- ভাই পল্টু, অ্যাটেনশন! সোমা লাইব্রেরিতে একা বসে।
- তা'তে কী?
- তা'তে কী মানে! এই তো সুযোগ৷
- সুযোগ?
- সুবর্ণ সুযোগ।
- কীসের সুযোগ?
- তুই এতটাই গবেট?
- আহ্। খুলে বল না।
- মনের কথা জানান দেওয়ার এত বড় মওকা আর পাবিনা৷
- লাইব্রেরিতে গিয়ে এ'সব কথা বলব? সমরেশবাবু পেটাবেন যে!
- আরে ধের। সেই যে রোমান্টিক চিঠিটা লিখে রেখেছিস, ওই যে, কী'সব কঠিন কবিতাফবিতা কোট করে৷ ওইটা স্ট্রেট গিয়ে ওর সামনে রেখে দে৷ কথার চেয়ে ওই চিঠিতে কাজ দেবে বেশি৷ তা'ছাড়া সোমার তোর প্রতি উইকনেস আছে৷ ওর চোখে সে'টার রিফ্লেকশন আমি দেখেছি।
- সত্যি দেখেছিস ভাই?
- মা কালীর দিব্যি৷
- তা'হলে চিঠিটা গিয়ে দিয়েই দি বল? লাইব্রেরিতে?
- শুভস্য শীঘ্রম।
- ইয়ে৷ সমরেশবাবু যদি বাগড়া দেন? যদি..চিঠি দেওয়াটা ট্র্যাক করে ফেলেন? লাইব্রেরিয়ান হিসেবে বড্ড বদমেজাজি ভদ্রলোক৷ লাইব্রেরির স্পিরিট নষ্ট করেছি বলে আমায় না রগড়ে দেন৷
- হুম। অকারণে বেজায়গায় নাক গলানোর অভ্যাস আছে বটে ভদ্রলোকের। একটা কাজ কর..হেডস্যার আমায় একটা অফিস মেমো দিয়েছিলেন লাইব্রেরিতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য৷ এ'টা বরং তুইই নিয়ে যা৷ সমরেশবাবুর হাতে আগে দিয়ে দে। এ'টা নিশ্চয়ই উনি খানিকক্ষণ মন দিয়ে পড়বেন৷ সেই ফাঁকে সোমার পাশের চেয়ার বসে; চিঠি দিয়ে কেল্লা ফতে।
- তোর মত বন্ধু হয় না ভাই। তোকে যে আমি কী বলে..।
- বলার কী দরকার। খাইয়ে দিবি না হয়৷ ফিশফ্রাই, চিকেন ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন। আর চকোলেট আইসক্রিম৷
- হবে৷ হবে। সব হবে৷
- এই যে, সেই লাইব্রেরির মেমো। এ'বার ছুট্টে যা দেখি৷ তা, প্রেমপত্রটা সঙ্গে আছে তো?
- এক্কেবারে বুকপকেটে। অলওয়েজ৷
***
সোমা বসে ছিল লাইব্রেরির উত্তর দিকের জানালার সামনে৷ নরম রোদ্দুরে যে কী মায়াময় দেখাচ্ছিল তাকে। সোমার একটা ডাকনাম দিয়েছে পল্টু, মনে মনে; সুমি৷ সুমি, সুমি; মনে মনে বার দুই বলতেই বুকের ভিতরটায় কেমন মিষ্টি হাওয়া বয়ে গেল৷ আহা৷
কেমিস্ট্রির ঢাউস রেফারেন্স বইটা থেকে আচমকা চোখ তুলল পল্টুর সুমি। পল্টুর মনে হল সুমি তাকে দেখে খানিকটা খুশিই হয়েছে৷ চিঠি দিয়ে মন জয় করার এই আদর্শ সুযোগ, সমরেশবাবু এখন নির্ঘাৎ হেডমাস্টারের মেমোয় নিমজ্জিত।
সুমির সামনের চেয়ারটা টেনে বসলে পল্টু৷ মুখে বেকায়দা হাসি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। কাঁপা হাতে এগিয়ে ধরল সেই যত্নে রাখা প্রেম-দলিল৷ সুমি যেন সে চিঠির অপেক্ষাতেই ছিল। কাগজটা ফস্ করে নিজের হাতে বাগিয়ে নিল সে। তিনটে প্রকাণ্ড ঢোক গিলল পল্টু।
কেমিস্ট্রির বইয়ের আড়াল সম্বল করে চিঠির ভাঁজ খুললো সোমা; পল্টুর সুমি৷ কিন্তু একটা চাবুকের শপাং টের পেল পল্টু যখন সোমার মুখের হাসি সুট্ করে মিলিয়ে গেল৷ ততক্ষণে তার হাতের তেলো ঘামতে আরম্ভ করেছে৷ তবে কি হিসেবে গড়বড়? সোমা কি পল্টুর সুমি হতে চায় না?
এ'বার সোমা সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে শুধোল, "এই পল্টু, লাইব্রেরিয়ানের জন্য লেখা হেডমাস্টারমশাইয়ের মেমো আমায় দেওয়ার কী মানে"?
মাথাটা ভোঁভোঁ করে উঠলো পল্টুর৷ আর তখনই একটা জলদগম্ভীর হিমশীতল কণ্ঠস্বর লাইব্রেরির স্তব্ধতা চুরমার করে দিলে; "এই যে রসের নাগর পল্টেকুমার! আমার সঙ্গে মস্করা? এ'দিকে আয়, তোর চামড়া ছাড়িয়ে যদি পুরো এনসাইক্লোপিডিয়ার সেট মলাট না দিয়েছি তো আমি হেডলাইব্রেরিয়ান সমরেশ সাহা নয়"!
No comments:
Post a Comment