রোল বিষয়ক শুচিবাই এককালে ছিল৷ এখন আর তেমন নেই৷ বিভিন্ন রকমের রোলের বিভিন্ন ধরণের আবেদন৷ মোটা পরোটায় সঠিক পরিমাণে পেঁয়াজকুচি আর লেবু-লঙ্কা ইঞ্জেক্ট করলেই যেমন ম্যাজিক ঘটে যায়, শসা-সস দেওয়া পাতলা রুটির রোলেরও প্রয়োজন আছে৷ চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় হাঁটতে বেরোলে অনেক গজিয়ে ওঠা রোলের দোকান জুটে যায়; অনেক ক্ষেত্রে সে'সব 'ঠেলা' সামলান এমন মানুষজন যারা রোল ভাজায় তেমন পটু নন। অন্যদিনগুলোয় হয়ত তাদের জীবিকা আলাদা, পুজোর ক'দিন নেহাতই সুযোগ বুঝে ভিড়ের মাঝে চাটু আর স্টোভ নিয়ে বসে পড়েছেন৷ পাড়াগাঁ বা মফস্বলি মেলাতেও তাঁদের দেখা পাওয়াই যায়৷ সেই ব্যাপারটাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না; মোটা দাগে কাটা স্যালাড আর সস্তা কুমড়ো সসের আশীর্বাদধন্য সে এগরোলেও ঘ্যাম আছে। সে ঘ্যাম আস্বাদন করতে জানতে হবে৷
পাটনায় দিব্যি ভালো রোল পেয়েছি৷ এমন কি বেগুসরাই কটিহার কিষনগঞ্জের মত বিহারি মফস্বলেও রকমারি স্বাদের রোল পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। বম্বের ফ্র্যাঙ্কি না কী এক ঝোল দেওয়া রোলকেও ধৈর্য ধরে অ্যাপ্রিসশিয়েট করার চেষ্টা করেছি৷
আবার দিল্লী-নয়ডার বেশ কয়েক জায়গায় ডিম পরোটার ভিতর পাঁচমেশালি স্যালাডভাজা আর রকমারি সস-চাটনি দেওয়া রোলকে "ধুর শালা" বলে দূরে না ঠেলে, হঠাৎ কানে আসা অচেনা সুরের মতই ধৈর্য ধরে সে স্বাদকে মনের মধ্যে জার্মিনেট করতে দিয়েছি৷ আহা, ও'ও তো রোল, ওরও তো একটা মান-ইজ্জত আছে৷
আসলে এই রোল ব্যাপারটার মধ্যে যে অসীম সারল্য, তাকে অস্বীকার করলে চলবে কেন? পরোটার টুকরো ছিঁড়ে, তা'তে একখণ্ড মামলেট আর পেঁয়াজ-লঙ্কা কুচি দিয়ে মুখে চালান করে বুঝেছি যে ও জিনিসের স্বাদ রোলের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অথচ কী ম্যাজিক দেখুন, পরোটার ওপর ডিম ছড়িয়ে ভাজা, তার মধ্যে পেঁয়াজ-লঙ্কাকুচি;- ইনপুট একই, শুধু পারমুটেশন আলাদা। তা'তেই কেল্লা ফতে। এ' ম্যাজিককে অবহেলা করব, অমন তালেবর যেন কোনওদিনই না হতে পারি৷
খোকাও এগরোলের ব্যাপারে লিবারাল হবে, তেমনটাই আশা৷ সে আশায় ভর দিয়েই আমরা রকমারি এগরোলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ি৷ এ'টা কী, ও'টা কেন; এমন বহুবিধ মামুলি অথচ হাইক্লাস আলোচনা শুরু হয়৷ এরপর হাতে আসে এগরোল৷ এগরোল হাতে এলেই মুখে হাসি আসে; এই ফর্মুলা পালটায় না৷ পাল্টাবে না। আমাদের বিশ্বাস সে'টাই।
No comments:
Post a Comment