- আর একটু ভাত দিই রন্টু?
- আর না বাবা।
- কাল থেকে এই বাড়ির ডালভাতই রাজভোগ মনে হবে৷
- হেহ্৷ আচ্ছা দাও আর দু'টো ভাত।
- তোর মা থাকলে আমার ওপর কী রাগটাই না করত৷ আজকের দিনটা অন্তত ঝোলভাত খাওয়াতে পারতাম। আসলে সময় এত কম..।
- হ্যাঁ। তুমি মাছ এনে ঝোল রেঁধে খাওয়ানোর তাল করলে ডুবতে হত৷ শেষে পাউরুটি চিবিয়ে বেরোতে হত।
- ওরা এলো বলে, তাই না রন্টু?
- খবর তো সে'রকমই।
- রন্টু। জেলে বোধ হয় লপসি দেয়, তাই তো?
- কাতলার ঝোল, গন্ধরাজ লেবুর টুকরো দিয়ে যে ভাত সার্ভ করবে না সে'টা নিশ্চিত।
- তুই ঘাবড়ে যাস না রন্টু। সমরকাকু বলেছে বেইল পেতে অসুবিধে হবে না..আরে দেশে আইনকানুন তো এখনও উঠে যায়নি।
- সমরকাকুর সাধের লিগ্যাল প্র্যাক্টিস এ'বারে ডুবলো বোধ হয়।
- ওরা চাপ দেবে বুঝি? থ্রেট? চোটপাট? মাস্তানি?
- তোমার কী মনে হয়?
- সমরের স্পাইন আছে৷ ও নুইয়ে পড়বে না৷
- সমরকাকুর একটা সংসারও আছে। সব হারানোর ভয়ও আছে৷ একটা সিডিসাস ছেলের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে যদি ফ্যামিলি সেফটি বিঘ্নিত হয়..।
- হ্যাঁ রে রন্টু৷ তোর মা নেই৷ তাই আমার থাকাটাও ম্যাটার করে না, তাই না? তাই তোর সংসার নেই? শুধুই স্পাইন আছে?
- স্পাইনটা তোমার থেকেই পাওয়া৷ অফিসে ঘুষ নেওয়ায় মদত দাওনি বলে মারধোর খাওনি তুমি?
- অফিসের ওপরওলাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আর গোটা পলিটিকাল মেশিনারির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা কি এক হল রে? তোকে দেখে আমি যে কী ইন্সপায়্যারড হই রন্টে..।
- এই সেরেছে। মনে রেখো, মেরুদণ্ডের গল্প প্রবন্ধে লেখা এক জিনিস৷ কিন্তু বয়স হলে বোন ডেন্সিটি কমে যায়৷ এ বয়সে তোমার পুলিশের লাঠি সইবে না৷
- আমায় আন্ডারএস্টিমেট করিস না৷ তুই জানিস এককালে আমি মুগুর ভেজেছি?
- সে'তো ভালো কথা৷ তা'বলে বেগুনটা আজ এক্সট্রা ভেজে কালো করে ফেলবে?
- এহ্৷ মনে হচ্ছিল বটে যে ওভারডোজ হয়ে যাচ্ছে৷ তেতো লাগছে নাকি রে?
- না না। অতটাও খারাপ নয়৷
- রন্টু, এই শোন৷ জেলে ওরা তোকে..। মানে..তোকে যদি ফস করে..মানে।
- কী?
- না মানে..সমস্ত মেশিনারি ওদের হাতে৷ চাদ্দিকে কত কিছু শুনি। কিন্তু যদি..।
- যদি?
- না না৷ নেগেটিভ কিছু ভাবব না৷ অপটিমিজম ছাড়া রিভোলিউশন হয় না৷
- বাবা৷ আমার কপালে লপসি ফেস্টিভাল নাচছে৷ তুমি নার্ভাস হয়ো না।
- নার্ভাস? আমি? হেহ্৷ হাসালে ব্রাদার৷ এক কোপে পাঁচ কিলোর কাতলা দু'ফালি করে দিই এখনও৷ নার্ভস অফ স্টিল।
- ব্রাভো।
- ফিরে আসিস বাবু৷ কেমন?
- তোমায় বেশিদিন একা ছাড়লে মা দুশ্চিন্তার চোটে ওপর থেকে নেমে এসে চোটপাট শুরু করবে। সে রিস্ক নেওয়া যাবে না।
- কী গর্ব হচ্ছে আমার তোকে নিয়ে বাবু৷ কী গর্ব। তুই জয়েন্টে যেদিন ফস্কে গেলি, আমি তো রেগে ফায়্যার। তোর মা বারবার আমায় বলেছিল, রন্টুকে জয়েন্ট-মেডিকালের স্কোরে বাঁধা যাবে না৷
- উফ্! বাবা! এই নড়বড়ে মন নিয়েই বেগুনভাজা পুড়িয়ে ফেললে মাইরি।
- হেহ্। আর একটু ভাত নে না রন্টু। নে। আর একটু৷ এই একটু। এক চামচ মাত্র৷ এ'টুকুই তো৷
- দাও।
- যাকগে। লপসি মুখে দিয়ে বাপের রান্নার সুবাস মনের মধ্যে টেনে আনিস৷ দেখবি স্পাইন টনটনে থাকবে।
- বাবার রান্নার হাত; অমর রহে।
- জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ!