রাতের বৃষ্টি। স্লগওভারের ঝমঝম পেরিয়ে এ'বার ঝিরঝিরিয়ে ধরে খেলার সময়৷ ইতিমধ্যে মিঠে হাওয়া খেল জমিয়ে দিয়েছে৷ সবচেয়ে বড় কথা; বৃষ্টির ঝাপটার চোটে জানলা-দরজা বন্ধ করে গুমোট ঘরে বসে গজরগজর করতে হচ্ছে না৷ বারান্দায় পাতা মোড়ার কদর তখন আলেকজান্ডারের সিংহাসনের চেয়ে বেশি৷
সেই একটানা ঝিরিঝিরিতে সঙ্গত দিচ্ছেন মেজদার সন্তোষ টেপরেকর্ডার থেকে মাপা ভল্যুমে ভেসে আসা কিশোরকুমার; "খ্বাব হো তুম ইয়া কোই হক্যিকত"। মাপা ভল্যুম, অর্থাৎ যা শুনে বাবা এই রাতের বেলা এসে টেপরেকর্ডার ঝুলবারান্দা থেকে ছুঁড়ে ফেলবেন না৷ কিশোরকে মাঠে আলগা ছেড়ে দিয়ে মেজদা অবশ্য ঘ্যাঁতঘ্যাঁত করে ঘুমোচ্ছে।
ও'দিকে রাজাধিরাজ বাপ্টুকুমার তখন ব্যালকনির মোড়া আলো করে বসে রাতের রাজ্যপাট পরিচালনা করছেন৷ দু'দিনের মাথায় টেস্ট পরীক্ষা, বাপ্টু জানে ওর চোদ্দপুরুষের ক্ষমতা নেই তাকে সসম্মানে উতরে দেওয়ার৷ কিন্তু এই জমাট বৃষ্টির রাতের ওয়ানডেটা সামান্য টেস্টের চিন্তায় নষ্ট করাটা নির্ঘাৎ গবেটামো হবে৷
উলটোদিকের ব্যালকনিটা খালি, সে ব্যালকনি ঘেঁষা কাচের জানলার গায়ে আলো দেখে বোঝা যাচ্ছে যে জোর পড়াশোনা চলছে। বাপ্টু জানে যে কাচের ও'পাশে খ্বাবদেবী দুলে-দুলে পড়ছেন; তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন কিলোকিলো নম্বর বাগানোর উদ্দেশ্যে৷ আর এই ব্যালকনিতে মোড়াশ্বর বাপ্টুকুমার হকিকতের অঙ্ক কষে যাচ্ছেন; খ্বাব ব্যালকনির আলো নেভানো হয়নি, পড়ার শেষে নিশ্চয়ই সে আলো নেভাতে সে বাইরে আসবে৷ নিশ্চয়ই আসবে; ওই ব্যালকনির আলোর স্যুইচ যে ব্যালকনির দেওয়ালেই।
এ'দিকে হকিকত ব্যালকনির বাল্বটা দিনতিনেক আগেই কেটেছে। বড়দার দেওয়া বাল্ব কেনার টাকা চপ খেয়ে উড়িয়ে কী মারাত্মক মুখচোপাটাই না সহ্য করতে হয়েছে বাপ্টুকে। কাজেই এ ব্যালকনি ঘুটঘুটে অন্ধকার, ও ব্যালকনি আলোয় আলোময়। ঘরের ভিতর থেকে মেজদার ঘুম জড়ানো গলা ভেসে এলো, "না পড়ে বারান্দায় বসে গুলতানি মারা? ভিতরে আয় ইডিয়ট"। পরক্ষণেই নাক ফের ডাকার শব্দ; বাপ্টুর নিরেট হকিকত থেকে হকিকততর হয়ে চলে৷ তা'ছাড়া বৃষ্টির রাত যতটা রোম্যান্টিক, ততটাই বিটকেল হল বেয়াদপ মশাদের কামড়।
বাহাত্তর নম্বর মশার কামড় হজম করার পর উল্টো দিকের ব্যালকনির দরজা ফটাস করে খুলে যায়৷
***
দরজা খোলার কেঠো শব্দে চমকে ওঠেন বাপ্টুকুমার ওরফে বাবু হকিকত। খ্বাবদেবী পাশে এসে দাঁড়ানোয় তাঁর সম্বিত ফিরে এসেছে।
- সে এক বয়স ছিল, জানো৷ কতবার রাত জেগে ব্যালকনিতে বসে মশার কামড় খেয়েছি। কখন তুমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য বেরিয়ে আসবে। কখন, কখন!
- তোমার সে অধ্যবসায় সংসারে থাকলে বর্তে যেতাম।
- সে অধ্যাবসায় পড়াশোনায় থাকলেও নোবেলটোবেল পেয়ে যেতাম বোধ হয়। অবশ্য, নোবেল দিয়ে ছাই করতামটা কী। এই ভালো।
- বটে? নেহাৎ প্রেমিক হয়েছ বলে নোবেল ছেড়েছ?
- ন্যাচারালি। দেয়ার আর মোর নোবেল লর্যিয়েটস দ্যান নাম্বার অফ ব্যালকনিস্টস যারা হকিকতের বুলডোজারের নীচে নিজের খ্বাবকে শুইয়ে দেয়নি। উই আর রেয়ার।
- ন্যাকা!
- সে যাই বলো, প্রেমের দুনিয়ায় আমিই আলেকজান্ডার! যাক, এই বৃষ্টির রাতে তোমায় জরুরী গান শোনাই বরং৷ ওকে গুগল, প্লে "খ্বাব হো তুম ইয়া কোই হকিকত বাই কিশোরকুমার"।
No comments:
Post a Comment