Sunday, February 12, 2023

এঁটো-হাতের আড্ডা



রোববারের লাঞ্চটা ধীরেসুস্থে সেরে ফেলাই মঙ্গল, নবেন্দু সান্যালের ফোকাসটা সে'দিকেই৷ গুরুপাক হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই, বরং তা'তে খেতে বসে গল্পটা জমে ভালো৷ মাংসের হাড়ে, মাছের কাঁটায় কনসেনট্রেট করতে গিয়ে রোব্বারিয়ান আড্ডার ফ্লো নষ্ট-হয়না৷

তবে সে ক্ষেত্রে আলুভাজাটা দরকারি, সে'টা ব্যবহার হবে ডাল-ভাত সাফ হয়ে যাওয়ার পর৷ থালা-টেবিলের বাহার যেমনই হোক, নবেন্দুবাবু নিজের আলুভাজাকে সাতপুরনো অল্প তোবড়ানো স্টিলের বাটিতেই পছন্দ করেন৷ খানিকটা কন্ডিশনিং বোধ হয়; আলুভাজাকে বাহারি চীনামাটির প্লেটে দেখলেই মনটা সামান্য আড়ষ্ট হয়ে পড়ে৷ সর্বোপরি, নবেন্দুবাবু আলুগুলো খানিকটা মোটাদাগে কুচিয়ে নরম করে ভাজতে পছন্দ করেন; বিশেষত শেষ পাতে খাওয়ার জন্য৷

ডাল-ভাত সাপটে খেয়ে, চেয়ারে গা এলিয়ে, আলুভাজার বাটিটা টেনে নেওয়া৷ তারপর অতি ধীরেসুস্থে, একটা একটা আলুভাজার টুকরো টেনে নিয়ে, ছোটখাটো কামড়ে এগিয়ে যাওয়া৷ পাশে বসা মানুষজনের সঙ্গে গল্প জমে উঠবে৷ আঙুলে লেগে থাকা ডাল শুকিয়ে যত খটখটে হয়ে উঠবে, আড্ডা তত জমাট হবে। গোটা হপ্তা জিভ-পেটের দেখভাল হয় বটে, তবে মনের চুলে বিলি এই রোব্বারের লাঞ্চ শেষের এঁটো হাতের আড্ডায়৷

**

- নবেন্দুদা! কী হল, এ'বার উঠতে হবে তো।

- তিনটে বেজে গেছে নাকি পটা?

- সাড়ে তিনটে। ম্যানেজার চিল্লিয়ে উঠলো বলে৷ চারটে বাজলেই তো ভিড় বাড়বে আবার।

- আহ্৷ আড্ডার মেজাজটা সবে দানা বাঁধছিল রে..।

- চলো নবেন্দুদা, সামনের হপ্তায় ঘুরেই আসি দু'দিন। আমি আর তুমি৷ মায়াপুর বা পুরুলিয়া। সে'খানে দুপুরের খাওয়ার পর এঁটো হাতে দু'জনে বসে এক্কেরে সন্ধ্যে পর্যন্ত গল্প করব৷ এই মহাদেব হোটেলের রাঁধুনি হয়ে আর রোব্বারে খাওয়ার পাতের আড্ডা জমবে না৷

- চ' চ'। খদ্দেরদের হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে৷ সুকুমার একা হেঁসেল ম্যানেজ করতে পারবে না৷

No comments: