Monday, March 20, 2023

প্রফেসর দত্তর শেষের লেখা

একটা পেল্লায় ক্লাসরুম, দেওয়ালের রঙ হালকা নীল। সারি-সারি বেঞ্চি, সমস্তই ফাঁকা। ক্লাসঘরের উত্তরের দেওয়ালে একটা ঢাউস কাচের জানালা, বিকেলের নরম রোদে ঝলমলে। সে জানালার উলটো দিকের দেওয়ালে একটা পেল্লায় ব্ল্যাকবোর্ড। তাঁর সামনে একটা সাদামাটা কাঠের টেবিল-চেয়ার। সে চেয়ারে বসে এক বৃদ্ধ, এক মাথা কাঁচাপাকা চুল, পাতলা ফ্রেমের চশমা। বয়স অন্তত সত্তর-বাহাত্তর। পরনে সাদা হাফশার্ট, কালো ট্রাউজার। এক মনে টেবিলের ওপর ঝুঁকে ডায়রিতে কিছু লিখে চলেছেন। শব্দ বলতে ক্লাসরুমের দেওয়ালঘড়ির টিকটিক আর বৃদ্ধের কলম-চালানোর খসখস।

তাঁর সামনে যে দাঁড়িয়ে, তাঁর পেটাই চেহারা, ইস্পাত-কঠিন মুখ। কিন্তু চোখে সামান্য অস্বস্তি, খানিকটা চঞ্চল বোধ হয়। সে ভদ্রলোকের গায়ে সামরিক পোশাক। 

দম-বন্ধকরা মিনিট দশেকের মাথায় দাঁড়ানো ভদ্রলোক সামান্য ঝুঁকে বললেন, "প্রফেসর দত্ত। সময় হয়ে এলো"।

"মেজর তেওয়ারি। হাতে এখনও সাড়ে পাঁচ মিনিট রয়েছে"। 

"তাই বলছিলাম...আপনি কারুর সঙ্গে কথা বলতে চান না প্রফেসর"?

"তা তো চাইই"। 

"আমার কাছে ফোন আছে। আপনি চাইলে..."। 

"একজনের সঙ্গে কথা বলে কী হবে মেজর? তার চেয়ে বরং এই ডায়েরিতেই লিখে রেখেছি শেষ কথাগুলো। ফোনে তো সেই একদু'জনকে ফোন বলা। এই ভালো। শেষ কিছু কথা তো, অনেকের কাছে পৌঁছক। এই ভালো"। 

"আপনার এ ডায়রির লেখাগুলো তো কারুর কাছে পৌঁছতে দেওয়া হবে না"।

"তবু। আপনার দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা পড়বেন। আপনাদের হাইকম্যান্ড পড়বে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে। তা'তেই হবে"।

"আপনার পরিবার? বন্ধুবান্ধব"?

"তাদের আর নতুন করে কিছুই বলার নেই"। 

"ডায়রিতে নিশ্চয়ই বিপ্লব সম্বন্ধে নিজের মতামত লিখে রাখছেন প্রফেসর"?

"আমি ভারি মধ্যমেধার মানুষ মেজর তেওয়ারি। যা ঠিক মনে হয়, সে'টার হয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারি। যা ভুল মনে হয়, নিশ্চিন্তে সে'টার প্রতিবাদ করতে পারি। তবে কী, নিজের মতামতগুলোর সম্বন্ধে নিজেই এতটা ধন্ধে থাকি যে ঠিক-ভুল মাঝেমধ্যেই গুলিয়ে যায়। কাজেই বিপ্লব নিয়ে কিছু লিখে যাওয়ার দুঃসাহস আমার নেই"। 

"এ'বারে আর সত্যিই সময় নেই, প্রফেসর"।

"অলরাইট মেজর। চলুন, যাওয়া যাক"। 

"যাওয়ার তো কোথাও নেই প্রফেসর"। 

"ওহ্‌। সেই ভালো। এই ভালো। ক্লাসরুম ছাড়া আমার আর ঠাঁই হবেই বা কোথায়।

"আই অ্যাম সরি প্রফেসর"।

"মেজর তেওয়ারি। আমার ডায়রিটা আপনাকেই গছিয়ে যাই তা'হলে"।

"জানতে খুব আগ্রহ হচ্ছে...এত মন দিয়ে কী লিখে গেলেন"।

"এখনও তো মিনিট দুয়েক আছে। পড়ে দেখুন না। নেহাতই একটা অণুগল্প"। 

ঘড়ি দেখে মাথা নাড়লেন মেজর তেওয়ারি। প্রফেসরের হাত থেকে ডায়রিটা নিয়ে পেজমার্কটা সরিয়ে পড়তে শুরু করলেন মেজর।

পড়তে পড়তে, ক্রমশ গলা শুকিয়ে এলো ভদ্রলোকের। আরে! এ তো প্রফেসর দত্ত আর মেজর তেওয়ারির গল্প।

** প্রফেসর দত্তের ডায়রি থেকে**

একটা পেল্লায় ক্লাসরুম, দেওয়ালের রঙ হালকা নীল। সারি-সারি বেঞ্চি, সমস্তই ফাঁকা। ক্লাসঘরের উত্তরের দেওয়ালে একটা ঢাউস কাচের জানালা, বিকেলের নরম রোদে ঝলমলে। সে জানালার উলটো দিকের দেওয়ালে একটা পেল্লায় ব্ল্যাকবোর্ড। তাঁর সামনে একটা সাদামাটা কাঠের টেবিল-চেয়ার। সে চেয়ারে বসে এক বৃদ্ধ, এক মাথা কাঁচাপাকা চুল, পাতলা ফ্রেমের চশমা। বয়স অন্তত সত্তর-বাহাত্তর। পরনে সাদা হাফশার্ট, কালো ট্রাউজার। এক মনে টেবিলের ওপর ঝুঁকে ডায়রিতে কিছু লিখে চলেছেন। শব্দ বলতে ক্লাসরুমের দেওয়ালঘড়ির টিকটিক আর বৃদ্ধের কলম-চালানোর খসখস। 

তাঁর সামনে যে দাঁড়িয়ে, তাঁর পেটাই চেহারা, ইস্পাত-কঠিন মুখ। কিন্তু চোখে সামান্য অস্বস্তি, খানিকটা চঞ্চল বোধ হয়। সে ভদ্রলোকের গায়ে সামরিক পোশাক। 
এমন দম-বন্ধকরা মিনিট দশেকের মাথায় দাঁড়ানো ভদ্রলোক সামান্য ঝুঁকে বললেন, "প্রফেসর দত্ত। সময় হয়ে এলো"।

"মেজর তেওয়ারি। হাতে এখনও সাড়ে পাঁচ মিনিট রয়েছে"। 

"তাই বলছিলাম...আপনি কারুর সঙ্গে কথা বলতে চান না প্রফেসর"?

"তা তো চাইই"। 

"আমার কাছে ফোন আছে। আপনি চাইলে..."। 

"একজনের সঙ্গে কথা বলে কী হবে মেজর? তার চেয়ে বরং এই ডায়েরিতেই লিখে রেখেছি শেষ কথাগুলো। ফোনে তো সেই একদু'জনকে ফোন বলা। এই ভালো। শেষ কিছু কথা তো, অনেকের কাছে পৌঁছক। এই ভালো"। 

"আপনার এ ডায়রির লেখাগুলো তো কারুর কাছে পৌঁছতে দেওয়া হবে না"।

"তবু। আপনার দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা পড়বেন। আপনাদের হাইকম্যান্ড পড়বে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে। তা'তেই হবে"।

"আপনার পরিবার? বন্ধুবান্ধব"?

"তাদের আর নতুন করে কিছুই বলার নেই"। 

"ডায়রিতে নিশ্চয়ই বিপ্লব সম্বন্ধে নিজের মতামত লিখে রাখছেন প্রফেসর"?

"আমি ভারি মধ্যমেধার মানুষ মেজর তেওয়ারি। যা ঠিক মনে হয়, সে'টার হয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারি। যা ভুল মনে হয়, নিশ্চিন্তে সে'টার প্রতিবাদ করতে পারি। তবে কী, নিজের মতামতগুলোর সম্বন্ধে নিজেই এতটা ধন্ধে থাকি যে ঠিক-ভুল মাঝেমধ্যেই গুলিয়ে যায়। কাজেই বিপ্লব নিয়ে কিছু লিখে যাওয়ার দুঃসাহস আমার নেই"। 

"এ'বারে আর সত্যিই সময় নেই, প্রফেসর"।

"অলরাইট মেজর। চলুন, যাওয়া যাক"। 

"যাওয়ার তো কোথাও নেই প্রফেসর"। 

"ওহ্‌। সেই ভালো। এই ভালো। ক্লাসরুম ছাড়া আমার আর ঠাঁই হবেই বা কোথায়।

"আই অ্যাম সরি প্রফেসর"।

"মেজর তেওয়ারি। আমার ডায়রিটা আপনাকেই গছিয়ে যাই তা'হলে"।

"জানতে খুব আগ্রহ হচ্ছে...এত মন দিয়ে কী লিখে গেলেন"।

"এখনও তো মিনিট দুয়েক আছে। পড়ে দেখুন না। নেহাতই একটা অণুগল্প"। 

ঘড়ি দেখে মাথা নাড়লেন মেজর তেওয়ারি। প্রফেসরের হাত থেকে ডায়রিটা নিয়ে পেজমার্কটা সরিয়ে পড়তে শুরু করলেন মেজর। আরে! এ তো প্রফেসর দত্ত আর মেজর তেওয়ারির গল্প। শুধু গল্পটা পড়তে শুরু করার আগে মেজর তেওয়ারি যে'টা টের পাননি, সে'টা হল প্রফেসর দত্তর কলমের কালিতে ছিল সাঙ্ঘাতিক বিষ। প্রফেসর খেয়াল করেছিলেন যে মেজর তেওয়ারির ডান হাতের আঙুলের তর্জনীতে সামান্য চোট রয়েছে, ডায়রির কালি ছোঁয়া সে'খানে লেগেছে। আর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার।

***

ডায়েরি থেকে উদ্ভ্রান্তের মত মুখ তুললেন মেজর তেওয়ারি। টেবিলে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন প্রফেসর দত্ত, কলমের নিবটা তাঁর মুখে পোরা।

চিৎকার করতে চেয়েও পারলেন না মেজর তেওয়ারি, চারপাশটা ঝাপসা হয়ে আসছিল। মুহূর্তের মধ্যেই কাচের জানালার ওপর থেকে পড়ন্ত বিকেলের রোদটুকু কেউ যেন হুট করে শুষে নিলো।

Sunday, March 12, 2023

সেদ্ধয় সিদ্ধ



- বুঝলে প্রশান্ত, বুকের ধড়ফড়টা কিছুতেই কমছে না।
- জামাইবাবু, আপনি বড্ড নেদু হয়ে পড়ছেন!
- তাই কি? ওভাররিয়্যাক্ট করছি বলছ?
- আবার কী। ভাইটালস সব ঠিকঠাক। রিপোর্টটিপোর্ট যাই এসেছে সব খাপেখাপ। কখন থেকে বলছি চলুন দু'বোর্ড ক্যারম খেলি। অথচ আপনি সেই থেকে বুক ধড়ফড় নিয়ে পড়ে আছেন।
- জেনুইন ধড়ফড় ভাই প্রশান্ত। আরে, নাড়ি ধরে কি সব ধড়ফড় ডিকোড করতে পারবে? ডাক্তারি কি অতটাই মুখস্থবিদ্যের জিনিস? আরে, মনের আনচানটাকে ইগনোর করলে তো চলবে না।
- নাহ্‌! আপনার বয়স হচ্ছে।
- সেভেন্টি ফোর। এক্কেবারে কচি তো আর নই।
- আপনার মধ্যে রীতিমত ভীমরতি জেনারেট হচ্ছে।
- আহ্‌, কদ্দিন পর ভীমরতি কথাটা শুনলাম ভাই। তোমার দিদি থাকতে কথায় কথায় শুনতে হত বটে।
- দিদিরও বলিহারি। আপনাকে মারাত্মক প্যাম্পার করে মার্কেটে একা ছেড়ে চলে গেল। আর এখন প্রতি হপ্তায় দু'বার আমি আপনার গুপি-দেওয়া-বুক-ধড়ফড়ের খবর শুনে ছুটে আসি। আমার প্র্যাকটিস-ট্র্যাকটিস তো লাটে উঠবে এ'বার।
- কথায় কথায় প্র্যাকটিস দেখিও না প্রশান্ত। প্র্যাকটিস দেখিও না। আরে, হিপোক্রেটিক ওথ নিয়ে পথে নেমেছ। ডাকলে আসবে না মানেটা কী!
- আপনাকে কতবার বলেছি জামাইবাবু। আমি বলেছি, সুমি বারবার বলেছে। এ'বারে চলুন আমাদের নাকতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকবেন। আমাদেরও গার্জেন হল, আপনার বুক ধড়ফড়েরও একটা পার্মানেন্ট হিল্লে হল।
- তুমি শালা একটা ইউজলেস। বাজে কথায় সময় নষ্ট না করে এই আনচানটার কিছু একটা করো ভাই। একটা স্ট্রেঞ্জ ধরণের নার্ভাসনেস বুঝলে। এই মনে হচ্ছে পায়চারি করি, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে বিছানায় শুয়ে সিলিঙের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে খানিকটা রিলীফ পাওয়া যাবে। এই মনে হচ্ছে বই পড়ি, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে যাই ক্লাবে গিয়ে আড্ডা মারি। এই মনে হচ্ছে চা বানাই, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে আমার দরকার আসলে আলু-ভাজা। এই মনে হচ্ছে...।
- থাক থাক...আর সিম্পটম সাজাতে হবে না। আপনি এ'বার আর একটা বিয়ে করুন।
- তুমি কি ডাক্তারি টুকে পাশ দিয়েছ প্রশান্ত?
- উফ। মহাঝ্যামেলা।
- ট্রিটমেন্ট বাতলাও।
- আপনি বললে শুনবেন?
- তুমি ডাক্তার। যা প্রেসক্রাইব করবে, লেটার অ্যান্ড স্পিরিটে ফলো করব।
- আপনার দরকার মেডিটেশন।
- তুমি দূর হও প্রশান্ত। আর পারলে অ্যালোপ্যাথি ছেড়ে দাও।
- এই মাইরি। শুনুন না জামাইবাবু। জপতপ করতে বলছি না। হাইক্লাস টেকনিক, বেনিফিট গ্যারেন্টেড।
- এরপর আবার শেকড়বাকড় ধারণ করতে বলবে না তো?
- আরে না। শুনুন না।
- শুনি।
- আজ দুপুরের মেনুতে কী রেখেছেন?
- মুর্গি-কষা। পাবদার ঝাল। সজনের চচ্চড়ি। বেগুন ভাজা। নারকোল দেওয়া মুগের ডাল। রিভার্স অর্ডারে খাবো, অফ কোর্স।
- না না, এ'সব আনচান-ধড়ফড়ের দিনে ও'সব গুরুপাক সইবে না।
- মেডিটেশনটা কী?
- সবার আগে মেনু পাল্টাতে হবে। আর সে'খানেই খেল।
- হেঁয়ালি না করে স্পষ্ট করে বলো।
- শুনুন। সবার আগে - আলু, ডিম, ডাল; সেদ্ধ করে নেওয়া যাক। কেমন?
- শুনছি। এরপর?
- এরপরেই হল আসল থেরাপি। মিউজিক প্লেয়ারে মনের মত গান চালিয়ে...।
- রফি।
- রফি? রফি। অবশ্যই রফি। চালিয়ে দিন। লো ভল্যুমে। কেমন? তারপর, সর্ষের তেল, লঙ্কাকুচি আর হোয়াটএভার-ফ্লোটস-ইওর-বোট মালমসলা মিশিয়ে, মাখতে শুরু করুন। দায়সারা মাখা নয়। অনুভব করতে হবে জামাইবাবু। আলু বা ডিম ভাঙলেন, আঙুলের ডগায় যে নরম স্পর্শ; সে'টাকে গোটা শরীর দিয়ে অ্যাবসর্ব করে নিতে হবে। এইবারে কনসেন্ট্রেশনকে পুরোপুরি এনে ফেলুন চটকানিতে। আলু বা ডিম নরম হয়ে আসবে, ডুমোডুমো ভাব হারিয়ে গিয়ে মোলায়েম টেক্সচার আপনার হাতে ছড়িয়ে পড়বে। প্রসেসটা কল্পনা করুন...। চোখ বুজে ব্যাপারটাকে ফীল করুন...।
- উম...টোটালি কল্পনা করতে পারছি। আলুমাখা নরম তুলতুলে হয়ে আসছে, ডিমসেদ্ধর আলট্রা-স্মুদ পেস্ট আমার হাতে...একদম ফীল করতে পারছি ভাই প্রশান্ত...।
- ব্রাভো জামাইবাবু। এ'টাই তো চাই। এইবারে কনসেন্ট্রেশনটা ম্যাক্সিমাম পর্যায়ে পৌঁছবে। আপনার সম্পূর্ণ ফোকাস আলু-ডিম চটকানিতে, কান থেকে রফি হারিয়ে গেছেন; আপনার ফোকাস এতটাই ইন্টেন্স।
- নিজেকে লামা মনে হচ্ছে যেন।
- লাভলি। এরপর একইভাবে মনঃসংযোগ করুন ডালসেদ্ধ, ঘি, সর্ষেরতেল দিয়ে ভাত মাখতে। একদম পার্ফেক্টলি স্মুদ আউটপুট না হওয়া পর্যন্ত আপনি থামছেন না। আপনাকে রোখা যাচ্ছে না, জামাইবাবু। আপনাকে রোখা যাবে না!
- আজ মুর্গি, পাবদা, সজনে ক্যান্সেল। শুধুই থেরাপি।
- এ'টাই তো চাই। চলুন রান্নাঘরে।
- তোমার এলেম আছে প্রশান্ত।
- ফিজ হিসেবে মুর্গি আর পাবদাটা নিজের পাতে টেনে নিলে আশা করি খুব একটা মাইন্ড করবেন না?

পাঠক গুলজার

আমরা যারা 'ভোর্যেশাস রীডার' নই, অথচ বই ভালোবাসি; তারা যেন ঘাবড়ে না যাই। বই দেখলেই হয়ত আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি না, কিন্তু আলতো মলাট-স্পর্শকে ধুরছাই-কুছভিনহি বলে যারা নস্যাৎ করে থাকেন, তাদের মতামতকে তোল্লাই দিয়ে নিজেদের ক্রমাগত ইমোশনাল-ঝ্যাঁটাপেটা করার কোনও মানেই হয়না। আড়াই বছর আগে কেনা বই এখনও পড়া হয়নি, সে'টাকে শুধুই ব্যর্থতা বলে যারা দেখলেন, তাঁরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটপুটটুকুতেই নিজেদের আটকে রাখলেন। রোম্যান্স কোশেন্টকে বুঝে উঠতে পারলেন না। সব প্রেমই যদি টপাটপ ছাদনাতলায় গিয়ে পড়ত, তা'হলে কি গজলের দুনিয়াটা এমন রঙিন হত?
আড়াই বছর আগে কেনা একটা বই, যে'টা আজও পড়ে ওঠা হয়নি; সে'টাকে একটা প্রবল সম্ভাবনার উৎস হিসেবে দেখতে হবে। বইয়ের তাকে বোকাসোকা হয়ে পড়ে আছে; ফুলদানির বা আমাজনের ফাঁকা বাক্সের আড়ালে ঢাকা পড়ছে, ঠিক আছে। কিন্তু দেখবেন; স্যাট করে যে'কোনও একদিন নামিয়েই ফ্যাট করে পড়া শুরু করে দেব। এই যে একটা দুর্দান্ত "পুজো আসছে পুজো আসছে" ব্যাপার, সে'টাকে উড়িয়ে দিলেই হবে নাকি। হঠাৎ একদিন বইয়ের তাক থেকে পুরনো না-পড়া বই নামিয়ে আনা হবে। ধুলো ঝেড়ে মলাটে হাত বুলনো হবে, ওজনটা অনুভব করা হবে, পাতাগুলো ফরফরিয়ে দেখা হবে খানিকক্ষণ। তবেই না আসল খেল্‌। আর তারপর সে বই হাতে খাটে বা সোফায় গা এলিয়ে বসা। বইটা কেনার মুহূর্তটা মনে করে একটা তৃপ্তির হাসি জেনারেট করার চেষ্টা করা। বছর-খানেক আগে কেনা বই হলে সে বইয়ের ছাপা দাম দেখে অবশ্যই একবার মনে হবে, "উফ, ইনফ্লেশন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে রে ভাই"। এরপর, সেই বইয়ের প্রথম প্যারাগ্রাফের (বা প্রথম লাইনের) প্রতিটা শব্দ, তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা। সাদা কাগজে কালো ছাপা অক্ষর, এক এক পিস মুক্তো। দেখুন, বইয়ের ভালো-মন্দ, তা পরে আসে। সে শুচিবাইয়ের আগে আসে অন্য আনন্দ; একটা ছাপা শব্দ থেকে অন্য ছাপা শব্দে গড়িয়ে যাওয়ার। সে এক হাইক্লাস থেরাপি। ছেলেবেলা থেকেই দেখেছি; সিলেবাসে নেই এমন যে কোনও বই পড়ার মধ্যেই একটা গোবেচারা বিপ্লব রয়েছে। বইটা কেমন ভাবে পড়লাম, কতটা মন দিয়ে পড়লাম, কতটা যত্ন করে আত্মস্থ করলাম; সে'টা বাছবিচার করতে চেয়ে কেউ কোশ্চেনপেপার ধরিয়ে দেবে না। এ'টাই আমার কাছে বরাবর একটা ম্যাজিকের মত মনে হত। মার্কশিটের বাইরেও একটা পড়াশোনার জগত তা'হলে আছে যে'খানে আমার মত এলেবেলে মানুষও মাস্তানি করতে পারে। সেই জাদু-জগতের বইগুলোকে আমি গোগ্রাসে গিলব না চেটেচেটে ধীরেসুস্থে খাবো; সে'টা আমিই ঠিক করে নেব। তেমনটাই হওয়া দরকার।
তা, হয়ত সেই নতুন বইয়ের প্রথম কয়েক লাইন পড়ার পরই মনের মধ্যে একটা তৃপ্তির ঝিম লেগে গেল। তারপর বাড়ির মধ্যে যে'খানেই ঘুরঘুর করছি, হাতে বইটা ঝুলছে। পড়ছি না, কিন্তু হাতছাড়া করছি না। সোফার পাশের টেবিলে, বিছানায় বালিশের পাশে, কাজের টেবিলে ল্যাপটপের গায়ে; বই-বাবাজীটি আছেন। কিলো কিলো পড়লেই হল নাকি, রসিয়ে বইটাকে ভোগ করতে হবে তো। এ'ভাবে হয়ত এক হপ্তায় বইটা বড়জোর বিশ-তিরিশ পাতা এগোল। তদ্দিনে বইটার সঙ্গে একটা মাইডিয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। সম্পর্কটা বেশ, ইয়ে, শারীরিক। লেখকের গুণ, সাহিত্য-মান; সে'সব নিয়ে পরে ভাবলেও হবে। কিন্তু প্রথম ক'দিনে বইটার গন্ধ, স্পর্শ, জ্যাকেটের ঘষটানি; সমস্ত চেনা হয়ে গেছে; সেই চেনার দাম লাখ-টাকা। যা হোক, হপ্তা-খানেক পর হয়ত সে বই চালান হবে অফিসের ব্যাগে। লাঞ্চের সময় টিফিন কৌটোর পাশাপাশি টেবিল আলো করে বেরিয়ে আসবে সেই বই। ফের এগোবে দু'পাতা-তিন পাতা করে। সে দু'পাতার অক্সিজেনেই অফিস গুলজার হয়ে উঠবে। ডেলিপ্যাসেঞ্জারির ক্ষেত্রে হয়ত সে বই বেরিয়ে আসবে বাসে-ট্রেনে-ট্রামে, মোবাইল ফোন আর ইয়ার-ফোনের সঙ্গে কম্পিটিশনে নামবে। পড়া হয়ত কয়েক লাইনের বেশি এগোবে না। কিন্তু সেই প্রতিটি লাইন পড়ার দামই ভরিতে মাপতে হবে।
এই'ভাবে। চিকনের মিহি সেলাই যে'ভাবে শম্বুক-গতিতে এগোয়, সে'ভাবে আমাদের মত অলস পাঠকের এ পাতা থেকে ও'পাতায় এগিয়ে যাওয়া। পৌষের শীতে শুরু হওয়া বই যখন জ্যৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে শেষ পরিচ্ছেদে এসে দাঁড়াবে, পাঠক ততক্ষণে শিল্পীতে পরিণত হয়েছেন। তিনদিন বুক চিতিয়ে মিনিমাম স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করে দলকে টেস্ট জেতানোর আনন্দ তখন তাঁর হাতের মুঠোয়।
কাজেই আমরা যারা ঢিমেতালে বই পড়ি, তাঁদের পাঠককুলের কলঙ্ক বলে পাশ কাটিয়ে দেবেন না। কেমন?

দোল সাফাই

খুব ছোটবেলার দোল খেলার স্মৃতির চেয়েও জমজমাট স্মৃতি হল ঘষেমেজে গায়ে-মুখের রঙ তোলা৷ বেশিরভাগ দোলের ছুটি মোটের ওপর মামারবাড়ির পাড়াতেই কাটত৷ দুপুরবেলা রঙে চুবনি খেয়ে বাড়িতে ফিরে বড়মামার কাছে সারেন্ডার করতে হত৷ আর বড়মামার তত্ত্বাবধানে হত রঙ-সাফাই৷ দু'টো জরুরি ব্যাপার মনের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
এক, মুখে যে বিশ্রী এবং ঢ্যাঁটা রঙের পরত পড়ত, সে'টা সাধারণ সাবানে যাওয়ার নয়৷ তখন তো আর অর্গানিক রঙ বাজারে আসেনি, সে'সময় পারলে মুখে প্লাস্টার করে দেওয়াটাই ফ্যাশনের পর্যায় ছিল। সেই রঙকে কাবু করতে বড়মামা একটা ন্যাকড়া প্যারাশুট নারকোল তেলে ভিজিয়ে মুখ ঘষত। সে এক হাইক্লাস ফেসিয়াল, বড়মামার হাতের গুণে সে ঘষটানিও মনে হত মখমলে মালিশ৷ অসীম ধৈর্যে সে বাঁদুরে রঙ নরম হয়ে আসত।
দুই, দু'রাউন্ড শ্যাম্পুর আগে মাথার চুলে এক রাউন্ড সার্ফ-ট্রীটমেন্ট পড়ত। এক খাবলা কাপড় কাচার সাবানগুঁড়ো দিয়ে মাথার চুলের দলাইমলাই। সে'টা ধুয়ে ফেলে ক্লিনিক অল্কক্লিয়ারের দু'টো পাউচ পরপর ফায়্যার করা হত৷ তা'তে আবির রঙ গায়েব, চুল মারাত্মক ফুরফুরে। অমন দরদী হেয়ারস্পা কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রীট ঘেঁষা বাহারে সানফ্লাওয়ার সেলুনেও দেখিনি।
আজ ডাভ সাবান শ্যাম্পু দিয়ে গা-মাথা বিস্তর রগড়ে দেখলাম, নেকু অর্গানিক আবিরের কলারও তারা টেনে ধরতে পারছে না৷ ধুস্।

শোক

- মামাবাবু, বসুন না। এই'এখানে। আপনি বসুন, আমি চা-বিস্কুট দিতে বলে দিচ্ছি।
- আরে, বেঞ্চি সাফ করতে হবে না।
- আরে, ধুলো দেখেছেন? নদীর ওপারেই মিল, ওই দেখুন। ওই যে চিমনি। এই পুঁছলাম তো, মিনিট দশ পরেই দেখবেন ফের কালো ধুলোর আস্তরণ পড়ে গেছে। আপনার প্যান্টট্যান্ট এক্কেবারে যেত আর কী...। নিন, বসুন। ও ঘোঁটনদা, মামাবাবুর জন্য এক কাপ চা, দু'টো বিস্কুট। ইয়ে মামাবাবু, চায়ে চিনি থাকবে?
- দুধ-চিনি দু'টোই বাদ।
- ঘোঁটনদা, কালো চা দিও। আর বিস্কুটটাও তা'লে নোনতা। জলদি জলদি।
- তোমার নাম তো বাপন, তাই না?
- হ্যাঁ। ভালো নাম অভিজিৎ সাহা। আপনি আমায় বাপনই বলবেন।
- ও'দিকের ব্যাপারটা কী বুঝছ, কিছু একটা সমস্যা হয়েছে শুনলাম...।
- ও নিয়ে আপনি ভাববেন না।
- তবু, নীলুর বডিটাকে নিয়ে কোনও...।
- তেমন কিছু নয়। ওর আধার কার্ড নেই। অন্যান্য কোনও আইডেন্টিটি কার্ডও খুঁজে পাইনি। আমি নিজে ওর বাসায় গিয়ে জিনিসপত্র উলটেপালটে দেখেছি। তাই কর্পোরেশনের লোক বলছে বডি চুল্লিতে তোলা যাবে না।
- এ তো সমস্যাই বটে। আচ্ছা, কিছু পয়সাকড়ি দিয়ে যদি...মানে আমিই দেব...।
- ও মা, না না। তার দরকার হবে না আশা করি। পল্টনের মেজপিসের থানায় চেনাজানা আছে। পল্টন আর কিছু ছেলেপিলে মিলে তাই থানায় গেছে। ও'খান থেকে লিখিয়ে আনলেই হয়ে যাবে। এই আর আধ ঘণ্টার মধ্যে চলে আসবে। ও নিয়ে আপনি ভাববেন না।
- নীলুর খবরটা...।
- ওর শরীরটা একেবারেই ভেঙে পড়েছিল মামাবাবু। গতমাসেও একবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। ওই আমরা সকলে মিলেই...। এ'বারে আর সে সুযোগ দিল না।
- আসলে এত ইনডিসিপ্লিন, নেশা-ভাঙ; এত অত্যাচার আর কদ্দিন সইবে।
- হ্যাঁ, ছেলেটা বড্ড বেশিই...।
- তোমরা তো ওর বন্ধু..পারতে না ওকে আর একটু সামলে রাখতে?
- এই যে মামা, চা। আসুন।
- তুমি খাবে না?
- আমি এই খানিক আগেই খেলাম। আপনি খান না মামা। আপনি খান।
- ছেলেটা এইভাবে...।
- আপনি ও নিয়ে ভেবে কষ্ট পাবেন, স্বাভাবিক। কিন্তু যা ভুগছিল, আমি বন্ধু হয়েই বলছি, মুক্তি পেল।
- কোনও খবরাখবরও তো পেতাম না...। একটা মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলাম এক কালে, সে'টাও ফেলে দিয়েছিল। নাকি বেচে খেয়েছিল কে জানে!
- আপনি ওকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন, তাই না মামাবাবু?
- সে বখে যেতে পারে। সে গোল্লায় যেতে পারে। মদো-মাতাল হয়ে নিজেকে নষ্ট করতে পারে। কিন্তু আমি তাকে ভুলে থাকি কী করে। আমার দিদির রক্ত ওর শরীরে বইছে। তবে কী জানো, বাপন! আমি অন্যায় করেছি ওকে নিয়মিত মাসহারা পাঠিয়ে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, অন্যায় করেছি। সে'সব টাকা দিয়ে চোলাই খেত নিশ্চয়ই। কে জানে, আমিই হয়ত খুন করলাম ওকে।
- অমন ভাবে ভাববেন না মামাবাবু। অমন ভাববেন না। আপনি কর্তব্য করেছেন, তা নিয়ে আর ভাবার কী আছে...এই মরেছে। বৃষ্টি না আসে।
- আসুক। হাড় জুড়োক। বেঁচে থাকতে তো সে কম হাড় জ্বালায়নি। দিদিকে কম জ্বালাযন্ত্রণা দেয়নি। লোফারগিরি, মাস্তানি, মদ, ড্রাগস; কী বাদ রেখেছিল সে?
- সবই তো জানেন মামাবাবু। আজকের দিনটা বরং থাক...।
- কেন থাকবে? আমার অমন ফুলের মত দিদি। কী কষ্ট পেয়েই না মরলে। কতবার বলেছি, দিদি, তুই আমার বম্বের ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকবি চ'। কিন্তু ছেলেকে ছেড়ে যেতে চাইল না। নিজের মাকে খেলে, এখন নিজেও...।
- মামাবাবু।
- সরি। সরি বাপন। আসলে, আমি একটু...।
- বুঝি মামাবাবু। বুঝি। আপনার সঙ্গে নীলুর রক্তের সম্পর্ক। আপনি ওকে চিনবেন না তো কে চিনবে।
- চিনি। হাড়ে হাড়ে চিনি। আর চিনি বলেই এত যন্ত্রণা, রাগ, দুঃখ, অভিমান। ওইটুকুন ছেলে এ বয়সে চলে গেল। দিদির শেষ চিহ্নটুকু...। এই তোমায় বলে রাখলাম বাপন, আমার আজ যত দুঃখ-কান্না; সবই দিদির কথা ভেবে। আদারওয়াইজ, নীলুর ওপর কোনও সিমপ্যাথি আমার অন্তত নেই। কারণ আমি ওকে আর ওর বদভ্যাসগুলোকে দিব্যি চিনি।
- মামাবাবু, চা'টা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে যে।
- ও হ্যাঁ।
- চা'টা খেয়ে নিন। তারপর আপনাকে না হয় একবার দেখা করিয়ে আনি।
- দেখা? সে তো আর নেই। শুধু তো ওই বডি...।
- মামাবাবু, নীলু ছেলেটা সুবিধের ছিল না, এ কথা সত্যি। পাড়ার সবাই তা জানে। আমিও জানি। আর আপনি কাছের মানুষ, আপনি তো চিনবেনই। নিজের লিভার পচিয়ে দেওয়া মাতাল। বখাটে। তবে...আপনার টাকায় কেনা মদ ওর পেট পচিয়ে দেয়নি। সে' দুঃখ বা গ্লানি আপনাকে বয়ে বেড়াতে হবে না।
- তুমি কী'ভাবে জানো সে কথা?
- আপনি জানেন মামাবাবু, গত বছর পাঁচেক দিনের বেশিরভাগ সময় সে এই শ্মশানের কালীমন্দিরেই পড়ে থাকত।
- ভক্তিভাব জেগেছিল নাকি?
- তা ঠিক নয়। মন্দিরের ফাইফরমাশ খাটত। বিনিপয়সায় খাওয়ারদাওয়ার পেত। প্রসাদের কল্যাণে নেশা-ভাঙের সামগ্রীরও অভাব ঘটত না। আমরা, ওঁর বখে যাওয়া ইয়ারদোস্তরা কতবার বলেছি, আপনার পাঠানো টাকায় একদিন আমাদের ভালোমন্দ খাওয়াতে। সে কী বলত জানেন? আমার মামার আয় ছাত্র-পড়িয়ে, সে বড় পুণ্যের টাকা। সে টাকা নাকি সে জলে দিতে পারবে না।
- আমার পাঠানো টাকা সে খরচ করত না বলছ?
- সমস্তটাই খরচ করত। মন্দিরের পিছনে কয়েক বিঘে জমি রুখাশুখা হয়ে পড়েছিল কত বছর। সে জমি কুপিয়ে, লালন করে নরম করেছে আমাদের নীলু। একা হাতে, ধীরেসুস্থে, অনেক বছর খেটে। আপনার টাকা দিয়ে সে মাসের পর মাস গাছ কিনেছে, সার কিনেছে, আর কিনেছে বাগান করার কত সামগ্রী। মন্দিরের পিছনটা এখন সবুজে-সবুজ; কৃষ্ণচূড়া, নিম, বাঁদরলাঠি। পাশাপাশি আম, পেঁপে, পেয়ারা, জামরুলও আছে। আমরা সবাই সে বাগানকে বলি মামাবাবুর বাগান। কত পাখির আখড়া এখন সে'টা। দেখতে যাবেন মামাবাবু? চলুন না।
- যাব? চলো, যাই। দেখি ব্যাটা কী করে রেখেছে। কী জানো বাপন, ছেলেটাকে চিরকাল নিখুঁত ভাবে চিনেই গেলাম আমরা সবাই; আত্মীয়স্বজনরা যেমন সহজেই দূর থেকে চিনে রাখে আর কী। কিন্তু রাস্কেলটার জীবনে উঁকি মারার কৌতূহল কারুর কোনোদিন হয়নি। অসুবিধেটা হল...True love is not about decoding a person. It is all about staying curious। যাকগে। চলো, মামাবাবুর বাগান দেখে আসি।

শ্যামল সাহার পাগলামো

- এই, আপনি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করতে এসেছেন?
- সে কী ডাক্তারবাবু, আপনি পাড়ার একজন রেস্পেক্টেড মানুষ৷ আপনার সঙ্গে ঠাট্টা করব? তা'ছাড়া আমি এমন একটা ট্র্যাজিক সমস্যার কথা বললাম, সে'টাকে এ'ভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন কেন৷
- দেখুন শ্যামলবাবু৷ আপনার দরকার ওঝার৷ সে এসে ঝ্যাঁটাপেটা করলে তবে আপনার মাথা থেকে এই বিটকেল ভূতটা নামবে৷
- আপনার ধারণা আমি ভুলভাল বকছি?
- ধারণা? না৷ আমি শ্যিওর৷
- আমায় অমনভাবে ঠেলে সরিয়ে দেবেন না প্লীজ৷
- আমি আর একবার গুছিয়ে বলি? আপনি বেড়ালের ভাষা বুঝতে পারছেন, এ'টাই আপনার রোগ, তাই তো?
- স্পষ্ট৷ ক'দিন ধরেই হচ্ছে৷ এই যেমন স্বপন জোয়াদ্দারের খয়েরি রঙের বেড়ালটা কাল রাত্রে আমায় "মিচকে শয়তান" বলে টোন কাটলে৷ বিশ্বাস করুন, আমি স্পষ্ট শুনেছি৷ আবার ওই মোড়ের মাথায় যে বেঢপ সাইজের হুলোটা ঘুরঘুর করে, সে রীতিমত সদালাপী৷ আজ সকালে আমি রতনের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম৷ আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুধোলে, "ক'টা বাজে কাকা"? আমি স্যাট করে বললাম "পৌনে আট"৷ বলেই বুক কেঁপে উঠল৷ বেড়ালের সঙ্গে গপ্প জুড়েছি? কিন্তু উত্তর দিয়ে ফেলেছি, তাই দু'চারটে কথা বলতেই হল৷ ওই, ওয়েদার, পলিটিক্স, ইত্যাদি৷ যাওয়ার আগে সে হুলো বলে গেল "রতনমামা বড্ড কেয়ারলেস৷ আমি যে দুধ চেটে গেলাম, সে'টা দিয়ে চা বানিয়ে খদ্দেরদের গেলাচ্ছে"। কী ডেঞ্জারাস ভাবুন ডাক্তারবাবু৷
- শ্যামলবাবু৷ এই, একটু চুপ করবেন? আপনার ফীজ আমার চাই না৷ এ'বারে আসুন দেখি৷
- ডাক্তারবাবু...।
- প্লীজ৷ আর না শ্যামলবাবু৷ আসুন এ'বারে।
- বেশ৷
***
"বেশ করেছেন ডাক্তারবাবু। শ্যামল সাহার পাগলামোটা দিনদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে"।
মাথা নাড়লেন ডাক্তার, " শ্যামলবাবু সজ্জন মানুষ। তার এমন দূর্দশা, ইশ্...ভাবা যায় না"।
বলেই চমকে উঠতে হল৷ আরে, শ্যামলবাবু চেম্বার থেকে বেরোনোর পর তো আর কেউ ঢোকেনি ঘরে। চোখে ঝিমটি লেগে গেছিল কি? কণ্ঠস্বরটা কেমন যেন...।
"পরেরবার শ্যামল সাহা এলে সোজা বিদেয় করে দেবেন৷ ব্যাটা গুলবাজ"।
এ'বারে সোজা হয়ে বসলেন ডাক্তার৷ কে? কে কথা বলছে? কাউকে দেখা যাচ্ছে না অথচ..।
ঠিক তখুনি, একটা সাদার-ওপর-খয়েরি-ছোপ বেড়াল তড়াং করে ডাক্তারের টেবিলে উঠে পড়ল৷ ডাক্তার অবাক হয়ে শুনলেন, বেড়ালটা অবিকল শ্যামলবাবুর কণ্ঠস্বরে বলে উঠলে, "ওই শ্যামলকে বেশি পাত্তা না দিয়ে ভালোই করেছেন৷ ব্যাটা নুইসেন্স ক্রিয়েট করতে ওস্তাদ"৷ এই বলেই সে বেড়ালটা একলাফে প্রেশার মাপার যন্ত্র উলটে দিয়ে উত্তর দিকের জানালা দিয়ে গায়েব হয় গেল৷
আধঘণ্টা মত গুম হয়ে বসে থাকার পর ব্যাপারটা ডাক্তারবাবুর মগজে একটু স্পষ্ট হল৷ চট করে শ্যামলবাবুর মোবাইলে ফোন করলেন তিনি৷
- শ্যামলবাবু! আপনি কোথায়?
- এই বাড়িতে ঢুকলাম খানিকক্ষণ আগে৷ ইন ফ্যাক্ট আপনাকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম..।
- শুনুন। আপনার বেড়ালের কথা শোনার সমস্যাটা আচমকা কেটে গেছে, তাই না ? এ'টুকু সময়ের মধ্যেই..।
- কী আশ্চর্য! সে'টা বলতেই তো ফোন করার তাল করছিলাম৷ বাড়ি ঢোকার মুখে একটা মেনিকে দেখতে পেয়ে দরাজ গলায় শুধোলাম, "কেমন আছো মা"?৷ আমি ভাবলাম স্কুল-কলেজ কেমন চলছে সে'খবর দেবে৷ ও মা, সে বিড়ালটি বললে, " ম্যাঁও, মিঁউউউ"৷ কী আশ্চর্য ব্যাপার বলুন দেখি।

মনোজবাবুর লেখালিখি

- কী রে, খুব ব্যস্ত নাকি?
- আরে, মনোজ। বাঁচালি ভাই। কদ্দিন ধরে ভাবছি কবে তুই আসবি। তা, একটা ফোন করে এলি না কেন? ইদানীং শ্যামলাল একটা নতুন ধরণের ডিমের চপ ভাজা শুরু করেছে। তবে সে'টার জন্য আগে থেকে কিমা আর কুচোচিংড়ি আনিয়ে রাখা দরকার।
- সে'সব গুরুপাক পরে হবে'খন। এখন আগে ওঁকে দু'কাপ চা করতে বল দেখি দেবু। জরুরী কথা আছে।
- দাঁড়া, এ'সময়টা শ্যামলাল একটা সিরিয়াল দেখে। এখন ওকে ডিস্টার্ব করাটা সমীচীন হবে না। দু'মিনিট বস, আমি চা বসিয়ে দিচ্ছি।
- না না, তুই বস বরং। আমার তো আর তাড়াহুড়ো নেই। জরুরী কথাটা আগে সেরে নিই।
- নভেলটা শেষ করেছিস মনে হচ্ছে?
- আজ সকালেই শেষ চ্যাপ্টারটা লিখলাম। জানিস তো আমায়, তোকে না শোনানো পর্যন্ত সোয়াস্তি পাচ্ছিলাম না।
- এক্সাইটিং। উফ, কদ্দিন পর গল্প পড়বি বলে এলি ভাই। আজ কিন্তু জমিয়ে আড্ডা হবে।
- আলবাত। তোর ফিডব্যাক ছাড়া তো আর প্রকাশকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না।
- আমি আর সাহিত্যের কীই বা বুঝি। তবে তোর লেখার প্রতি আমার আগ্রহটা বরাবরই পার্সোনাল। বইটই তো নেহাত কম পড়ি না। তোর লেখা আমায় যে'ভাবে ইনফ্লুয়েন্স করে, মুগ্ধ করে...।
- দেখিস। আবার হেগিওগ্রাফি লিখতে বসিস না যেন।
- আরে কী যে বলিস। ইউ ডিজার্ভ ইট। তা'ছাড়া পশ্চিমবাংলায় তোর ভক্তদের সংখ্যা যে'ভাবে এক্সপোনেনশিয়ালি বাড়ছে, সে'টাই প্রমাণ করে যে তোর লেখার ডেপ্থ ঠিক কতটা। আর খামোখা প্রশংসা করার লোক আমি নই, জানিস তো ভাই। তোর জন্য আমার সত্যিই গর্ব হয়। আফটার অল, ক্লাসমেট বলে কথা।
- সে জন্যই তো তোর কাছে বারবার ছুটে আসি দেবু। হ্যাঁ, লিখেটিখে আজকাল একটু সুনাম হয়েছে বটে, তবে কী জানিস...।
- কী ব্যাপার বল তো। তোকে একটু ডিস্টার্বড মনে হচ্ছে?
- আমার বইপত্তর নিয়ে কাগজপত্রে আজকাল বেশ লেখালিখি হচ্ছে। প্রকাশকদের খাতির দিনদিন বাড়ছে। ভিড়ের মধ্যে মানুষজন চিনতে পেরে অটোগ্রাফের খাতা এগিয়ে দিচ্ছে।
- প্রতিপত্তি বাড়ছে, তাই ডিস্টার্বড?
- সত্যি কথা বলতে কী দেবু, সে'সব আমার ভালোই লাগে। লাইমলাইটে থাকতে কে না চায়...কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশংসাগুলো বেশ ফাঁপা। বিশেষত যার যেচে আলাপ করে, গায়ে পড়ে লেখার প্রশংসা করে, তাঁদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ লেখা না পড়ে কথা বলে। আর লেখক হিসেবে সেই দেখনাই ব্যাপারগুলো বড় গায়ে লাগে।
- বলিস কী...।
- বোঝা যায় রে। একটু খুঁচিয়ে দিলেই ফাঁপা প্রশংসা, আর লোকদেখানো পিঠচাপড়ানি ধরে ফেলা যায়। লেখক হিসেবে, আমি অন্তত পড়তে পারি।
- বেশ তিতিবিরক্ত মনে হচ্ছে তোকে মনোজ।
- বিরক্ত হওয়াটা তো অস্বাভাবিক নয়৷ লোকে এক'দু'পাতা পড়ে গোটা নভেলের রিভিউ লিখে ফেলছে। সাহিত্যসভায় ভারিক্কি চাল ফলিয়ে ভুলভাল রেফারেন্স দিয়ে বাহবা জানাচ্ছে। অনেকে অল্পবিস্তর হয়ত পড়েওছে, অথচ সে'টা নিয়ে বাতেলা ঝাড়বে চোদ্দগুণ৷ বুক বাজিয়ে তাঁরা এই উপন্যাসের নায়কের সঙ্গে অন্য উপন্যাসের ভিলেনকে গুলিয়ে ফেলে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলবে। তুই বল দেবু, গায়ে পড়ে বেফালতু প্রশংসা না করে কথা বলা যায়না নাকি? আমার লেখা পড়তেই হবে এমন দিব্যি কে দিয়েছে?
- তোর মাথাটা দেখছি আগুন হয়ে আছে।
- এই ধর, আজ সকালে অনিল দত্তর সঙ্গে দেখা হল..।
- দিবানিশি পত্রিকার সেই সম্পাদক?
- হ্যাঁ, ওই৷ সে কী বলে জানিস? আমার মরুভূমি উপন্যাসে আমি পরিবেশের রুক্ষতাকে যে' মুন্সিয়ানার সঙ্গে ব্যাবহার করেছি; নায়কের মনের অসহায় অবস্থাকে তুলে ধরতে তার নাকি কোনও জবাব নেই৷ ভাবা যায়! আরে বাবা, মরুভূমির প্লটটা যে আমি চেরাপুঞ্জির ব্যাকগ্রাউন্ডে লিখেছি আর সে'টায় মূল চরিত্র যে সুচরিতা নামের একজন নারী, সে'টা ভদ্রলোক জানেন না কারণ বইটা তিনি পড়েনইনি৷ গাজোয়ারি দু'টো কথা না বললে সম্পাদকে পেটের ভাত হজম হয় কী করে।
- হা হা হা হা হা হা...।
- তুই হাসছিস দেবু?
- হাসব না? মরুভূমির ব্যাপারে তোকে জ্ঞান দিলে অথচ সে ব্যাটা সুচরিতার কথা জানে না!
- তোর এ'টা শুনে গা জ্বলছে না?
- তুই বেশি পাত্তা দিচ্ছিস মনোজ৷ বেনোজল থাকবেই৷ ফোকাস অন দ্য পসিটিভস।
- অসুবিধে হচ্ছে এরাই মেজরিটি৷ সে'দিন কফিহাউসে একজন মহিলা যেচে আলাপ করতে এলে। নিজের পরিচয় দিলে, পেল্লায় কলেজের প্রফেসর৷ স্মার্ট, কথাবার্তায় ধার আছে। সবে যখন মনে হচ্ছে এর সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালোই হল; অমনি সে বললে আমার লেখা অনিমিখ সান্যাল চরিত্রটা নাকি তাকে সাংঘাতিক ইনফ্লুয়েন্স করেছে৷ ও'রকম রোম্যান্টিক ক্যারেক্টার নাকি শেষ সে পড়েছে বিভূতিভূষণের লেখায়৷
- অনিমিখ?
- অনিমিখের কথা তুই শুনিসনি, পড়িসনি৷ স্বাভাবিক। কারণ ও'নামে কোনও চরিত্র নিয়ে কোনোদিন কিছু আমি লিখিনি৷ ভদ্রমহিলা শুভময় লাহার একটা উপন্যাসের সঙ্গে আমার লেখা গুলিয়ে ফেলেছেন৷ ওই ভদ্রলোকের লেখা তো বোধ হয় তুই পড়িসটড়িস না, তাই না?
- না, ভীষণ প্রিটেনশাস৷ সহ্য হয় না৷ তবে ভদ্রমহিলাকে বিশেষ দোষ দিতে মন সরছে না রে মনোজ৷ না হয় তোর মধ্যে সুপুরুষ লেখকের সঙ্গে আলাপ জমাতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে গল্প-চরিত্র গুলিয়ে ফেলেছে৷ কিন্তু ও'সব রাগ পুষে রাখাটা কিন্তু তোর বাড়াবাড়ি৷
- না রে দেবু। গোটা ব্যাপারটা তুই যতই লঘু করে দেখতে চাস, ইস্যুটা সিরিয়াস৷ লেখক কি শুধুই নামধাম টাকাপয়সা চায় রে? জেনুইন অ্যাপ্রিশিয়েশন আর ক্রিটিসিজম কি পৃথিবী থেকে উবে গেছে?
- আমার মত কয়েকজন এখনও পড়ে আছি ভাই। সে'টার কি কোনও মূল্যই নেই? নাকি অচেনা মানুষের প্রশংসা না পেলে লেখকদের চলে না।
- সরি দেবু, সত্যিই। তোর মত পাঠক-বন্ধু এখনও আছে বলে আমার মত ওঁচা লেখকও লিখে তৃপ্তি পায়।
- ওই, শ্যামলালের সিরিয়াল শেষ হল। দাঁড়া, ওকে বরং আজ কফি বানাতে বলি। সঙ্গে পকোড়া।
- হোক। হোক।
***
নভেলের পাণ্ডুলিপি পড়ে, শ্যামলালের বানানো মুর্গির ঝোল আর এঁচোড়ের তরকারি দিয়ে ডিনার সেরে, দেবুকে টাটা বলে যখন মনোজবাবু ট্যাক্সিতে বসলেন তখন রাত সোয়া এগারোটা। শ্যামলালের রান্নায় সত্যিই জাদু আছে, ও ভাতেভাত রাঁধলেও সে'টা অমৃত মনে হয়। মনোজবাবুর মনের মধ্যে একটা বিশ্রী অন্ধকার জমাট বেঁধেছিল বটে, চমৎকার ডিনারের গুণে সে অন্ধকার খানিকটা কেটেছে। তবে মনের এই খচখচ সহজে যাওয়ার নয়। যে দেবুকে লেখা পড়িয়ে তাঁর এত আনন্দ, সে যে খুব একটা মন দিয়ে তাঁর গল্প-উপন্যাস পড়ে না বা শোনে না; এ'টা ভাবতেই কেমন বুকের ভিতরটা ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
দেবু সত্যিই জানে না যে তাঁর মরুভূমি উপন্যাসের মূল চরিত্র সুজয় দত্ত নামের একজন রিটায়ার্ড ইতিহাসের প্রফেসর আর সে উপন্যাসের পটভূমি হল রাজস্থান। আর অনিমিখ সান্যাল যে মনোজবাবুরই কলমে তৈরি হওয়া লেখক, এবং তাঁর "ভোরবেলা" নভেলের নায়ক; সে'টাও দেবু হয় জানেনই না বা বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছেন। ভাবলে অবাক লাগে যে এ'দুটো উপন্যাস নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে গেছেন মনোজবাবু। আর প্রত্যেকবারই মনে হয়েছে যে দেবু মুগ্ধ হয়ে সে'সব কথা শুনেছে। আজ ব্যাপারটা স্পষ্ট হল অবশ্য, দেবুর মাথা নাড়া ও স্মিত হাসির মধ্যে আস্কারা আছে, ধৈর্য নেই। তবে সে দুঃখ পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। শ্যামলালের রান্নার টানটা এড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অমন যাদু-রান্নার তুলনায় তাঁর লেখা ছেঁদো উপন্যাস-টুপন্যাস তো নেহাতই এলেবেলে ব্যাপার।