- আজ আর স্রেফ ঝোলভাতে ডিনার সারতে ইচ্ছে করছে না, বুঝলে ভাই তাপস?
- ঠিক বলেছেন রঞ্জুদা। ব্যাচেলরদের গেরস্তালি বলে কি মুর্গির ঝোল ডিমের মামলেটেই আটকে থাকতে হবে? আরে তা তো আর কন্সটিটিউশনে লেখা নেই। হোক আজ ডিনারে চর্ব্যচোষ্য। আর আগাগোড়াই কিন্তু হোমমেড হতে হবে।
- দ্যাটস দ্য স্পিরিট ভাইটি৷ দ্যাটস দ্য স্পিরিট৷ যাই, গিয়ে আধকিলো মাটন নিয়ে আসি। ইয়ে, বাড়িয়ে মাটির হাঁড়ি আছে? না থাকলে ক্ষতি নেই৷ ফেরার পথে আমিই নিয়ে আসব৷ দেখবে হাইক্লাস চম্পারন মাটন কী অমৃতসম একটা ব্যাপার। আমার রেসিপিতে অবশ্য একটা স্পেশ্যাল ট্যুইস্ট আছে; মেজপিসের থেকে শেখা৷ ভদ্রলোক পাটনায় পাঁচবছর কন্ট্রাক্টরি করেছিলেন কিনা।
- বাজার যাচ্ছেন যখন অল্প কুচো চিংড়ি নিয়ে আসবেন তো৷ পটল চিংড়ি বানাবো৷ চিরকাল তো আমার হাতের ট্যালট্যালে ঝোলই খেলেন৷ আজ দেখবেন আমার হাতের আসল ম্যাজিক।
- বাহ্ বাহ্। তা গতকাল তুমি আমসত্ত্ব এনেছিলে না তাপস?
- হ্যাঁ, ট্রেন উঠেছিল৷ ভাবলাম রোজ রাত্রে খাওয়ার পর এক টুকরো মুখে দিলে মন্দ হয় না।
- কিছু মনে কোরো না, তোমার স্টকের আমসত্ত্ব কনজিউম করে আমি চাটনি বানাবো।
- আরে এ'তে মনে করার কী আছে৷ এ তো অতি উত্তম প্রস্তাব৷ আমিও তা'হলে আর একটা আইটম জুড়ে দিই?
- জুড়বে? ভালো কথা৷ কী জুড়বে?
- পাঁপড়ের পাঁচমেশালি তরকারি৷ গুজরাতি রান্না তবে ও'তে আমি বাঙালি স্পিরিট ইঞ্জেক্ট করেছি রঞ্জুদা৷ গ্যারেন্টি দিয়ে বলতে পারি, ও জিনিস দিয়েই আপনি মিনিমাম আধ-থালা ভাত উড়িয়ে দেবেন।
- বলছ?
- বললাম তো, গ্যারেন্টি৷
- অতি উত্তম৷ তা'হলে মেনু দাঁড়ালো গিয়ে পাঁপড় পাঁচমেশালি, পটল চিংড়ি, পাঁঠার চম্পারনি ঝোল, আমসত্ত্বর চাটনি৷ আর একটা জিনিস ভায়া। আমি বাজার সেরে আনতে আনতে, হরিহর সুইটস থেকে এক হাঁড়ি রসগোল্লা নিয়ে এসো৷ থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি কভার হবে।
- বেশ তো৷ এক হাঁড়ি গরম রসগোল্লা আর একবাক্স নলেন গুড়ের সন্দেশ৷ কী বলেন?
- তোফা তোফা তোফা। আহা, কী জানো ভাই তাপস৷ আমার ওই ছোটছেলেটা..আরে ওই বল্টে..কলকাতার সন্দেশ শুনলেই তার জিভ দিয়ে লালা গড়ায়৷ ভারী লোভ সে ব্যাটার ও জিনিসে। হে হে হে।
- আর বলেন কেন৷ আমার মেয়েটা তো মাটন পেলে আর পাতে কিচ্ছু নেবে না৷ রঞ্জুদা, একবার ছুটির আগে ওই চম্পারনি মাংস রাঁধবেন তো৷ ফুলির জন্য টিফিন ক্যারিয়ারে করে নিয়ে যাব৷ নির্ঘাৎ ওই জিনিস সে আগে খায়নি।
- অতি অবশ্যই! অতি অবশ্যই! তোমার পাঁপড় পাঁচমেশালিটা আমি আবার আমার গিন্নীকে টেস্ট করাতে চাই বুঝলে৷ কোনও রকম কুকিং এক্সপেরিমেন্টে তার এত অনীহা। এ জিনিস ওকে খাইয়ে চমক দেব।
- রঞ্জুদা, আমি কিন্তু বৌদির জন্য পটল চিংড়িও সামান্য প্যাক করে দেব৷ শুধু নিরামিষ জিনিস পাঠাতে ভাল্লাগবে না৷
- বেশ তো৷ বেশ তো। দিও'খন।
- হুম। তা'হলে...।
- ভায়া তাপস, এ মাসের শেষে তো আমরা দু'জনেই বাড়ি যাচ্ছি। তা'হলে রান্নাবান্নাটা বরং তার আগের দিনই করা যাবে? প্লাস ওই মিষ্টি কেনাকাটি৷ কী বলো? বাড়িতে ওরাও যদি খায়, তবে আমাদের রান্নাবান্নার মেগা আয়োজনটা আর একটু কদর পাবে৷ কী বলো?
- রঞ্জুদা! হিন্দীতে যাকে বলে দিল জিত লিয়া আপনে।
- তা'হলে তাই হোক৷
- হোক হোক।
- আজ কি তবে সেদ্ধভাত ভাই তাপস?
- গতকাল ছ'প্যাকেট ম্যাগি এনেছি৷ গর্ব করেই বলি, আপনি জানেন আমি অন্তত সতেরো রকমের ম্যাগির রেসিপি জানি?
- তুমিই সত্যিই গুণধর হে তাপস। তাই হোক। আমি বরং তোমার জন্য স্পেশ্যাল মিষ্টি পান কিনে আনি।
- থ্রি চিয়ার্স! হিপ হিপ..।
- ...হুররে!
No comments:
Post a Comment