ফোন করছি৷ দেখা করবি?
- ও মা। বাপ্পাদার বাড়ির দিকে যাচ্ছি তো! আজ স্পেশ্যাল ক্লাস৷
- তোর বাপ্পাদা একটা ফ্রড৷ আর তুই একটা গবেট৷ শোন না, আধঘণ্টা! রেলের মাঠের ও'দিকে ফুচকা খেয়েই চলে যাস৷ বাবার পকেট থেকে কড়কড়ে টাকা সরিয়েছি৷ চলে আয়৷
- বুকিন, হবে না রে।
- বিলু৷ এখনও রাগ করে আছিস? বাবার বদলি হল, তাই তো পাড়া ছেড়ে..। আর গোটা ব্যাপারটাই এত হুড়মুড় করে হল যে..।
- জানি তো। এতে আমি রাগ করব কেন? তুই গেছিস। বাপ্পাদা বলে তা'তে আমার ডিস্ট্র্যাকশন কমেছে, অতএব নির্ঘাৎ নম্বর বাড়বে৷
- বাপ্পাদা না হয় একটা হামবাগ ইডিয়ট৷ তুই এত ঢ্যাঁটা কবে থেকে হলি?
- আমি রাখছি৷ কোচিংয়ে ঢুকতে হবে৷
- খবরদার বিলু..।
- আসি।
- শোন আমরা কাল ভোরেই কলকাতা চলে যাব..বিলু শোন..।
- টাটা।
***
- এত্তটুকুন মেয়ে, তার কী মেজাজ। অসহ্য!
- হুঁ।
- আমার হামবাগ বললে? আমার হাঁটুর বয়সী মেয়ে? বলে কিনা বাপ্পা সমাদ্দার একটা ইডিয়ট! কী অডাসিটি দেখলি বিলু!
- হুঁ।
- কী রে..।
- বাপ্পাদা, এখন না৷
- আহ, জ্বালাচ্ছি না৷ আচ্ছা, চ্যুয়িং গাম খাবি রে?
- না।
- চপ? নিতাইদার দোকান খোলা আছে৷ খাবি?
- না।
- আদা লজেন্স খাবি?
- না৷
- এই ল্যাম্পপোস্টের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড়ই খাবি?
- হুঁ।
- বুকিন কিন্তু একটু ডিস্যাপয়েন্টেড হয়েছে।
- বয়ে গেছে।
- বয়ে গেলে ফুচকার অফারটা রিফিউজ করতিস না৷ রেলের মাঠের ধারে আজকাল বসন্ত দাঁড়াচ্ছে তো? আলুটা টেরিফিক মাখে ছেলেটা। দিব্যি গিয়ে বুকিনের বাপের পকেটা-কাটা পয়সায় দু'ডজন ফুচকা সাঁটিয়ে আসতে পারতিস৷ খামোখা দূর থেকে ব্যালকনিতে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলে একটা বিশ্রী মেলোড্রামা ক্রিয়েট করলি আর অপরচুনিটি মিস করলি।
- আচ্ছা বাপ্পাদা, এ'বারেও বোধ হয় অঙ্কে আটকে যাব, তাই না?
- আমি নাইনটি পার্সেন্ট শিওর৷ তোর যা অবস্থা দেখছি, তুই একশোয় তিরিশ পেলে আমি তোকে মোগলাই খাওয়াব৷ চল্লিশ পেলে পর পর তিনদিন বিরিয়ানি।
- বুকিন ঠিকই বলে। তুমি একটা ফ্রড, আর হামবাগ৷
- সে ঠিক বলতে পারে৷ তবে হাতের লক্ষ্মী টিউশনির ব্যাচকে ফিরিয়ে দিয়ে এ শর্মাই তোর পাশে দাঁড়িয়ে মশার কামড় হজম করছে।
- সরি৷
- বিলু।
- বুকিন বড় ভালো বাপ্পাদা।
- আপ্রাণ ডিনাই করতে চাই৷ পারছিনা৷
- আমি সে তুলনায় যাতা।
- এগেইন৷ খুব ইচ্ছে ছিল বলার যে বুকিন তোর নখের যোগ্য নয়৷ কিন্তু ওই। আজ বোধ হয় পূর্ণিমা, তিতিফিথিও ভালো আছে বোধ হয়। নির্জলা মিথ্যে বলতে ইচ্ছে করছে না৷
- বাপ্পাদা৷
- বল বিলু।
- আমায় পাশ করিয়ে দেবে প্লীজ? আর ফেল করতে ভালো লাগেনা মাইরি৷
- সামান্য একটু ফোকাস৷ কেমন? তা'লেই হবে৷ ম্যায় হুঁ না।
- মাইরি?
- মাইরি!
- চলো, তোমার বাড়ি যাই৷ আজ কোন চ্যাপ্টার?
- সবার আগে রেলের মাঠ৷ ফুচকায় ওয়ার্ম আপ, ইন দ্য অনার অফ মিস বুকিন। তারপর প্রজেক্ট "এ'বার অন্তত পাশ করিয়ে দাও মা"। অল রাইট জওয়ান?
- ইয়েস স্যার!
- লেটস গো!
No comments:
Post a Comment