- এক্সকিউজ মী৷ আপনি সমরবাবু তো? সমর চ্যাটার্জী?
- হ্যাঁ। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক..।
- আপনার হয়ত মনে নেই৷ আমি অরূপ দাস। বার্ন্স অ্যান্ড সন্ডার্সে যখন জয়েন করি তখন আপনি ম্যানেজার।
- অরূপ। অরূপ। মনে পড়েছে৷ আসলে এদ্দিন পর তো..রিটায়ার করেছি তাও তো বছর দশেক হল...মেমরিটা ঠিক..। যাক গে, তুমি তো ফিনান্স ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছিলে? তাই তো?
- আপনার মনে আছে? হ্যাঁ। ইন ফ্যাক্ট, কিছুদিন আপনি হাতে ধরে কন্ট্র্যাক্টের ব্যাপারস্যাপার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সে কৃতজ্ঞতাটা..।
- আই ওয়াজ অনলি ডুয়িং মাই জব। তা তুমি কি এখনও সে অফিসেই..?
- আজ্ঞে হ্যাঁ। এদ্দিন পর পুরীর সৈকতে আপনার সঙ্গে দেখা হবে ভাবিনি৷ তাও এই অসময়ে..রাতের সমুদ্র আপনাকেও টানে দেখছি।
- তা টানে বইকি৷ তা'ছাড়া এ'দিকটা শুনেছি সেফ৷ দশটা না বাজা পর্যন্ত তাই উঠি না৷
- এদিকটা বেশ নিরিবিলি৷ ভীষণ সুন্দর।
- দাঁড়িয়ে রইলে কেন? মাদুরে বসো। একাই বসে থাকি৷ পুরনো আলাপি একজন জুটেছে যখন..।
- থ্যাঙ্কিউ। আপনি কি নিয়মিত পুরী আসেন?
- এই সমুদ্রের সঙ্গে একটা নাড়ির যোগ হয়ে গেছে বোধ হয়..।
- স্যার, একটা প্রশ্ন ছিল, যদি কিছু মনে না করেন..।
- অফ কৌর্স।
- হয়ত আপনার কিছুই মনে নেই৷ তবু৷ আগ্রহটা ছিল তাই..আপনি রিটায়ার করার সাত দিন আগে সানফ্লাওয়ার শিপিং কোম্পানির একটা কন্ট্রাক্ট তাড়াহুড়ো করে প্রসেস করা হয়৷ ম্যানেজমেন্টর হুকুমেই। যদিও ব্যাপারটা ঘটানো হয় আমার হাতে দিয়ে৷ সে'দিন সমস্তটা বুঝিনি৷ কিন্তু এদ্দিন পর একটা অডিটে সানফ্লাওয়ার শিপিং নিয়ে একটা বড় গোলমাল ধরা পড়েছে৷ বেশ বড় ফিনান্সিয়াল স্ক্যান্ডাল৷
- এ ব্যাপারে আমায় আবার কেন..।
- আপনি আমায় কিছুই বলেননি সে সময়৷ কিন্তু গোলমালের ব্যাপারটা আপনি ঠিক আঁচ করেছিলেন। তাই তো?
- এ'বারে আমি উঠব৷
- সরি মিস্টার চ্যাটার্জি৷ কিন্তু ব্যাপারটা এতই..। পুলিশের হাতে যে কী বিশ্রী হেনস্থা হতে হয়েছে..আমার ফ্যামিলিটা শেষ হয়ে যাচ্ছে..।
- তুমি কাকতালীয় ভাবে পুরী আসোনি তা'হলে৷ রীতিমতো খোঁজখবর নিয়ে আমার পিছনে লেগেছ..।
- স্যার, প্লীজ..।
- তুমি কি আমায় চোর ভেবেছ? ঘুষখোর?
- অন দ্য কনট্রারি, আমার বিশ্বাস আপনি এর বিরুদ্ধে ছিলেন। নেহাত ম্যানেজমেন্টের জারিজুরির ওপরে কিছু করতে পারেননি..।
- এ ব্যাপার নিয়ে আমি আর একটাও কথা বলব না৷
- সমরবাবু। স্যার, তখন আমি অফিসে নতুন৷ অল্প বয়স। আটঘাট কিছুই বুঝতাম না৷ অথচ আজ এদ্দিন পর বিশ্রীভাবে আমায় ফাঁসানো হয়েছে৷ আমার মানসম্মান সমস্তই...। আপনি যদি আমায় একটু গাইড করতে পারেন..আপনার নিশ্চয়ই কিছু মনে আছে..। ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে প্রমাণ না পেলে..আমার নামের ওপর থেকে কালিটা আর মোছা যাবে না।
- দেখো অরূপ..।
- প্লীজ স্যার৷ প্লীজ৷
- সতেরোর বি বাই টু এইটি সিক্স বাই ডি। স্টোররুমের আর্কাইভ থেকে এই ফাইলটা বের করতে পারলে বাঁচলেও বাঁচতে পারো৷ আমি নিজের হাতে সানফ্লাওয়ারের গোলমালের ব্যাপারে টপ-ম্যানেজমেন্টের কমিউনিকেশন রেকর্ড সরিয়ে রেখেছিলাম। ও ফাইলের খবর কেউ জানে বলে মনে হয় না৷ দ্যাখো, সে ফাইল খুঁজে পাও কিনা।
- সেভেন্টিন বি বাই টু এইটি সিক্স বাই ডি।
- করেক্ট।
- সব যখন জানতেন, আমায় সাবধান করে দিলেন না কেন সে সময়?
- ওরা আমার রিটায়ারমেন্ট বেনেফিট আটকে দিত। আমি..আমি ভয় পেয়েছিলাম অরূপ। সরি।
- ওহ৷
- অরূপ। একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
- বলুন।
- তুমি আমার খোঁজ পেলে কী করে?
- খোঁজ পাওয়ার কথা তো নয়৷ তাই না?
- কী করে পেলে?
- হেহ্৷ বুঝতেই তো পারছেন।
- অরূপ!
***
- মিসেস দাস৷ এই সেভেনটিন বি বা টু এইটি সিক্স বাই ডি-য়ের ফাইলটার খবর আপনি জানলেন কী করে?
- সেই ইনফর্মেশন আমি শেয়ার করত পারব না৷ মিডিয়ার কাছে শুধু একটাই অনুরোধ। আপনাদের মাধ্যমে সবাই যেন জানতে পারে যে বার্ন্স অ্যান্ড সন্ডার্সের ম্যানেজমেন্ট কতটা কোরাপ্ট৷ শুধু কোরাপ্ট নয়, খুনিও বটে৷ আমার হাসব্যান্ড অরূপ দাসকে তারা খুন করেছে। হয়ত বুকে ছুরি বসায়নি৷ কিন্তু মিথ্যে বদনামের বোঝা চাপিয়ে তাকে শেষ করা হয়েছে।
- সে'টা এখন প্রমাণিত। কোর্ট ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷ কিন্তু মিসেস দাস, এই গোপন ফাইলটার খবর তো কেউ জানত না! ফাইলটা যিনি গোপনে বানিয়ে রেখে গেছিলেন, বার্ন্স অ্যান্ড সন্ডার্সের রিটায়ার্রড ম্যানেজার সমর চ্যাটার্জি, তিনি মারা গেছেন বছর সাতেক হল৷ অর্থাৎ তাঁর রিটায়ারমেন্টের বছর তিনেকের মধ্যেই। অরূপবাবুও নিশ্চয়ই সে'টা জানতেন না, জানলে তিনি সুইসাইড করতেন না। কাজেই হঠাৎ আপনি কী'ভাবে..।
- যদি বলি অরূপ ওই ফাইলের খবর আমায় স্বপ্নে দিয়ে গেছে? তা'হলে বিশ্বাস করবেন? আমার আর কিছুই বলার নেই৷ প্লীজ, আমায় এ'বারে একটু একা থাকতে দিন।
No comments:
Post a Comment