- বটুদা আছেন?
- কী চাই!
- বটুদা। আমি...আমি এসেছি।
- ভিতরে আসব?
- এসে যখন পড়েইছ, তখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নখ না চিবিয়ে ভিতরে এসে দু'টো কাপ ডিশ ধুয়ে ফেলো দেখি। আমি চা বসিয়েছি। দু'জনের কুলিয়ে যাবে।
- থ্যাঙ্কিউ দাদা।
- তা হঠাৎ কলকাতায় কী মনে করে?
- গুরুদেবের পায়ের ধুলো না নিলে চলছিল না...।
- শোনো, তেল দিও না। তেল দিও না। আমি তোমার ওপর মারাত্মক চটে আছি।
- আহ, না হয় দু'একটা ভুলচুক হয়ে গেছে। তার জন্য...।
- দু'একটা ভুলচুক? চার পয়সার কাজ করতে গিয়ে চার লাখটাকার ঝামেলা পাকাবে। তারপর আমায় কলকাঠি নেড়ে সমস্ত ঠিক করতে হবে। আর বাইসেপ ফুলিয়ে রকেটলঞ্চার দুলিয়ে নাচনকোঁদন করলেই যদি দুষ্টু লোকেদের শায়েস্তা করা যেত, তা'হলে তো হয়েই গেছিল...। দুনিয়াটা যদি অতই সহজ হবে, তা'হলে তোমার মত বারফট্টাই ঝাড়া লোকজনেরই জয়জয়কার হত আর এই বটুগোয়েন্দা সিআইএ, ইন্টারপোলকে কনসাল্ট করার বদলে ভুবন দত্তের বাজারসরকার হয়ে জীবন কাটাত।
- সত্যি বটুদা, তুমি সময়মত গোলমালগুলো সামাল না দিলে...।
- তুমি এতদিনে অন্তত বাহাত্তরবার অক্কা পেয়ে গিয়েছিলে আর কী। নেহাত আমার মনটা নরম...।
- আসলে এ'বারের কেসটা এমন জটিল ছিল...।
- আরে ধুর। আমায় একটা এসএমএস করলেই সব মিটে যেত। তা, না। নিজে গিয়ে হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা। উফ। তোমার লোক-দেখানো স্টাইলের ঠেলায় আমার ভাতঘুমগুলো মাটি হচ্ছে।
- কাপ ধুরে ফেলেছি।
- ছ'মাস আমার এ'খানে থাকো। দিনের বেলা ঘরদোর ঝাড়পোঁছ করবে, বাসনপত্র ধোবে, বাজারঘাট করবে...।
- রান্না করব না?
- খেপেছ? হেঁসেল আর ডিটেকশনের ব্যাপারে বটু আর কাউকে ভরসা করে না। তা যা বলছিলাম, দিনের বেলা ঘরের কাজ করবে, রাতের দিকে আমি ট্রেনিং দেব। ছ'মাসে দাঁড়িয়ে যাবে। আর কথায় কথায় অমন নেকুপনা কেটে যাবে। এই নাও। চা।
- আহ্। অমৃত। রিয়েল দার্জিলিংয়ের সামনে কোথায় লাগে সিঙ্গল মল্ট।
- হুম। এ'বার বলে ফেলো।
- বলে ফেলব? কী?
- এখন তোমার ইস্তানবুলে থাকার কথা। অথচ এই অবেলায় কলকাতায় উদয় হয়ে আমার বাড়িতে কাপ-ডিশ ধুচ্ছ। অসাবধানতায় জামার সব কটা বোতাম লাগিয়ে ফেলেছ- অর্থাৎ স্টাইল-ঠাইল সব মাথায় উঠেছে। চুলে যা বুঝছি জেলের বদলে শালিমার নারকোল তেল ঢেলেছ। তার মানে মাথাব্যথা এমন পর্যায় গেছে যে পেনকিলারে কাজ হচ্ছে না। ভদ্রেশ্বরের ঝুনোনাপিতের সেলুনে গিয়ে মাথা মালিশ করিয়ে আসতে হয়েছে। আরও আছে। এই যেমন, গতকাল থানার বড়বাবু আমায় দু'ডেকচি বিরিয়ানি পাঠিয়েছিলেন। সাপ্তাহিক ভেট আর কী। বেশ খানিকটা বাসি বিরিয়ানি এখনও পড়ে আছে। গোটা ঘর বিরিয়ানির সুবাসে ভরপুর অথচ তুমি একবারও সেই সুবাসের সোর্স ঘেঁটে দেখতে চাইলে না। কাজেই বেশ ঘোরতর বিপদেই পড়েছ। তবে হ্যাঁ। বিপদটা একটু ইউনিক। ঠকাস-ঠকাস করে কেঠো স্টাইলে ইংরেজিতে কথা বলে মুরুব্বিয়ানা ফলাচ্ছ না। তার মানে প্রফেশনাল ঝ্যামেলা নয়, তাই লিঙ্কডনইন কেত মেরে সাহায্য চাইতে হচ্ছে না। তার মানে তুমি কোনও জরুরী সাহায্যের জন্য এসেছ, তবে সে'টা কাজকর্ম বিষয়ক কিছু নয়। বেশ। আমি পার্সোনাল মেন্টরও বটে। কী চাই? চটপট বলে ফেলো।
- বটুদা, মাইরি। আপনার চরণতলে ঠাঁই দিন প্লীজ। বর্তে যাই। বড় ফাঁপরে পড়ে এসেছি। এ'বারের মত উতরে দিন।
- কী ব্যাপার?
- প্রেমিকা ইয়াব্বড় বড় প্রেমের চিঠি লেখা শুরু করেছিল। মারাত্মক সব রোম্যান্টিক বুলি, ঢলোঢলো ভাষা। এ'দিকে আমার দৌড় ওই হোয়্যাটস্যাপে হার্ট সাইন পাঠানো পর্যন্ত। কাজেই ওর প্রেমের চিঠি খাটো হতে শুরু করেছে। ভাষার নরমভাব কেটে গিয়ে ধারালো খোঁচা আসতে শুরু করেছে। বড্ড নার্ভাস বোধ করছি বটুদা। বড্ড। আমি যদি ইমিডিয়েটলি একটা পেল্লায় প্রেমের চিঠি না লিখতে পারি, মুশকিল হয়ে যাবে। আমায় বাঁচান বটুদা...।
- বটু গোয়েন্দার মনটা বড্ড নরম ভাই পাঠান। রিফিউজ করি কী করে। তাছাড়া রুবাই মেয়েটি ভালো। তোমার মত নিনকমপুপকে প্রেমের আশ্রয় দিয়েছে, তোমার ভাগ্য সত্যিই সুপ্রসন্ন বলতে হবে। বেশ। আমি ডিকটেশন দেব, তুমি টুকে নিও। তুমি চা'টা শেষ করো। আমি দেড়-থালা বিরিয়ানি উড়িয়ে আসি; রোম্যান্সটা তা'হলে বেটার ফ্লো করবে। পোস্ট-বিরিয়ানি একটা অমিত রে কে টেক্কা দেওয়া সতেরো পাতার চিঠি লেখা যাবে'খন। সে চিঠির "ইতি তোমার পাঠান" পর্যন্ত আসতে আসতে রুবাই দিদিভাই চোখের জলে নাকের জলে এক হয়ে 'লগ যা গলে' গাইবে, এই গ্যারেন্টি রইল।
No comments:
Post a Comment