Saturday, November 25, 2023

বিট্টা আর তুলি



- হ্যালো।

- কী ব্যাপার? আজ হ্যালো লিখলে?

- এই রে, হ্যালো লেখা উচিৎ হয়নি?

- না তা নয়। তবে তুমি সাধারণত হাই লিখেই চ্যাট শুরু করো কিনা। অভ্যাসগুলো সামান্য এ'দিক ও'দিক হলেই কেমন অস্বস্তি হয়৷

- কেমন আছো তুলি?

- হাঁটুর ব্যথাটা বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস তুঙ্গে। এ'বাদে বাকি ব্যাপারস্যাপার মন্দ নয়। তুমি কেমন আছো জয়?

- রোজ সকালে অন্তত দু'মাইল হাঁটছি৷ আর রোজ মিনিমাম দু'পিস পান্তুয়া৷ এ'বাদে বাকি ব্যাপারস্যাপার খুব একটা সুবিধের নয়।

- এ'বারে কিন্তু পিং করতে বেশি সময় নাওনি৷ মাত্র আড়াই মাস পর।

- দাঁড়াও দেখি৷ একটা জুতসই 'বিব্রত হইলাম' মার্কা ইমোজি খুঁজি।

- না না৷ মন থেকেই বললাম। এর আগে তুমি আমার খোঁজ নিতে এই মাস পাঁচ-সাতেক অন্তর অন্তর। আজ হঠাৎ এই অল্প দিনেই খোঁজ পড়ল? সত্যিই তুমি বুড়ো হচ্ছ, সেন্টিমেন্টালিটি লাগামছাড়া হচ্ছে। পান্তুয়ার শাক দিয়ে বয়সের মাছ ঢাকা সহজ নয়।

- বয়স ব্যাপারটা ভাবলেই সামান্য উদাস লাগে।

- সাবধান। এ'বয়সে পান্তুয়ার অত্যাচার তাও উতরে যাবে৷ কিন্তু কবিতার ধাক্কাটা তুমি নিতে পারবে না জয়।

- হা হা হা।

- 'লল্' লেখো৷ হা হা ব্যাপারটা বড্ড সেকেলে।

- মাঝেমধ্যে আমারও বড় সাধ হয় তোমার পিং পাওয়ার৷

- সবই তো জানো। অ্যামনেসিয়ার তো এই এক দোষ। চাই তো৷ পারি না৷ তোমার পিং মোবাইলে এলে তবে মিষ্টুরাণী ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার ঘাড়ে; বলবে- দ্যাখো দিদুন কে মেসেজ করেছে! আমি আকাশ থেকে পড়ব! মিষ্টু আমায় বোঝাব হাউ আই অ্যাম দ্য তুলি অফ জয়৷ তারপর আমার চ্যাটিং শুরু৷ আমার পিং না করাটা ক্ষমাঘেন্না করে নিলেই ভালো করবে।

- এই নাতি-নাতনিগুলো না থাকলে ভেসে যেতাম আমরা। তাই না?

- তুমি বোধ হয় আর একদমই দেখতে পারছ না। তাই না? সবটাই বোধহয় বিট্টু টাইপ করে দিচ্ছে?

- এক চোখে যে'টুকু স্ট্রেন্থ ছিল, মাসখানেক হল তাও গেছে৷ অবশ্য বিট্টা যতক্ষণ পাশে থাকে, সব কিছুতেই উতরে যাই৷ এই এখনও ওই ডিকটেশন নিয়ে টাইপ করছে আর তোমার উত্তরগুলো নার্সারি রাইমের মত রীডিং পড়ছে৷ শুধু একটাই গোল পাকালে। বললাম তুলিকে পিং কর। বেরসিক ছোকরা হাই-য়ের বদলে হ্যালো লিখে দিলে।

- লল্। তোমার নাতিটি বড় মিষ্টি।

- রওফল। লজ্জায় বিট্টুর কান লাল হয়ে গেছে।

ক'টা জামা

- খোকা, এই যে। তোমার বাবা কই?

- বাবা, ভিতরের ঘরে। ডেকে দিচ্ছি।

- ডেকে দেবে না হয়। আগে তোমার সঙ্গে একটু আলাপ করে নিই বাবুসোনা। তা বলো দেখি, পুজোয় ক'টা জামা হলো?

- কার?

- তোমার, আবার কার? কী, ক'টা জামা হলো? কে কে দিলো?

- জামা? শার্ট না টিশার্ট কাকু?

- সব মিলিয়েই বলো না।

- সব মিলিয়ে দেব? শার্ট, টয়গান, ভিডিওগেম, পেস্ট্রি, নিকো পার্কের টিকিট?

- না না, এ কী। জামাকাপড় ক'টা পেলে পুজোয়।

- পুজোর তো এক মাস দেরি। পুজোয় কটা পাবো, সে'টা পুজোর পরে বলতে পারব।

- আরে! আমি বলছি পুজোয় পরার জন্য কে কে জামাপ্যান্ট দিয়েছে।

- কার পরার জন্য?

- ইয়ে, খোকা, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। তোমার বাবাকে চট করে একটু ডেকে দাও দেখি।

মগনলালের ফন্দী

- কিমন ফীল করছেন মিস্টার মিট্টার?

- আমাদের পরিচয় তো আর আজকের নয়। সে ভরসায় আপনাকে বলাই যায় মগনলালজি৷ এই টেলিভিশন স্টুডিওতে এসে কিঞ্চিৎ নার্ভাস বোধ করছি বটে।

- অর্জুনের নাইফথ্রোয়িং আর ঘুলঘুলির পিস্তল আপনাকে খিসকাতে পারল না..আর ইখানে এসে আপনি..হে হে হে..।

- নাহ্৷ সতিই ঘাবড়ে গেছি মশাই।

- আপনার ভয়েসে নাইফ থ্রোয়িং কা সামনা করনেওলা আঙ্কিলের টোন এসে গেছে।

- সাধে কী আর তিনি বলেছিলেন, ট্রুথ ইজ স্ট্রঙ্গার দ্যান ফিকশন।

- এলএসডি লিবেন? দু'কিউব? দেখবেন নার্ভাসনেস গন্। মগনলালের গ্যারেন্টি৷ লিবেন তো বলুন। পকেটের জর্দার ডিবেতে ও চিজ আমি হামেশা স্টক করে রাখি আজকাল।

- নাহ্, থাক।

- এশিয়াজ বেস্ট ক্রাইম ডিটেক্টিভ আউর ইতনা নার্ভাস? মগনলালের ইজ্জতের খেয়াল রাখবেন৷ ফেলু মিত্তির হামায় অ্যারেস্ট করলে, আমি প্রাউডলি বললাম হি ইজ দ্য ভেরি বেস্ট৷ কিন্তু লাইভ টিভিতে আপনার এই ডরপোক সাইড দুনিয়ার সামনে এলে সোসাইটিতে হমার বহুত বেইজ্জতি হোবে। হে হে হে হে।

- এখানে তো ব্যাপারটা পিস্তলে ছুরিতে মগজাস্ত্রে সামাল দেওয়া যাবে না মগনলালজি৷ আড়াই মিনিটে ম্যাক্সিমাম ফুচকা খাওয়া, গানের লিরিক্সে ভুল শব্দ চিনতে পারা...উফ..এরকম কতশত গোলমেলে রাউন্ড..।

- ইনসেন্টিভ ভি হ্যায়৷ আপমার মিসেস মিক্সার গ্রাইন্ডার জিতিয়ে লিবেন, পার্ল সেট জিতিয়ে লিবেন, আপনি ক্ল্যাপ দিবেন। হ্যাপি কাপল ইন বেঙ্গলস মোস্ট পপুলার টিভি গেম শো।

- কী আর বলি মগনলালজি। বলতে খানিকটা লজ্জাই হচ্ছে..।

- আরে বোলিয়ে দিন৷ বোলিয়ে দিন৷ বোঝ হালকা করিয়ে লিন৷ উই আর ওল্ড ফ্রেন্ডস। আর হামরা দুই দোস্তই তো এসেছি বেটার হাফদের কোম্পানি দেনে কে লিয়ে৷ অন আ সুপারহিট গেম শো।

- আর সে'খানেই তো..ইয়ে..দুশ্চিন্তা৷ ও বলে দিয়েছে..।

- ও? ও কউন?

- মানে ওই..।

- ওহ হো। ভাবিজি। কী বোলিয়ে দিয়েছেন?

- গেমশোতে জ্যাকপটের সোনার হারটা না হাতাতে পারলে আমার মগজাস্ত্র-মগজাস্ত্র বলে বলে বাতেলা দেওয়াটা সে ঘুচিয়ে দেবে। কী সাংঘাতিক থ্রেট, ভাবতে পারেন?

- হে হে হে..।

- হাসুন৷ আপনি তো হাসবেনই৷ লালমোহনবাবু আর তোপসেও যখন লেগপুল করতে ছাড়ল না..।

- ডোন্ট মাইন্ড মিস্টার মিটার..ভাবিজি কো...আপকে বেটার হাফ কো..ইয়ে গেমশো কা ইনভিটেশন কেন গেলো...সোচ কে দেখে হ্যায়?

- বেঙ্গলস মোস্ট আইকনিক ডিটেকটিভ আমি..কাজেই আমার বৌকে এই গেমশোয়ের কাপল স্পেশ্যাল এপিসোডে ডাকলে আমি আসব..টিআরপির খেল আর কী..।

- হে হে হে হে..। আপনি তব ভি ইনোসেন্ট ছিলেন৷ আজ ভি ইনোসেন্ট৷ লেকিন তখন আমি কেয়ারলেস ছিলাম, অভি নহি৷

- কী ব্যাপার বলুন তো?

- মিসেস ফেলু মিট্টর কো ইস গেম শো মে ইনভাইট করনে কা আইডিয়া..মেরা মগজাস্ত্র সে নিকলা হুয়া তীর...হে হে হে। নার্ভাস ফেলু মিট্টর দে দেখার ইচ্ছে ছিল, বিশ্বনাথ কে কৃপা সে সো আজ পুরা হোলো।

- ওহ্৷ বদলা নিতে এতটা নীচে নামলেন মগনলালজি?

- উ যব কাশীতে হামায় অ্যারেস্ট করা হল, আই মেড আ প্রমিস টু মাইসেল্ফ৷ হয় এর বদলা লিব, নয়ত স্মাগলিং ছেড়ে দিব। চলেন, শুটিং শুরু হবে৷ দিদি নম্বার ওয়ান মে ওয়েলকাম, রচনাদিদি এসে গেছেন৷

খেতে বসে



খাবার এলো আর হামলে পড়লাম; অমন অনাচার আমার ধাতে সয় না।

সবার আগে ছবি তুলতে হবে। মিনিমাম তিনটে অ্যাঙ্গেল। জুম ইন জুম আউট৷ এই ফিল্টার সেই ফিল্টার৷ অমুক মোড তমুক মোড৷ ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এ'সব জরুরী ব্যাপারস্যাপারের মধ্যেই মাঝেমধ্যে বেটার-হাফের Bitter-হাত এগিয়ে যায় খাবারের দিকে; অগত্যা মৃদু চাপড় দিয়ে তাকে নিরস্ত করতে হয়৷ ছবি তোলার ব্যাপারটাই যে অর্ধেক ভোজনম, সে'টা এদ্দিনেও ওকে এখনও বুঝিয়ে উঠতে পারলাম না৷ আরে দুম করে খাওয়াদাওয়া শুরু করলেই তো সব শেষ; একটু রয়েসয়ে খেল্ শুরু না করলে সমস্তটাই জলে৷

ছবিটবি তোলা হয়ে গেলে, খানিকক্ষণ সে'সব ছবির দিকে তাকিয়ে তৃপ্ত হতে হবে৷ মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে বলতে হবে, "ভায়া তন্ময়, তুমি সত্যিই সুখী"। স্বীকার করতে বাধা নেই, মাঝেমধ্যে আসল খাবারের চেয়ে ছবির খাবারের মায়াই টানে বেশি৷

যা হোক, এ'সব জরুরী ব্যায়াম পেরিয়ে; তবে গিয়ে খাবার উঠে আসবে মুখে৷ আমি অমনি সামান্য বিরক্তি নিয়ে বলব, "এরা খাবারটা সামান্য ঠাণ্ডা সার্ভ করেছে, তাই না গো"? বেটার-হাফ্ সোজাসুজি উত্তর না দিয়ে একটা ঘোঁৎ শব্দ করবে। রোম্যান্স বলতে তো এ'টুকুই।

তপস্বী



- তপস্বী..।

- মহেশ্বর! আপনি এসেছেন! আমি ধন্য..আমি ধন্য..।

- অত কথায় কাজ নেই৷ মোদ্দা কথাটা হল এই যে তোমার তপস্যায় আমি খুশি৷ এ'বার লেনদেনের ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলো৷ বলো কী বর চাই।

- আজ্ঞে, নিজের মুখে আর কী বলব দেবাদিদেব। আপনি অন্তর্যামী..।

- না না৷ ও'সব বললে হবে না। এ'টাই সিস্টেম। তোমায় চাইতে হবে। নাও, বর চাও৷ ক্যুইক। আমার আবার হাতে অত সময় নেই৷ তপস্যায় কেল্লা ফতে তো তুমি একা করোনি..। ক্যুইক!

- ইয়ে, প্রভু..আমায় অমরত্বের বর দিন প্রভু।

- ফোট্।

- আহ্, এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে..মন যেতে নাহি চায়..নাহি চায়।

- এই রে, সুরবোধ গোল্লা সে আবার শ্যামল মিত্র কচলাচ্ছে৷ আরে নিজের গলা শুনেছ? যেন জার্মান ফাইটার জেট৷ থামো থামো।

- সরি৷ সরি। আসলে মেজাজ চলে এসেছিল কিনা..।

- অমরত্বফত্ব হবেনা৷ অন্য বর চাও দেখি।

- অমরত্ব হবে না। এ তো ভারী মুশকিল হল মহেশ্বর৷ উম..উম..।

- ক্যুইক ক্যুইক।

- ইউরেকা!

- মাথায় এসেছে কিছু? চেয়ে ফেলো।

- আমার পাতে পড়া প্রতিটাই লুচিই যেন নিখুঁত ভাবে ফোলা হয়৷

- ব্রাভো বৎস, ব্রাভো! তোমার এলেম আছে বটে! সত্যিই, এর চেয়ে উত্তম স্তরের অমরত্ব আর হয়না৷ তথাস্তু।

মানুষের পাল্লায়

- হালুম!

- কী চাই?

- ও কী৷ ভয় পেলেন না যে।

- কী ব্যাপার? আপনি কে? অমন সাদা কাপড়ে নিজেকে মুড়ে নাচনকোঁদন করছেন কেন?

- আঁমিঁ ভুঁত! আঁপঁনাঁর স্বঁপ্নে এঁসেছিঁ, এঁ'বাঁর আঁপঁনাঁর পিঁলে চঁমকেঁ দেঁব...।

- যাচ্চলে। ভূতে আবার হালুম করে নাকি?

- ও৷ করে না, তাই না?

- করা উচিৎ না।

- এ তো মুশকিল হল৷ আর এই যে নাকে নাকে কথা বললাম, তা'তেও সামান্য হাড় হিম হয়ে হয়ে যায়নি কি?

- আরে ধুর৷ এ'টা কি ছেলেবেলার ট্রেনে বাবার কিনে দেওয়া ভূতের গল্পের বই নাকি৷ তা'তে মনে পড়ল, আরে আমি তো ফ্লাইটে বসে ঝিমোচ্ছিলাম। স্বপ্নটা এলো কী করে!

- এই ন্যাকামি করবেন না৷ ঝিমোচ্ছিলেন, নাকি? আরে আপনি নাক ডাকছেন মশাই। আশেপাশের প্যাসেঞ্জাররা খাপ্পা হয়ে গেছে।

- এহ্ হে৷ যাক গে। তা', উড়ন্ত প্লেনেও ভূতটূত হানা দেয়?

- প্লেন ব্যাপারটা আমাদের জন্য খুবই কমফর্টেবল।

- আর আপনারা ডাইরেক্ট ভয় না দেখিয়ে স্বপ্নে হানা দেন?

- ডাইরেক্ট ভয় দেখাতে খুব কম ভূতই পারে৷ তার জন্য গভীর সাধনার প্রয়োজন। আমার মত বেশিরভাগ ভূতই এ'রকম স্বপ্নে স্বপ্নে ঘুরে বেড়ায়। তবে স্বপ্নে উদয় হওয়াটাও চাট্টিখানি কথা নয়। বেশ পরিশ্রম লাগে।

- তা, ভয়ের ব্যাপারটা যখন কেঁচেই গেলো, একটা কথা বলুন৷ জ্যান্ত অবস্থায় আপনার পরিচয়টা কী ছিল?

- এক্সকিউজ মী৷ জ্যান্ত অবস্থায় মানেটা কী! এখন দিব্যি জ্যান্ত আছি৷ ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছি৷ আপনাদের স্বপ্নে এসে ফোঁপরদালালি করছি৷ অল ইজ ওয়েল।

- না মানে আমি ইনসাল্ট করতে চাইনি..জন্মিলে মরিতে হবে..।

- অমর কে কোথা কবে! তাই তো৷ তা আমরা ভূতরা মরি তো৷ ইন ফ্যাক্ট মরে যাওয়ার পরেই আমরা মানুষ হয়ে ছটফট করে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াই, সে'টা কে না জানে।

- আরে৷ ধুর৷ মানুষ মরে ভূত হয়৷ উল্টোটা নয়। আপনি তো আচ্ছা গাম্বাট।

- কী আজগুবি ব্যাপার৷ এ তো মহামাকাল মানুষ৷ আরে মৃত্যু মানে কী৷ সুপিরিয়র ফর্ম থেকে ইনফিরিয়র ফর্মে যাওয়া; সে'টাই তো? ভূতেরা জন্মের পর থেকেই হেসে-খেলে বেড়ায়৷ আজ এ'খানে কাল সে'খানে, শখের প্রাণ গড়ের মাঠ। এক্কেবারে হাইভোল্টেজ ফুর্তি অনবরত। তারপর মারা গিয়ে আমরা মানুষের দেহে বাঁধা পড়ি৷ তারপর বিস্তর হয়রানি৷ আর বজ্জাতি৷

- এই শুনুন! ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব কিন্তু আমার স্বপ্ন থেকে৷

- নিজের স্বপ্নের ওপর যদি অতই কন্ট্রোল থাকত, তা'হলে তো সহজেই এই এলেবেলে মানুষ ফর্ম ছেড়ে হাইক্লাস ভৌতিক জগতে চলে আসতে পারতেন। সে ক্ষমতা তো নেই।

- আপনি বলছেন ভূতজন্ম মানবজন্মের থেকে সুপিরিয়র?

- আলবাত!

- আপনাদের ইলিশ পাতুরি আছে? শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজ আছে? থাক। অহেতুক এ'সব প্রশ্ন করে আপনাকে বিব্রত করতে চাই না। এ'বার মানেমানে আমার স্বপ্ন থেকে কেটে পড়ুন দেখি৷ ঘুমটা সবে জমে উঠেছে। লেট মি ফোকাস।

- মানুষবাবু। আপনার প্রশ্নগুলো অহেতুক কিনা জানি না৷ তবে এ'বার আমি একটা কথা বলি। আপনার কথাই বলি৷ আপনি নিজের মেয়েকে দেখতে উড়ে যাচ্ছেন৷ আপনার খুকির সদ্য বিয়ে হয়েছে, শিক্ষিত পরিবারের সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্রের সঙ্গে। সে ভদ্রপরিবারে আপনার সেই ফুলের মত মেয়েটিকে রোজ খোঁটা শুনতে হয় কারণ তার বাবা নাকি বিয়েতে যথেষ্ট খরচ করেনি। সেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে আর মেয়ের সম্মান বাঁচাতে আপনি ছুটেছেন দু'বাক্স উপঢৌকনসহ। যদিও তা'তেও শেষরক্ষা হবে বলে মনে হয়না। আপনার কি সতিই ধারণা যে মানুষের মরে ভূত হওয়ার প্রসেসটা আসলে সুপরিয়র থেকে ইনফিরিয়র প্লেনে নেমে যাওয়া?

- আমার..আমার কেমন ভয় করছে ভূতবাবু৷ গলাটা শুকিয়ে আসছে, বুকের ভিতর কেমন একটা..কেমন একটা আনচান। আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দেবেন প্লীজ?

- ভয় পাওয়াতেই এসেছিলাম বটে। তবে, এ'ভাবে নয়। আপনি ঘামছেন মানুষবাবু; আমার মত ভূতের ভয়ে নয়, মানুষের ভয়ে৷ যাক। নো হার্ড ফিলিংস প্লীজ। এই মাত্র একটা টার্বুলেন্সে ফেলে দিচ্ছি এই প্লেনটাকে৷ স্বপ্ন ভেঙে যাবে। আর, খুকিকে ভালো রাখবেন, কেমন? আমি আসি।

বম্বের বাবু



- এই যে, ভাইটি৷ এ'দিকে এসো দেখি।

- কী ব্যাপার বলুন তো..।

- কী, আজ নাকি গাড়ি আনা হয়নি৷ আর অফিস বাসও হাতছাড়া হয়েছে?

- হেহ্। ওই আর কী।

- তা ফেরা হবে কী করে?

- ওই। উবার। বা অটো ধরে..।

- বলো কী হে!

- আগেও গেছি তো।

- আগে বহুবার ভুল করেছ বলে কি সে'টাকেই হ্যাবিটে কনভার্ট করতে হবে? এ কী ভোট দেওয়া নাকি?

- আমি বুঝলাম না।

- ট্রেন থাকতে আবার ও'সব ছাইপাঁশের দিকে যাওয়া কেন।

- ট্রেন..আসলে..হয়েছে কী..।

- কিছু হয়নি। আমি বলছি কী হবে। আজ ট্রেন।

- কিন্তু..।

- ট্রেন।

- না শুনুন..।

- কী দরকার নিজেকে অযথা চাবকানোর? ট্রেন৷

- বেশ। আজ তবে ট্রেন। রুটটা তা'হলে একটু...।

- এই হচ্ছে কথার মত কথা৷ এ'বারে শোনো.. এ'খান থেকে শেয়র অটো..।

- অটো।

- মিটারে না। শেয়র অটো। বান্দ্রা স্টেশন পর্যন্ত।

- শেয়র অটোয় বান্দ্রা।

- টার্মিনাস নয় কিন্ত।

- এই সেরেছে। বান্দ্রার ক'টা স্টেশন?

- ডোবাবে দেখছি৷ শেয়র অটো বান্দ্রা স্টেশন বলে যে'খানে নামাবে নামবে৷ কেমন?

- ওউক্কে।

- অটোয় বসেই অনলাইন টিকিট কেটে নেবে৷ ইউটিএস অ্যাপ।

- যো হুকুম।

- কোন টিকিট কাটবে?

- এই রে। ওই। বান্দ্রা টু যোগেশ্বরী।

- কোন ক্যাটেগরি?

- এই রে..সেরেছে..ভালো দেখে একটা..।

- এসি টিকিট কাটবে?

- এসি আছে?

- আলবাত। বম্বের ব্যাপারই আলাদা।

- বাহ্। তা'হলে এসির টিকিটই কাটব।

- তোমার মুণ্ডু।

- যাচ্চলে।

- এসি ট্রেনের অপেক্ষায় বসে রইলে ঝুলে যাবে। ডেলিপ্যাসেঞ্জারিরে স্পীড ইস অফ দ্য এসেন্স। এসি উইল স্লো ইউ ডাউন।

- তা'হলে এসি বাদ?

- আলবাত। সোজা এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে গিয়ে স্লো ট্রেন ধরবে।

- স্লো ট্রেন ধরব?

- টু রীচ ফাস্টার৷ সবই খেল অফ ফ্রিকুয়েন্সি। পরপর স্লো ঢুকবে..।

- বেশ৷ স্লোয়ের টিকিট কেটে সোজা প্ল্যাটফর্ম নম্বর এক।

- বাহ্। এইত্তো৷ ইয়ে, তোমার নরম শরীর। ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কেটো৷

- আচ্ছা। বেশ৷ শেয়র অটো৷ বান্দ্রা স্টেশন। এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম। স্লোয়ের ফার্স্ট ক্লাস টিকিট৷

- বাহ্। দশে দশ৷ তবে ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট সঙ্গে রেখে যে'খানে চান্স পাবে উঠে যেও৷ মিনিট পনেরোর তো ব্যাপার।

- আচ্ছা।

- নার্ভাস?

- না মানে..।

- ফোকাস। তুমি প্ল্যাটফর্মে। তুমি দেখলে ভিরার লোকাল ঢুকলো। দিব্যি সে'টা যোগেশ্বরী যাবে।

- তা'হলে আর কী৷ সুট করে উঠে যাব।

- না। উঠবে না৷ তোমার সইবে না।

- সইবে না?

- সে ট্রেন তোমায় চিবিয়ে ছিবিড়ে করে জাস্ট ফেলে দেবে৷ আর ক'দিন যাক৷ বম্বের হাওয়ায় শরীর-মন তৈরি হোক। তারপর ভিরারে ঝুলে পড়বে'খন৷ আপাতত বোরিভলির লোকাল এলে তবে উঠবে। কেমন?

- (চোয়াল শক্ত) বেশ। তাই হোক৷ আজ তবে ট্রেন৷ কী বলেন?

- সাবাশ ব্রাদার! সাবাশ! ও হ্যাঁ। মাস পাঁচেক হল তুমি মুম্বইতে এসেছো। এদ্দিন মন থেকে যে কথাটা তোমায় বলা হয়নি ব্রাদার, আজ বলি৷ ওয়েলকাম টু আওয়ার সিটি। ওয়েলকাম!