- মেসোমশাই!
- কে? অভ্র? কখন এলি?
- সাতটা বাজে, আলো জ্বালোনি কেন?
- দ্যাখো দেখি৷ জানালা-টানালা বন্ধ করে কী গুমোট অবস্থা। তোমার শরীর ভালো হবেটা কী করে।
- একটু চা বসাবি বাবা?
- তোমার বলার আগেই বসিয়ে দিয়েছি৷ আজ বিপুলদার দোকান থেকে শিঙাড়া এনেছি৷ চায়ের সঙ্গে দিচ্ছি, দাঁড়াও।
- শিঙাড়া? সইবে রে? আজকাল তো ভাতেভাত খেলেও অম্বল হচ্ছে।
- দ্যাখো মেসো! বয়স তো কম হল না৷ ফ্যামিলি বলতে ফক্কা, কেউ কোত্থাও নেই। তাই অম্বল-টম্বল নিয়ে বেশি ভেবো না৷ যে'কদিন ভাগ্যে আছে, মনের সুখে ভোগ করে যাও।
- বলছিস? দে' তা'হলে। বুঝলি অভ্র, শিঙাড়ার সঙ্গে যদি দু'টো দানাদার হত..।
- দ্যাখো বুড়োর শখ৷ আজ চা দিয়েই সেরে ফেলো। পরের দিন বরং..আচ্ছা মেসো, সামনের শনিবার সিনেমা দেখতে যাবে? বাংলা সিনেমা এসেছে অপর্ণাতে। প্রসেনজিৎ ঋতুপর্ণা। হেবি হিট করেছে।
- নাহ্, তিন ঘণ্টা বসতে পারব না।
- তোমার সব কিছুতেই বাগড়া। আরে চলো৷ ইভনিং শো, তারপর অলকানন্দা রেস্টুরেন্টে মোগলাই পরোটা। ফেরার পথে দানাদারও হবে।
- ও'সব খেলে পরের দিনই হার্ট অ্যাটাক।
- আরে ধুর। তুমি বড্ড নেগেটিভ মেসোমশাই।। একটু সাহস না করলে চলবে কেন৷
- বেশ বেশ। দেখা যাবে৷ তা, হ্যাঁ রে অভ্র..।
- বলো..।
- তুই ছোকরা মানুষ। ইয়ারদোস্ত আছে৷ হাবেভাবে মনে হয় প্রেমট্রেমও করিস৷ তার ওপর এই বাড়িবাড়ি কাগজ দেওয়ার কাজটা নিশ্চয়ই খুব খাটনির৷ রোজ বিকেলে যে এসে পড়ে থাকিস..কেন?
- তোমার সম্পত্তি হাত না করে ছাড়ছি না৷
- আছে বলতে এই চৌকি৷ ওই আলমারি। আর ব্যাঙ্কে দু'চার পয়সা যা আছে, তা দিয়ে তোর দীঘাও যাওয়া হবে না।
- মেসোমশাই..চা।
- শিঙাড়াটা?
- নোলা দ্যাখো। দাঁড়াও৷ আনি৷
- হে হে হে।
- মেসো। ও মেসোমশাই।
- যাবে? সিনেমা দেখতে?
- যাব?
- যাবে?
- যাব। বেশ।
- সুপার! টিকিট কেটে রাখব৷ এই যে, শিঙাড়া।
- কেন আসিস? অভ্র?
- কী'সব ফালতু প্রশ্ন আজ শুরু করেছ৷ বলি, কাগজের টাকা ফাঁকি দেবে না তো? ও'টা বিজনেস৷ ও'খানে কিন্তু বাপ-মাকেও রেয়াত করা নেই মেসো৷ বলে রাখলাম।
- বল না। খামোখা রোজ আসিস কেন?
- এই৷ তুমি বাপ-মা নও৷ ইয়ারদোস্ত নও। প্রেমিকা নও। তোমার সঙ্গে গপ্পে হিসেব নেই৷
- তুই হিসেব ছাড়া গপ্প করতে আসিস?
- জানো মেসো৷ তুমি আমায় কথা বলতে দাও৷ যা খুশি তাই৷ যা খুশি তাই৷ কাজেই, আমি কিন্তু নিজের ধান্দাতেই আসি৷
- কী'সব যে তুই বলিস।
- তুমি কি আমায় বাপ-মায়ের মত চেনো? কাঁচকলা। তুমি কি আমায় শ্যামলীর মত চেনো? ধুর ধুর৷ ঘোঁতনা, বাবলা, নীলু; এরাও আমায় তোমার চেয়ে অনেক বেশি চেনে, ছেলেবেলার বন্ধু বলে কথা৷ অথচ দ্যাখো, একমাত্র তুমিই জানো যে আমার হেমেন-পুরুতের মন্ত্র পড়ার স্টাইলে কাগজ পড়তে হেব্বি ভালো লাগে৷ শুধু তুমিই জানো যে আজকাল আমি চায়ে ডুবিয়ে আলুর চপ খাচ্ছি। শুধু তুমিই জানো আমার সাইকেলের সঙ্গে অটোর ধাক্কা লেগেছিল গত বিস্যুদে৷ সমস্ত হাবিজাবি কথা তোমায় যে কী'ভাবে বলে ফেলি..। কোনও কথাই কাজের নয়, অথচ..।
- অভ্র। শোন না৷ আমি টাকা দেব, কাল ভালো চা-পাতা এনে দিবি? আমি নাম বলে দেব৷
- ঠিক হ্যায়। এনে দেব।
- হাইকোয়ালিটির চা-পাতা না থাকলে বাজে গপ্প জমবে কী করে বল?
- হে হে হে।
No comments:
Post a Comment