- এই যে স্বপনদা! বাহ্৷ দোকানে দেখছি বড় ফ্রিজ বসিয়েছ মামা? চাল-ডালের পাশাপাশি এ'বার আইসক্রিমও গছাবে নাকি?
- আইসক্রিম, কোল্ডড্রিঙ্কস। ছোট ফ্রিজটায় তো মাখনটাখনের বেশি কিছু..। যাক গে৷ তোর অত খবরে কাজ কী রে মদনা!
- আমাদের অত সময়ও নেই৷ হপ্তা বের করে দাও৷ কেটে পড়ি। বুলবুলদা আর হ্যাঁ, এ'মাসে বাজারের সবার থেকে দু'শো টাকা এক্সট্রা নিচ্ছে৷ পুজোফুজো আসছে তো।
- হপ্তা বলিস কেন রে ইডিয়ট? বল তোলা আদায় করতে এসেছিস। বাবা, বাঙালির ছেলে মাস্তানিতে নেমেছিস, বাঙালির নেকু কেরানী বদনাম ঘুচোচ্ছিস; তা তো ভালো কথা৷ কিন্তু বাংলা ভুললে চলবে কেন? আর হ্যাঁ। বুলবুলকে বলে দিস এ'টা মামার বাড়ি নয়, যে দু'শো এক্সট্রা চাইলেই দু'শো পাবে।
- স্বপনদা, বুলবুলদাকে রঙ দেখাতে যেওনা৷ কেলিয়ে কেলো মুখ ফর্সা করে দেবে৷
- আরে থাম। যে মাস্তান দু'শো বেশি চেয়ে ঘ্যানঘ্যান করে তার জাত আমার জানা আছে৷ ক'দিন পর তো সিঁদ কাটতে নামবি।
- বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু স্বপনদা। বুলবুলদা যদি জানতে পারে..।
- মদনা, আমার বাজে বকার সময় নেই৷ এই নে টাকা৷ আর বুলবুলকে বলে দিস আমি দু'শো টাকা কেটে রেখেছি৷ আগের কিছু বাকি ছিল৷
- দেব নাকি চামড়া গুটিয়ে?
- তবে রে রাস্কেল! তুই গোটাবি আমার চামড়া? ডাক বুলবুলকে৷ তুই ডাক হারামজাদা।
- তোমার কি মাথাটাথা গেছে?
- বুলবুলের ডানা আমি যদি না ছেঁটেছি..তবে আমার নাম স্বপন দত্ত নয়।
- তোমার ব্যবস্থা হচ্ছে। বুলবুলদা তোমার নতুন ফ্রিজ তুলে নিয়ে গিয়ে তা'তে বিয়ারের বোতল রাখবে৷ দেখে নিও। আর তোমায় ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে কয়েক ঘা না দেওয়া পর্যন্ত..।
- টিংটিঙে লগবগ্গার দল! তাদের নাচনকোঁদন দেখে হেসে বাঁচিনে৷
- আমি এখুনি গিয়ে বুলবুলদাকে খবর দিচ্ছি...তোমার দোকান যদি না তুলিয়েছি আজ..।
********
- স্বপনদা, আধকিলো মুসুরডাল আর আড়াইশো গুড়ের বাতাসা দাও।
- এই দিই৷ মদনা। এই ব্যাটা! হাফকিলো মুসুরি আর আড়াইশো লাল বাতাসা দে দেখি৷ চটপট৷ কাস্টোমারকে এই রোদে বেশিক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখিস না বাপ। চট করে নিয়ে আয়৷ তা, আর কিছু দেব নাকি হরিহর?
- না না। আর কিছু না।
- বেশ বেশ।
- তা স্বপন, সাতদিন ধরে দেখছি মদন গুণ্ডা তোমার দোকানে ফরমাশ খাটছে। ব্যাপারটা কী? বুলবুলের স্যাঙাৎগিরি ছেড়ে তোমার দোকানে চাল-ডাল ওজন করছে..ও কি মাস্তানি ছেড়ে দিল?
- তা কেন হবে? মদনা আমার সঙ্গে বুলবুলের নাম নিয়ে অসভ্যতামি করেছিল৷ আমি তাই দিলাম বুলবুলকে জোর এক ধমক৷ লজ্জায় পড়ে গিয়ে একমাসের জন্য মদনাকে আমার পদসেবায় লাগিয়েছে বুলবুল৷ বিকেল পর্যন্ত দোকান দেখে৷ সন্ধ্যেবেলা আমার গা হাত-পা টিপে দেয়৷ রাত্রে আমার জন্য বটতলার হাট থেকে বাজার করে থলি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তবে ওর ছুটি।
- বুলবুল তোমায় এত সমীহ করে?
- না করে উপায় কী বলো..।
- ব্যাপারটা কী..।
- বুলবুল সদ্য বিয়ে করেছে জানো তো? সে ভারি গদগদ প্রেম৷ আমাদের গো বুলবুলকে আর চেনার উপায় নেই৷ গুণ্ডা-মাস্তানি যে'টুকু করে, নেহাতই পেটের দায়ে। আদতে সে এখন প্রেমিক মানুষ। আর ওর বউ, বুল্টি, সেলাই স্কুলের দিদিমণি। বুঝলে? ভারি ভালো মেয়ে৷ সেই সকাল সাতটায় বেরোনো, ফেরা রাত আট্টায়৷ কী খাটনিটাই না খাটে৷ এ'দিকে বুলবুলের যা কাজের নেচার, সে'টা তো ওয়ার্ক ফ্রম হোমই বলা যায়৷ কাজেই রান্নার ভারটা এখন তার কাঁধে৷
- বলো কী!
- এ'তে অবাক হওয়ার কী আছে৷ ন্যাচরাল ডিভিশন অফ লেবার৷ অবশ্য আমাদের সমাজের ভদ্দরলোকেরা ও'সবের তোয়াক্কা করে না৷ কিন্তু মাস্তান বুলবুলের জ্ঞানগম্যিটুকু আছে আর সে বুল্টিকে সত্যিই ভালোবাসে৷ আজকাল তাই মনের সুখে হেঁসেল সামলায়৷ তার রান্নার হাতও মন্দ নয়৷ বুলবুল জানে যে হাইকোয়ালিটির মশলাই হল রান্নার প্রাণ৷ আর বেস্ট মশলাপাতির ব্যাপারে স্বপন দত্তর নিউ লক্ষ্মী ভাণ্ডারের ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়৷ আমায় তো জানো, এই টিট্যুয়েন্টির যুগে দাঁড়িয়েও প্যাকেট মশলায় নেমে যাইনি৷ নিজে গিয়ে শুঁকে নেড়েচেড়ে জিনিসপত্র আনি৷ তাই তো আমার দোকানের এক চিমটি লঙ্কা গুঁড়োর যা ঝাঁজ, তা প্যাকেট মশলার চার চামচেও হবে না৷ সে ভরসার দাম যে তোলা আদায়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- সে কথা তো আমিও বারবার বলি।
- দ্যাখো হে, বন্দুক দেখিয়ে একদিন-দু'দিন কাজ চলতে পারে৷ কিন্তু বুলবুল জানে, রান্নার ইনগ্রেডিয়েন্ট সোর্সিংয়েও ভালোবাসা আর সম্মান থাকা দরকার৷ যেকোনও গুণী রাঁধুনি তোমায় বলে দেবে; হাইকোয়ালিটি ইকোসিস্টেম না হলে হাইকোয়ালিটি কুকিং অসম্ভব৷ মদনা ব্যাপারটা না জেনে সেই ইকোসিস্টেম ঘেঁটে দিতে গেছিল, তাই বুলবুল ওকে দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করাচ্ছে।
- সত্যি স্বপন। যো বিবি সে করে প্যার, উয়ো নিউ লক্ষ্মী ভাণ্ডারকো ক্যায়সে করে ইনকার।
No comments:
Post a Comment