- এক্সকিউজ মি, আপনার দেশলাইটা পকেট থেকে পড়ে গেল৷ তুলে নিন৷
- থ্যাঙ্কিউ কাকা...ও'টা হারালে যে কী চাপ..তাই..ওহ্..ওহ্।
- আরে!
- অনিকেত?
- অ..অনিকেত? কে অনিকেত?
- ক্লাস ইলেভেনের ছেলে..সিগারেট ধরিয়েছ?
- ক..কে ক্লাস ইলেভেন? আমি তো..আমি তো রেলের অফিসে জুনিয়র ক্লার্ক।
- বটে? তুমি বকুলবাগান হাইস্কুলের ছাত্র অনিকেত বাগচি নও? হেডমাস্টারের চোখে ধুলো দেবে?
- আ..আমার নাম মোটেও অনিকেত নয়..আমি..।
- কে?
- আমি..। আমি...।
- নিজের নামটা মনে পড়ছে না?
- মনে..মনে পড়েছে৷ সুভাষচন্দ্র।
- সুভাষচন্দ্র? বসু? বটে?
- বসু কেন হবে স্যার৷ ওর'ম হয় নাকি৷ আমার নাম সু..সুভাষচন্দ্র ঠাকুর।
- ওহ্৷ আর তোমার বয়স সতেরো নয়?
- স..সতেরো?৷ হা হা হা হা হা৷ সতেরো..হা হা। আপনার..আপনার চোখে ন্যা..ন্যাবা পড়েছে।
- শাটাপ!
- আমার নাম সুভাষ ঠাকুর৷ আমি রেলে চাকরি করি৷ আমার বয়স চব্বিশ৷ বকুলবাগান হাইস্কুল আমি কোনওদিন দেখিইনি৷ আমি তো নাগপুরে থাকি, ক'দিনের জন্য চেঞ্জে এসেছি।
- বকুলবাগানে চেঞ্জে এসেছে বাবা সুভাষ?
- হ..হ্যাঁ। ফ্যাটনাস্টিক জায়গা৷ বি..বিউটিফুল ওয়েদার।
- তুমি অনিকেত নও?
- খামোখা অনিকেত অনিকেত করছেন কেন কে জানে..যান দেখি৷ আমার আবার দাড়ি কামানোর ব্লেড কিনতে হবে৷ দিনে তিনবার কামাতে হয় তো..আমার আবার স্মুদ শেভ না হলে চলে না৷ নতুন জায়গা, কাছে কোথায় যে দোকান পাই..তার মাঝে এই আপনি এসে কী'সব বাজে কথা শুরু করলেন। এই নিন, মশাই, দেশলাইটার দিকে নজর তো? রাখুন৷ বারোটা কাঠি আছে৷ অন্যের পিছনে গিয়ে যত ইচ্ছে ব্যবহার করুন৷ আমি আসি।
- সরি৷ আমার ভুল হয়েছে৷ আসলে সকলকে তো স্কুল ইউনিফর্মে দেখে অভ্যাস..।
- আ..আপনার এ'বার রিট্যায়ার করা উচিৎ। ছাত্র চিনতে পারেন না৷ হেডমাস্টারি করবেন কী করে!
- তা অবশ্য ঠিক৷ এ'বার সন্ন্যাস নেওয়ার সময় এসেছে বটে৷ দামড়া বুড়ো আর ছাত্রদের মধ্যে তফাৎ বুঝি না, আর মাস্টারি ফলানো সাজেনা৷ তবে বাবু সুভাষচন্দ্র, একটা সাজেশন দিই। কেমন?
- আবার সাজেশন কেন স্যার। আমার বড্ড তাড়া।
- দাড়ি কামানোর ব্লেড কিনতে হবে৷ জানি৷ তবু৷ মাস্টারকে অল্পবিস্তর মাস্টারি করে যেতে দিন৷ বলছিলাম যে, পারলে একবার নিজের ছেলেবেলার স্কুলের হেডমাস্টারের কাছে ফেরত যান৷
- ক..কেন বলুন তো?
- জবাবদিহির দায় এড়াতে দেবেন না সে ব্যাটাকে।
- আ..আজ্ঞে?
- কষিয়ে দু'ডজন গাঁট্টা মারার সময় গাঁট্টা না মেরে গুল হজম করে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার দায়, এড়াতে দেবেন না সে মাকালফলটিকে৷ যান৷ দাড়ি কামানোর ব্লেড কিনে, সোজা পৌঁছে যান সে হেডমাস্টারের বাড়ি৷ ব্যাটা বেদম ফাঁকিবাজ, একদম ছেড়ে কথা বলবেন না।
No comments:
Post a Comment