Sunday, January 29, 2023

প্রেমে বাজারে



- প্রেমে পড়ে একসঙ্গে বাজার করতে যাওয়াটাকে নর্মালাইজ করা দরকার।
- সে কী মামা৷ প্রেমে পড়ে বাজার করতে বেরোব?
- একদম৷ সকাল সকাল৷ একজনের হাতে আমিষ আইটেম নেওয়ার নাইলনের ব্যাগ, অন্যজনের হাতে সবজির বওয়ার ঢাউস কাপড়ের থলে। হেলেদুলে বাজার করবি, দরদাম করবি, কানকো তুলে মাছ-বিচার করবি। সবই একসঙ্গে। আহা, ভাবতে ভাবতে আমার প্রাণেই গান বাজছে৷ "এ মন আমার হারিয়ে যায় কোনখানে, কেউ জানে না শুধুই আমার মন জানে..আজকে আমার হারিয়ে যাওয়ার দিইইইইইন"।
- কী সাংঘাতিক৷ ও'দিকে ছোটকা বলে প্রেমে পড়ে ময়দানে হাঁটবি, দেলখোশার টেবিলে প্রেমিকার আঙুলের ডগায় লেগে থাকা কাসুন্দির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবি৷ বাবুঘাটের জেটিতে একের পর এক লঞ্চ ছেড়ে দিয়ে বাদাম খাবি৷ এমন কত কী।
- তোর ছোটকা একটা গাছ-বলদ৷ শোন, ও'সব সাহিত্যের ফর্মুলায় প্রেম ন্যাতপ্যাতে হয়৷ সম্পর্কে স্ট্রেন্থ বিল্ড আপ করতে চাইলে দু'জনে মিলে সকালবেলা বাজার করতে যেতে হবে৷ একসঙ্গে, নিয়মিত৷
- আরে! বাজারের ধ্বস্তাধস্তিতে প্রেম হয় নাকি?
- প্রেম হল রিভার্স স্যুইং চাঁদু৷ বলের একটা দিক এবড়োখেবড়ো না করলেই নয়৷ আর তার জন্য সামান্য ধ্বস্তাধস্তি নেসেসারি৷
- কী'রকম? স্টেপ বাই স্টেপ শুনি।
- প্রথমত। হুশ করে বাজারে ঢুকে গেলেই তো হল না৷ আগে চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে, ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে ছক কষতে হবে৷ ফর্দ ঝালিয়ে নিতে হবে৷ লিভ টুগেদার সিচুয়েশন না হলে তো বাজার দু'বাড়িতে যাবে, দু'টো সেপারেট হেঁসেল। সে ক্ষেত্রে আরও এলাবোরেট প্ল্যানিং দরকার। কাজেই চা-বিস্কুট ব্রেনস্টর্মিংটা নেসেসারি।
- তারপর?
- তারপর স্যাট করে আমিষ বাজারে৷ সবার আগে মাছ৷ সে'টা কম্পলিকেটেড প্রসেস। খুবই পার্সোনাল একটা ব্যাপার; লাইক রিলিজিয়ন। আর প্রেমিক প্রেমিকা যদি মাছ কেনার প্রসেস রিকনসাইল করে নিতে পারে, তবে জানবি যদিদং হৃদয়ং ফিদয়ং চুকেবুকেই গেছে। ওই মাছ কেনাকাটার প্রসেসে মিলমিশ হয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে আলটিমেট হোলি ওয়েডলক। তার ওপরে আর কিছু নেই। মাছের পর মাংসের দোকানটা পেশেন্সের খেলা। ভালো মাংসের দোকানে ভিড় থাকবেই৷ কিন্তু সেই ভিড় তো প্রেমের ঠেলায় নলবনের লাভার্স স্যাংচুয়ারি বলে মনে হবে। জানবি, মাটন কেনার ব্যাপারে ওই ধৈর্যটাই হচ্ছে সবচেয়ে জরুরী এলিমেন্ট।
- ব্যাপারটা মন্দ নয় দেখছি।
- তুই আমার একমাত্র ভাগ্নে৷ তোকে মন্দ সাজেশন দিয়ে দিদিকে বিট্রে করতে যাব কেন? ছেলেবেলায় দিদি ঠাকুমার বয়াম থেকে আচার চুরি করে রোজ দুপুরে আমায় খাইয়েছে। সে ঋণ এ বান্দা কোনওদিনও ভুলবে না৷
- তা মাংস কেনার পর?
- তারপর প্রেমিক-প্রেমিকা যাবে সবুজের সন্ধানে। সবজি কিনবি। ময়দানের ঘাস-গাছপালার চেয়ে সেই সবুজ এক্সপোজার অনেক বেশি হাইকোয়ালিটির৷ তার সঙ্গে জুড়ে যাবে সবজি-দাদাদিদিদের সঙ্গে মাইডিয়ার লেনদেন। ভুলে যাসনা, ভালোবাসাটা একটা সোশ্যাল কন্ট্র্যাক্ট৷ সোসাইটি বাদ দিলেই প্রেম রিডিউস হয়ে যাবে ইন্টুপিন্টুতে। আর সে'টা মোটেও ডেজায়রেবল নয়।
- তাও ঠিক। নাহ্, বাজারে সঙ্গে প্রেমের একটা ভালোই যোগাযোগ আছে দেখছি।
- আলবার আছে। তাও তো এখনও ফাইনাল গদগদ লেভেলটা বলিইনি।
- আরও আছে?
- ও মা! আসল জিনিসটাই তো বাকি!
- সে'টা কী?
- বাজার ফেরতা মিষ্টির দোকানে কচুরি পিটস্টপ! কাঠের টেবিলে আলো করা এক স্টিলের প্লেটে ফুলকো কচুরি, একবাটি ডাল, আর শালপাতার বাটিতে চমচম। ও'দিকে মচমচে চেয়ার আলো করে গা ঘেঁষে বসা কপোত-কপোতী৷ তাদের পায়ের কাছে রাখা প্রেমের বাজার-ফসল। মুখে হাসি, প্রাণে 'এই পথ যদি না শেষ হয়'।
- তোফা! তোফা মামা! তোফা! এমন রোম্যান্টিক মেজাজ নিয়েও যে তুমি কী'ভাবে আজীবন ব্যাচেলর রয়ে গেলে।
- ট্যালেন্টের অভাব ছিল না বটে। তবে বেশির ভাগ ট্যালেন্টেড বাঙালির ক্ষেত্রেই যে'টা হয় আর কী। আলিস্যি। পিওর আলিস্যি৷ আলিস্যিতেই আটকে গেলাম৷ যাকগে। তুই তো অলস নোস। সে জন্যই মুনমুনের মত অমন ব্রিলিয়ান্ট মেয়ে তোকে পাত্তা দিচ্ছে।
- আহ মামা। যত্তসব।
- আরে শোন না৷ মামার কাছে লজ্জা করে লাভ নেই৷ শোন, এই আমি বলছি৷ মুনমুনকে ফোন কর, এখুনি কর। আর চট করে দেখা করতে বেরো। ক্যুইক৷ আর ইয়ে, বেরোনোর আগে রান্নাঘর থেকে বাজারের থলেগুলো নিয়ে বেরোস। প্রেমটাকে মজবুত করতে হবে তো!
- তোমার পেটে পেটে এই ছিল মামা?
- প্লীজ ভাগনে৷ হপ্তাখানেক হল আলস্য আর শীতের চোটে বাজার যাওয়া হচ্ছে না৷ এখন তুই আর তোর প্রেমই ভরসা। প্লীজ, যা একটু প্রেম করে আয়। নইলে আমার মত ব্যাচেলর হয়েই দিন কাটবে, এই বলে রাখলাম কিন্তু!

No comments: