- পল্টুদা৷ চটপট ছাড়িয়ে দাও। এক জোড়া।
- শুধু পোল্ট্রির ডিম পড়ে আছে।
- তাই দাও। ডিম হলেই হলো৷ প্রোটিন দরকার, চটপট।
- পেঁয়াজলঙ্কা দিই?
- সেই রোজ একই প্রশ্ন৷ শুধু পেঁয়াজ। আর বিটনুন।
- এই যে।
- (কামড় দিয়ে) আহ্! জব্বর খিদে পেয়েছিল গো।
- ভট্টাই, এ'সব কাজ এ'বার ছাড় না।
- কয়লাচুরিটা এখন রক্তে মিশে গেছে পল্টুদা। এ আর এখন আমি ছাড়তে পারব না।
- গতমাসে পুলিশের হাতে কী মারটাই না খেলি। তুই পাড়ার ছেলে, কচি বয়স থেকে দেখছি৷ আমার খারাপ লাগে। সত্যি করে বল দেখি, সত্যিই কি এ'সব না করলে তুই খেতে পাবি না?
- পল্টুদা৷ মাইরি। এককালে সে'জন্য করতাম হয়ত। এখন ভাল্লাগে তাই করি৷ ভালো লাগা উচিৎ না বটে৷ তবু। কড়কড়ে নোটগুলো রোজ পকেটে গোঁজা, এ'টা একটা নেশার মত ব্যাপার।
- তুই কোনও কালেই এ কাজ পেটের দায়ে করিসনি। পেটের দায়ে মানুষে রাত দু'টোর সময় কয়লাচোর আর মাস্তানদের জন্য ডিমসেদ্ধ বিক্রি করে; নিজে কয়লাচোর আর মাস্তান হয় না।
- হে হে হে। তুমি একটা চিজ মাইরি পল্টুদা।
- আর একটু পেঁয়াজকুচি নিবি? বাটির পুরো পেঁয়াজটা তো একটা ডিমেই উড়িয়ে দিলি।
- দেবে? দাও।
- এই যে।
- পল্টুদা৷ আই লাভ ইউ।
- আজ কত কামালি?
- দিনটা ভালো। সাড়ে সাতশো পেয়েছি৷ আজ তোমার আমি উপরি দেব৷ দশটাকা এক্সট্রা।
- আমি বিজনেসম্যান৷ তোলাবাজ নই।
- আচ্ছা উপরি নয়, টিপস৷ টিপস। রিফিউজ কোরো না।
- অনেক তো হল৷ এ'বার আমার পাশে রোজ রাত্রিবেলা এক ডেকচি ঘুগনি নিয়ে বস৷ দেখবি, দু'তিন ঘণ্টায় উড়ে যাবে রোজ৷ ডিমসেদ্ধর পার্ফেক্ট পার্টনার কিনা।
- এই অফারটা তুমি আমায় হপ্তায় অন্তত বার তিনেক তো দিয়েই দাও। আজ পর্যন্ত অন্তত হাজার খানেক বার বলে ফেলেছ। মাইরি,তোমার ধৈর্য আছে বটে।
- হে হে। বছর কুড়ি হলো রোজ রাত্রে অজস্র ডিমের খোসা ছাড়িয়ে আসছি, আমার ধৈর্য্য এখন অসীম। কাজেই যখনই চোরাই কয়লা বেচে এই মাঝরাত্রে আমার দোকানে আসবি ডিম খেতে, তখনই বলব৷
- হে হে হে। কী জানো পল্টুদা। সে জন্যই তোমার কাছে আসা। মনের কোণে সামান্য একটা আশা এখনও আছে; একদিন হঠাৎ তোমার কথা শুনে ঘুগনির ডেকচি কাঁধে তুলে নেব। বলা তো যায় না, কোনও একদিন আচমকাই হয়ত ডিম-স্পেশ্যাল রামকেষ্টর কয়লা-নরেন হয়ে, বাবা ঘুগনিনন্দ নাম নিয়ে; দুনিয়া কাঁপিয়ে ফেলব।
- আজ বলব নাকি? মাংসের ঘুগনির রেসিপি? প্রমাণ সাইজ ডেকচির দোকান কোথায় আছে জানিস? খোঁজ দেব?
- হবে হবে৷ তাই হবে একদিন৷ তবে এখনও সে সময় আসেনি। আজ থাক।
- বেশ৷ তবে দেখিস ভট্টাই, একদিন তুই ঘুগনি নিয়ে বসবি৷ এ'খানে, আমারই পাশে। আর যবে বসবি, সে'দিন তোর হোমওয়ার্ক হবে যদু পকেটমারের পিছনে আদাজল খেয়ে লেগে পড়া৷ ডিমসেদ্ধর দোকান আর ঘুগনির ঠেলার পাশে একটা চায়ের গুমটিও তো বসাতে হবে! তাই না?
No comments:
Post a Comment