...উইথ রিগার্ডস
কমা
এন্টার
পঙ্কজ চ্যাটার্জী
ফুলস্টপ।
ফুলস্টপটা টাইপ করার সময়ে কীবোর্ডে একটা খটাস শব্দ হল। ইমেলটা লিখে একটা সবিশেষ বেশ তৃপ্তি অনুভব করলেন পঙ্কজ। যাক, একটা জবরদস্ত জবাব দেওয়া গেছে। সত্যি কথা বলতে কী, সপাটে জুতো মারা গেছে। চেয়ারে গা-এলিয়ে দিয়ে, ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে বেশ কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি। ফন্ট এরিয়াল, সাইজ বারো; এই কম্বিনেশনটা ওঁর বেশ পছন্দের। নিজের আধো-অন্ধকার ড্রয়িংরুমটাকে যেন আচমকা বেশ উজ্জ্বল মনে হল। নিজের মুখে লেগে থাকা অনাবিল হাসিটার ওজন যেন নিজেই যেন অনুভব করতে পারছিলেন। বহুদিন পর এ'রকম ধারালো একটা ইমেল লিখতে পেরে নিজেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল তাঁর।
একটা নজরুলগীতি গুনগুন করতে করতে গিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল বসিয়ে দিলেন পঙ্কজ। ইমেলটা পড়ে নিশ্চয়ই জর্জের মাথা ঘুরে যাবে। নির্ঘাত অথৈ জলে পড়তে হবে ব্যাটাকে। এই ব্যস্ত সিজনে পঙ্কজের রেজিগনেশন ব্যাপারটা নিশ্চয়ই গোটা কোম্পানিকে কাঁপিয়ে দেবে। কোম্পানির প্রতি পঙ্কজের একটা মায়া আছে বটে। দশ-এগারো বছরের চাকরী, সময়টা নেহাত ফেলনা নয়। তবে জর্জের প্রতি কোনও সমবেদনা নেই তাঁর। আর থাকবেই বা কী করে। অমন একটা হাড়বজ্জাত লোক বিপদে পড়লে সে বেশ খুশিই হবে। পান থেকে চুন খসলেই কী বিশ্রী ভাবে ইনসাল্ট করতে শুরু করে জর্জ; আরে, বস হয়েছে বলে মাথা কিনে নিয়েছে নাকি! অনেক হয়েছে। আর নয়।
এই ধারালো রেসিগনেশনটার ঠেলা সামলাক এবার জর্জ। এতদিনে তাঁকে বেশ উত্তম-মধ্যম দেওয়া গেছে। এই ইমেলের কথা জানাজানি হলে অফিসে বেশ একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে পঙ্কজ বেশ নিশ্চিত। তিনি এও জানেন যে আচমকা একজন ভালো 'সাপোর্ট' খোয়ানোর জন্য জর্জকে তাঁর ওপরওলাদের কাছে অনেক রকমের জবাবদিহিও করতে হবে। জর্জের অপ্রস্তুত মুখটা ভেবে পঙ্কজের তৃপ্তি বেশ কয়েকগুণ বেড়ে গেল।
নাহ্, আজ আর বেরসিক গ্রিনটি খেলে হবে না। পঙ্কজ ঠিক করলেন যে ভালো করে আদা দিয়ে এক কাপ চা করে সেলিব্রেট করতে হবে।
***
জর্জের ফোন। চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখলেন পঙ্কজ।
- পঙ্কজ, রিপোর্টের স্টেটাস কী?
- আর দিন দুয়েকের মধ্যেই...।
- ওই রিপোর্ট আমার চার ঘণ্টার মধ্যেই চাই।
- কিন্তু...।
- ও'সব কিন্তুটিন্তু অন্য কাউকে বোলো। কেমন? দিস মাস্ট বি ডান। নো ফালতু এক্সকিউজেস।
- ওকে জর্জ।
রেসিগনেশন ইমেলটাকে 'রেসিগনেশন লেটার্স' ফোল্ডারে সেভ করে রাখলেন পঙ্কজ। এই নিয়ে সে ফোল্ডারে গত দশ বছরে মোট বাইশখানা ড্রাফট জমা হল। মিচকি হেসে রিপোর্টে মন দিলেন পঙ্কজ।
***
"...আই হোপ ইউ উইল আন্ডারস্ট্যান্ড মাই হেল্পলেসনেস। মাঝেমধ্যে আমার সত্যিই বড় অপরাধবোধ হয়, কিন্তু আমিও নিরুপায় পঙ্কজ। যাক গে, চলো একদিন দু'জনে বসে বিয়ার খাই গিয়ে। ওহ, তুমি তো আবার সে রসে বঞ্চিত। তা'হলে কফিই হোক"।
হোয়্যাটস্যাপে একটা বিশাল মেসেজ টাইপ করে থমকালেন জর্জ। শেষ লাইনটা বারবার পড়লেন কিন্তু কিছুতেই মনে ধরছিল না। পঙ্কজ রিপোর্টটা চারঘণ্টার বদলে আড়াই ঘণ্টার মাথায় ইমেল করেছিল। নিখুঁত। ভীষণ ট্যালেন্টেড ছেলে, খুব খাটতে পারে। কিন্তু এই প্রোফাইলটা ঠিক ওঁর জন্য নয়। মাঝেমধ্যেই জর্জের মনে হয় যে পঙ্কজের উচিৎ আরও ভালো সুযোগের খোঁজ করা। কিন্তু বস হয়ে সে উপদেশ দেওয়াটা চলে না, কোম্পানির প্রতিও তাঁর একটা দায়িত্ব আছে।
বছর সাতেক পঙ্কজ তাঁর সঙ্গে কাজ করছে। ছেলেটার ভুলভ্রান্তি হয় বটে, তবুও জর্জের মনে হয় ছেলেটার পিঠ আর একটু চাপড়ে দিলে ভালো হত। এই ধরণের হোয়্যাটস্যাপ মেসেজ বা ইমেল আগেও অনেকবার টাইপ করেছেন জর্জ। কিন্তু অন্যবারের মত, এ'বারেও থমকে যেতে হল। সেই মেসেজ ডিলিট করে দিয়ে ফের পঙ্কজের পাঠানো রিপোর্টে মন দিলেন জর্জ। রিপোর্ট সময়মত এগিয়ে না দেওয়া গেলে তাঁর নিজের মাথাটাই আস্ত থাকবে না; এ কথা জর্জ বেশ জানেন।
No comments:
Post a Comment