- আরে! অরিন্দমবাবু যে। আসুন আসুন। কী সৌভাগ্য৷ কদ্দিন পর এ'পাড়ায় এলেন বলুন দেখি?
- আসলে সমরেশবাবু..।
- কথা পরে৷ কথা পরে৷ আগে চা বলি? চাও খাবেন না বললে শুনছি না কিন্তু।
- সঙ্গে একটা ফিশফ্রাই? প্লীজ না বলবেন না৷
- না না৷ দুপুরে ভরপেট ভাত খেয়ে বেরিয়েছি..।
- ওউক্কে। বিশে, চট করে দু'কাপ চা দিয়ে যা৷ দেখিস, স্পেশ্যালটা আনিস। আর ইয়ে, চারটে ওই জিরে দেওয়া বিস্কুট আনিস তো৷
- সমরেশবাবু..।
- আপনার নতুন ফিল্মের পোস্টারটা দেখেছেন তো? গোটা শহরজুড়ে এক্কেবারে হইহইরইরই লেগে গেছে..। এখনও রিলীজ হল না অথচ ইতিমধ্যেই বম্বে থেকে রাইট চেয়ে কতগুলো চিঠি পেয়েছি জানেন? প্রডিউসার হিসেবে এ যে কী গর্বের ব্যাপার..।
- আমার ফিল্ম? এ'সব শুনলে আজকাল হাসি পায়।
- পোস্টারে তো আপনার হাসির জেল্লাই কামাল করেছে৷ ফিমেল পপুলেশন তো শুনেছি হলে উপচে পড়ার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে আছে মশাই৷ আসুন, চা।
- ওই হাসি আমার নয়৷ ও'টাও আমি নই।
- আহ্৷ মানছি আপনার এআই অবতার নিয়েই ফিল্মের কাজ হয়েছে৷ কিন্তু ইন্সপিরেশন তো আপনিই৷ রয়্যালটিও আপনারই প্রাপ্য৷ পায়ের ওপর পা তুলে বসে যে টাকাটা আয় করছেন, সে'টাও তো নেহাৎ কম নয়৷ কী বলেন?
- সমরেশবাবু! আমি অভিনেতা! অভিনয় করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, একের পর এক নতুন চরিত্রে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে, দর্শকের হাততালি কুড়িয়ে; তবে আমার রোজগার করার কথা৷ অথচ গত আড়াই বছরে একদিনও আমি শুটিং ফ্লোরে যাইনি। আমায় বাঁচান আপনি..।
- স্ট্রেইঞ্জ৷ ফ্লোরে না গিয়ে টাকা গুনছেন, ইউ শুড বি মাইটি প্লীজড।
- আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে যে৷ রঞ্জনবাবু, বা দীপক সামন্তদের মত ক্যারেক্টার আর্টিস্ট তো বেশ করে খাচ্ছেন।
- ওদের এআই অবতারগুলো বাজার খেলো না। তাই তাদের এখনও গায়েগতরে খাটতে হচ্ছে। কিন্তু আপনি কামাল করে দিলেন৷
- গোড়ার দিকে আমি ঠিক ভাবতে পারিনি যে এই এআই ব্যাপারটা এমন হাতের বাইরে চলে যাবে..।
- মিথ্যে বলব না, ভালোবেসে ফকির সিনেমায় যখন প্রথমবার আপনার এআই অবতার ব্যবহার করলাম, নিন্দের যা ঝড় উঠেছিল তা'তে ঘাবড়েই গেছিলাম৷ অমন মায়াবী হাসি নাকি এআই দিয়ে রিক্রিয়েট করা যাবে না। সে কী'সব ওপিনিওন। বাঙালির হার্টথ্রব অরিন্দমের ক্যারিস্মা নাকি এআই-য়ের মাধ্যমে তুলে ধরা অসম্ভব৷ আমরা নাকি অভিনয়ের আর্টটাকে খুন করছি৷ উফ! মিডিয়া, দর্শক, ক্রিটিক; সক্কলে মিলে কয়েক হপ্তা আমাদের কী ধোলাইটাই না দিলে৷ অথচ দেখুন, স্রেফ কয়েক হপ্তার মধ্যেই সবাই আপনার এআই অবতারে কেমন মজলে।
- সমরেশবাবু। প্লীজ, আমায় একটা সুযোগ দিন। একবার আমায় ফ্লোরে নেমে নিজেকে প্রমাণ করতে দিন..।
- অরিন্দমবাবু৷ কেন আমাদের লজ্জায় ফেলছেন।
- প্লীজ৷ আমি শিওর আমি আবার স্ক্রিন মাতিয়ে ফেলতে পারব..।
- আমার বলতে খারাপ লাগছে অরিন্দমবাবু৷ কিন্তু ইউ আর ডিলিউডিং ইওরসেল্ফ। আপনি নিজেকে ঠকাচ্ছেন৷ আজকালকার দর্শক মহানায়কের মধ্যে যে ফ্লেক্সিবিলিটি দেখতে চায় সেই ব্যাপ্তি অফার করা আপনার পক্ষে পসিবল না৷ শুনুন, আমার পরের ফিল্ম- কলকাতায় গডজিলা; সে'খানে জ্যাপানিজ টুরিস্টের ভূমিকায় অভিনয় করছে আপনার নতুন এআই অবতার। নিখুঁত জাপানি চেহারা, নির্ভুল উচ্চারণ, শানানো হাবভাব; অথচ আপনার লেডিকিলার স্পেশ্যাল স্টাইলটা বাদ যাচ্ছে না৷ অন টপ অফ ইট; আপনি বাড়ি বসে পাচ্ছেন রয়্যালটির মোটা টাকা। উইন উইন।
- বেশ। শুনুন সমরেশবাবু৷ আমি ঠিক করেছি আমার এআই অবতার ব্যবহার করার পারমিশন আর দেব না।
- এক্সকিউজ মি?
- ঠিকই শুনেছেন৷ অভিনয়ের সুযোগ না পেলে আমার চেহারা বা নাম আমি কোনও সিনেমায় ব্যবহার করতে দেব না।
- কিছু মনে করবেন না মিস্টার অরিন্দম৷ ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে রয়্যালটি অফার করে আউট অফ রেস্পেক্ট৷ বাধ্য হয়ে নয়। এককালে আপনি ইন্ডাস্ট্রিকে টেনেছেন৷ তাই সামান্য প্রণামী আপনার পকেটে গুঁজে দেওয়া হয়৷ আপনি যদি নিজের অবতার ব্যবহারের অনুমতি না দেন, সে অবতারের হাসি নাক চোখ সামান্য পালটে আমরা তাকে অরিন্দম থেকে অরুণকুমার করে নেব। আইনি মারপ্যাঁচ পাশ কাটানো গেল, আর পাবলিকেরও তা'তে কিছু এসেযাবে না। আপনি ত্যাঁদড়ামো করলে আমরা চুপ করে বসে থাকব কেন বলুন..।
- কী বলছেন আপনি সমরেশবাবু..।
- ঠিকই শুনেছেন৷ চায়ের কাপটা অনেকক্ষণ পড়ে আছে৷ এক চুমুকে শেষ করে এ'বার আসুন৷ আমার বিস্তর কাজ জমে আছে।
No comments:
Post a Comment