Sunday, February 12, 2023

অফিসঝড়, ইয়ারদোস্ত ও উপেন্দ্রকিশোর



হপ্তা দুই ঝড়ের মত গেল৷ অফিসের কাজে বিস্তর ছোটাছুটি, শহর ছেড়ে কিছুদিন দেশের অন্যপ্রান্তে পড়ে থাকতে হল; 'অফিস টীম' সে'খানে তাঁবু খাটিয়ে পড়ে রইলে৷ চাকুরেদের জীবনে যা আকচারই হচ্ছে৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে সে প্রজেক্ট-প্রজেক্ট হাওয়া ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে পড়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব৷ গেরিলা সৈন্যদলের মত 'টাইমলাইন'রা ফস্কে যেতে চাইবে; চাকুরেদের দায় সে'সব মিসড-ডেডলাইনের ল্যান্ডমাইন পাশ কাটিয়ে কাজ হাসিল করা৷
এই হুড়মুড়ের মধ্যে একটা জবরদস্ত ব্যাপার; বিদেশবিভুঁইয়ে সহকর্মীদের মধ্যে ইয়ারদোস্ত খুঁজে পাওয়া৷ যে সহকর্মীর সঙ্গে বহুবছরের "ইয়েস, নো, ওকে, ফাইন, গুডমর্নিং, গুডনাইট" সম্পর্ক, পরিচিত কিউবিকলগুলোর বাইরে এসে সে মানুষটাই রাতবিরেতে "আর ভায়া, আমি আছি তো" বলে কাজের ভার লাঘব করে দিচ্ছে৷ যে 'সিনিয়র' বাবুটিকে চিরকালই চিরতা-পিসেমশাই বলে দেখে এসেছি, সেই হয়ত সবার নার্ভাসনেস কাটাতে তস্য খাজা চুটকি বলে নিজেই নিজের তলপেট খামচে বিকট হাসির সুরে গড়াগড়ি খেয়ে চলেছে৷ যে মানুষটাকে চিরকাল স্প্রেডশিট উইজার্ড ছাড়া অন্য কোনো ভাবে চিনিনি, সে হোটেল-রুমের সরঞ্জাম ব্যবহার করে যে কফি তৈরি করছে সে'টাকে অনায়াসে জাদুপানীয় বলা যেতে পারে। মোদ্দা কথা হল, অফিসের সাদাকালো টীমগুলোই যখম হাড়জ্বালানে প্রজেক্টের পাল্লায় অফিসের বাইরে গিয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে পাড়ার-ক্লাব-আলো-করা ইয়ারদোস্তদের ফ্লেভার এসে পড়ে৷ লিঙ্কডইন যাই বলুক, সে ফ্লেভারের গুণেই কেঠো কাজের জন্যও প্রাণপাত করা যায়, ক্লান্ত হয়েও শ্যামল মিত্র গুনগুন করা যায়৷
তা, যাবতীয় হুড়মুড় সামাল দিয়ে, হাড়গোড় খোলনলচে ড্রাইওয়াশ হয়ে; ঘরের ছেলেমেয়েদের ঘরে ফেরত আসা। এমন ইস্তিরি-চালানো লম্বা অফিস-ট্যুরের পর বাড়ি ফিরে দরকার মন-মেজাজে মালিশ আর আত্মায় পালিশ৷ তার জন্য রয়েছেন উপেনজ্যেঠু, শনিবার সকালটা ভদ্রলোকের কোচিংয়ে প্রাণায়াম করে কেটেছে। দুপুরটা কাটবে টেস্টম্যাচ দেখে৷ শনিবার সন্ধ্যের মধ্যেই নিজেকে মনডে-ফিট ঘোষণা করতে পারব; এমনটাই আশা।

No comments: