নিজেকে সবসময় বুঝিয়ে চলেছে যে মনের মধ্যে সবসময় ওই লুচি-চাই লুচি-চাই ভাবটাকে জিইয়ে রাখতে হবে। লুচি-চাই লুচি-চাই ভেবে যাওয়া মানে অবশ্য গাণ্ডেপিণ্ডে লুচি গিলে যাওয়া নয়। শরীর -স্বাস্থ্য বলে একটা ব্যাপার আছে তো; সমুদ্র ভালো লাগে বলেই তো আর রোজ বিকেলে স্বর্গদ্বারের সমুদ্রে গোড়ালি ডুবিয়ে গামছা কাচতে বসব না। তাছাড়া বয়স ব্যাপারটা উড়িয়ে দেওয়ার মত নয়, হজম-শক্তি আর আগের মত নেই। পোড়া তেলে কাউকে চপ-ফুলুরি ভাজতে দেখতেই গলার কাছটা কেমন জ্বালাজ্বালা করে। এ'সব রূঢ় সত্যকে তো পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তবে ওই লুচি-চাই লুচি-চাই ভাবটা হচ্ছে মনের তরতাজা থাকার লক্ষণ। সে'টাকে টিকিয়ে রাখাটা আমার দায়িত্ব।
ছোটবেলায় শরীর কেমন যাচাই করতে হলেই দাদু বলত, "জিভ বের করো দেখি ভাই"। জিভের রঙ বিচার করে দাদু অ্যানালাইজ করতেন শরীরস্বাস্থ্য কেমন আছে। সে'ভাবেই, মনের হাল-হকিকত বুঝতে হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করি, "কী ব্রাদার, লুচি হবে নাকি খান কয়েক"? যদি মনের মধ্যে "একটু লুচি পেলে বড় ভালো হত" গোছের আনচান শুরু হয়ে যায়, তা'হলে বুঝতে হবে সমস্ত ঠিক আছে, সূর্য-চন্দ্র ঠিকঠাক ওঠানামা করছে, মানুষ এখনও কবিতা লিখছে, শ্যামল মিত্রের গান এখনও বুকে হুহু জেনারেট করছে, ইয়ারদোস্তরা এখনও টিকে আছে, প্রেমের চিঠি লেখার ক্ষমতা এখনও খতম হয়ে যায়নি, বাজে চুটকিতে এখনও হো-হো করে হাসতে হাসতে খাট থেকে গড়িয়ে পড়তে পারি। কিন্তু, যদি কখনও মনে হয়; নাহ্, এই অবেলায় লুচির কোনও দরকার নেই। তা'হলে বুঝতে হবে সর্বনাশ। লুচি-না-চাওয়া-ভ্যাপসা মন-মেজাজ দিয়ে এ দুনিয়ায় কোনও কাজের কাজ করা সম্ভব নয়। যে মন লুচি সম্বন্ধে নিঃস্পৃহ, তাকে ভরসা করলে ঠকতেই হবে যে। কাজেই, যদ্দিন মনের মধ্যে লুচি-চাই লুচি-চাই ভাব, তদ্দিনই জ্যান্ত।
No comments:
Post a Comment