অঙ্কে একের পর এক হোঁচট খেয়ে বড় হলাম৷ অঙ্ক পরীক্ষাকে ভয়, অঙ্ক ক্লাসকে ভয়, অঙ্ক বইকে ভয়, অঙ্ক খাতাকে ভয়৷ অথচ কী আশ্চর্য, বুড়ো বয়সে এসে মনে হচ্ছে; এহ্ হে, অঙ্ক ব্যাপারটা তেমন গোলমেলে হয়ত ছিল না। আমিই বরং সময়মত ব্যাপারটাকে ভালোবাসতে না পেরে অযথা গোলমাল পাকিয়ে ফেললাম৷ মাঝখান থেকে সিস্টেম আর সিলেবাসের খুঁত ধরে হাজার বছর কাটিয়ে দিলাম; অকারণ, অযথা৷ অবশ্য এখনও যে অঙ্কদাদা "টাটা" বলে মুখ বেঁকিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে তা নয়, শেখার আবার বয়স কীসের৷ তবু৷ কৈশোরে অঙ্কের লজিক বুঝে মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ আর নেই৷ ও বয়সে যেমন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে "আইব্বাস" বলা যায়, তা এই 'এগরোলে অম্বল' বয়সে হবে না৷
কত ভালোবাসা যে তোলা থাকল৷
ছেলেবেলায় একজন মাস্টারমশাইয়ের কাছে ক'দিন আঁকা শিখেছিলাম। কী বিপত্তি; শিখতে শুরু করার কিছুদিনের মাথায় আঁকার ক্লাস শুনলেই গায়ে জ্বর আসত৷ গেল আঁকা, রইলাম পড়ে বেকুব হয়ে৷ পরে এক সময় মনে হত, আমার আর কী এমন দোষ- সেই মাস্টারমশাইই পারেননি আমার মনের মধ্যে আঁকার প্রতি ভালোবাসা ঢুকিয়ে দিতে৷ কিন্তু স্বীকার করে নিই। এই আধবুড়ো বয়সে মিটিংয়ের আবডালে রাইটিং প্যাডে 'ডুডল' করতে করতে টের পাই, আঁকাআঁকি ভালোবাসতে না পারার দায় মাস্টারমশাইয়ের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়াটা নেহাতই আহাম্মকের কাজ। কোনও কিছু মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে আবার মাস্টারমশাইয়ের পিঠ চাপড়ানির দরকার হয় নাকি?
ওই। কত ভালোবাসার সম্ভাবনা জমেছিল, সে'সব বড় অবহেলায় ভাসিয়ে দিলাম। আঁকা আর অঙ্কের মত কত মানুষ, কত মুহূর্তকে আগলে রাখার কথা ছিল৷ তাও বা হল কই৷ এই ভেসে যাওয়া ভালোবাসাগুলো সবার জীবনেই থাকে হয়ত৷ তবু৷ সে'গুলোর ফর্দ করতে বসলে বুক ছ্যাঁত করে ওঠে৷
সেই ছ্যাঁতটুকু অবশ্য নেহাৎ ফেলনা নয়৷ এর পাশাপাশি আঁকড়ে ধরতে না পারার অপরাধবোধটুকু আছে,
চোয়াল শক্ত করে কোনও কিছু চাইতে না পারার হতাশাটুকু আছে।
আর এ'গুলো অল্পবিস্তর যদ্দিন আছে, তদ্দিন নিজের ব্যাপারে এক্কেবারে হাল ছেড়ে দেওয়ার কোনও মানেই হয় না৷
No comments:
Post a Comment