Tuesday, August 15, 2023

রেজাল্ট

- কী রে সুমন। অত নার্ভাস হচ্ছিস কেন? এগজ্যাম ভালো দিয়েছিস। ভাইভাও বললি চমৎকার হয়েছে। এখন এত ঘাবড়ানোর কী হয়েছে কে জানে।

- পিলুদা। তুই অদ্ভুত একজন মানুষ মাইরি৷ তোর টেনশন হচ্ছে না? আধঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট বেরোবে, ও'রকম গায়ে হাওয়া লাগিয় কী'ভাবে ঘুরছিস কে জানে। রেজাল্ট তো তোরও বেরোবে।

- টেনশন নিয়ে করবটা কী বল্৷ তার চেয়ে একদান দাবা খেলি চ'।

- অসম্ভব। ইশ, আচমকা মনে হচ্ছে ইকনমিক্সের উত্তরগুলো কাঁচা হয়ে গেছে। আর একটু ভেবে এগোনো উচিৎ ছিল..। ইশ্!

- নাহ্। তুই সত্যিই বড্ড চাপ নিয়ে ফেলেছিস। দাঁড়া চা বসাই। তা'তে যদি তোর বুকে বল আসে।

- পিলুদা..যদি কোয়ালিফাই না করতে পারি..।

- সুমন। এই একটাই তো পরীক্ষা আছে ভাই, যে'খানে ফেল করার উপায় নেই। দু'বছর অন্তর এগজ্যাম, বাঁধাধরা পাস।

- তুই জানিস এই সিটিজেনশিপ পরীক্ষাটা আমার জন্য মরণবাঁচন লড়াই। এ'বারেও যদি ইথিওপিয়ার জন্য সিলেক্টেড না হই..উফ্। জাস্ট ভাবতে পারছি না।

- আজ থেকে বছর ষাটেক আগেও কিন্তু ইথিওপিয়ান সিটিজেনশিপের জন্য এত মারামারি ছিল না৷ ডেটা আর্কাইভে ঘেঁটে দেখেছি সে'সময় ইউরোপিয়ান দেশের লিস্টে কোয়ালিফাই করার জন্য কী রক্তারক্তি লড়াইটাই না চলত। অথচ আজ দ্যাখ। ইথিওপিয়া কী ফ্যাসিনেটিং প্রগ্রেসটাই না করলে, বিশেষত গত বছর দশেকে। ভাবতে অবাক লাগে, তাই না।

- আহ্। দ্যা সানরাইজ ল্যান্ড অফ ট্যুয়েন্টি থার্ড সেঞ্চুরি; ইথিওপিয়া!

- তবে তুই এত চাপ কেন নিচ্ছিস কে জানে৷ সেই তো দু'বছর অন্তর ফের গ্লোবাল সিটজেনশিপের পরীক্ষায় বসা৷ ফের নতুন করে প্রিপারেশন৷ নতুন করে গ্লোবাল সিটিজেনশিপ লিস্টে নিজের নাম খোঁজা৷ এ'বারে ভাগ্যে ইথিওপিয়া পড়ল, অথচ পরেরবার দেখলি কানাডা। আপ অ্যান্ড ডাউন থাকবেই..ভাগ্য কি আর লিনিয়ার ভাবে এগোবে ভেবেছিস?

- দু'বছর পরে কী হবে দু'বছর পর ভাবব'খন। আপাতত এই বেলজিয়াম থেকে না বেরোলেই নয়। দম বন্ধ হয়ে আসছে।

- আমার এ দু'বছর তেমন মন্দ কাটেনি কিন্তু সুমন। তোর সঙ্গে দিব্যি গপ্প-আড্ডায় কেটে গেলো। সবচেয়ে বড় কথা অন্তত বছর দুই তো প্রাণখুলে বাংলায় বলা গেল। 

- প্লীজ পিলুদা। তোমার সঙ্গে আমারও দিব্যি কেটেছে। কিন্তু ভবিষ্যতের প্ল্যান না করে কোনও উপায় আছে কি? একটা কথা বলো, তুমি ভারত বা বাংলাদেশের জন্য কোয়ালিফাই করলে খুব খুশি হবে৷ তাই না?

- ধুস। একশো বাইশ বছর ধরে প্রতি দু'বছর অন্তর গোটা পৃথিবীর মানুষকে গ্লোবাল সিটিজেনশিপ টেস্ট দিতে হচ্ছে আর পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ইউনাইটেড নেশনস  মানুষের সিটিজেনশিপ নির্ধারণ করছে। দু'বছর অন্তর হিসেবকষে অঙ্ক-মেনে মাস-মাইগ্রেশন। বাঙালাদেশ বা ভারতে গেলেই বাঙালি ইয়ারদোস্ত জুটিয়ে নেওয়া যাবে নাকি! গতবছরের যা স্ট্যাটিস্টিক্স দেখছিলাম, ভিয়েতনামের নাগরিক লিস্টে নাম উঠলে বরং বাঙালি প্রতিবেশী জোটার চান্স সবচেয়ে বেশি।

- ওহ্৷ তোমার যা ফুড প্রেফারেন্স, ভিয়েতনামে কোয়ালিফাই করার চান্স প্রায় নেই বললেই চলে। জানো পিলুদা, ইথিওপিয়ার লিস্টে আমাদের দু'জনেরই নাম উঠলে যে কী দারুণ আনন্দ হবে..।

- সোজাসাপটা বলো চাঁদু৷ তিন নম্বর নামও একটা দেখতে চাও তুমি ইথিওপিয়ার লিস্টে। মিস মৌমিতা।

- হে হে৷ ও এত ব্রিলিয়ান্ট। গত ছ'বছর ধরে ইথিওপিয়ার জন্য কোয়ালিফাই করছে৷ এ'বারেও ফস্কাবে না৷ 

- এই নে। চা।

- পিলুদা৷ তুমি না থাকলে এই কথায় কথায় হাইক্লাস চা এগিয়ে দেওয়ার কেউ থাকবে না। 

- হেহ্৷ হ্যাঁ রে সুমন, তোর বাবা মা এখন কোথায়? জানিস? এ ব্যাপারে কোনওদিন কথা হয়নি, জিজ্ঞেস করাটাও উচিৎ না। তবে অদ্যই হয়ত শেষ রজনী। তাই ভাবলাম..।

- মায়ের খবর কোনওদিনই জানি না৷ আমার সোশ্যাল রেকর্ডেও মায়ের ডিটেল কোনওদিনই ছিল না। বছর বারো আগে খবর পেয়েছিলাম বাবা মঙ্গোলিয়াতে ছিলেন। ওই, একবার কথা হয়েছিল। ইয়ে, তোমার বাবা মা?

- জানি না৷ অনেক চেষ্টা করেছি ডেটাবেসে ট্র‍্যাক করার৷ জানতে পারিনি৷ আমার লিনিয়েজ সম্বন্ধে একটাই খবর আমি জানি৷ আমার এক পূর্বপুরুষ, কোন জেনারেশন আর ব্রাঞ্চ কে জানে, তিনি নাকি বছর কুড়ির চেষ্টাতেও ভারতের সিটিজেনশিপ লিস্টে নিজের নাম দেখতে না পেয়ে আত্মহত্যা করেন৷ 

- সুইসাইড অন আকাউন্ট অফ প্যাট্রিওটিক অ্যালিজিয়েন্স? ওহ।

- হ্যাঁ। ফলত আমার জেনেটিক রেকর্ডে একটা দাগ রয়ে গেছে৷ কাজেই ইথিওপিয়া আর্জেন্টিনার মত ওপরের সারির দেশে সুযোগ আমি পাব না৷ কিন্তু সুমন, আমি কিন্তু মন থেকে চাই তোর নাম এ'বারের ইথিওপিয়ার লিস্টে দেখতে। আর মৌমিতার খোঁজ পেলে আমায় একটা স্মাইলিং ইমোজি পাঠাস৷ আমি বুঝে নেব।

No comments: