- অমর, তুমি ভেবেছটা কী? তুমি যা ইচ্ছে তাই করবে আর আমি সব মেনে নেব?
- দেখুন বাবা, আমি কাজেকর্মে ফাঁকি দিই না৷ এ বাড়ির সমস্ত নিয়মিকানুন মেনে চলি৷ এরপরেও যদি আপনি এ'ভাবে কথা বলেন..।
- কী করবে..গৃহত্যাগ করবে? তাই করো৷ তা'তেই এ বংশের মঙ্গল। তোমার মত কুলাঙ্গারের জন্যই আজ আমাদের ফ্যামিলি রেপুটেশন তলানিতে এসে ঠেকেছে৷ কোন মুখে তুমি বলো যে এ বাড়ির সমস্ত নিয়মকানুন তুমি মেনে চলো? যদি সত্যিই মেনে চলতে তা'হলে তো এ তর্কে আমায় জড়াতেই হত না৷
- মহালয়ার দিন তর্পণ দেখতে যাওয়াটা এ পরিবারের জন্য নিয়মবিরুদ্ধ?
- আলবাত তাই৷ এ'টা শুধু বেনিয়মই নয়, রীতিমতো স্ক্যান্ডালাস! বিজ্ঞানমনস্কতা এ বংশের ঐতিহ্য৷ গত পাঁচ-সাত জেনারেশনে কোনও অর্থহীন আচার-ব্যবহার আর অন্ধবিশ্বাসের অন্ধকার আমাদের স্পর্শ করতে পারেনি। আর আজ শুনি আমার ছেলে বড় গলায় বলছে সে তর্পণের আসরে যাবে৷ তোমার লজ্জা করল না?
- না। এতে লজ্জার কী আছে৷
- বাহ্৷ গলায় আবার তেজও এসেছে দেখছি৷
- কোনও অন্যায় যখন করছি না, তখন দমে থাকব কেন?
- অন্ধবিশ্বাসে মদত দেওয়াটা অন্যায় নয়? তুমি অস্বীকার করতে পারো নদীতে নেমে অংবংচং মন্ত্রপাঠ করার সঙ্গে পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান জানানোর কোনও সম্পর্কই নেই? ব্যাপারটা গোটাটাই আনসাইন্টিফিক! যদি এ'টায় কোনও যুক্তি থাকত, তবে দুনিয়ার সবাই তাই করত৷ অবিশ্যি এ'সব সুপারস্টিশন বিভিন্ন রঙে দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে৷ কিন্তু এখনও যে' ক'জন যুক্তিবাদী পড়ে আছে, তাদেরও যদি এমন অধ:পতন ঘটে..।
- গোটা ব্যাপারটাই তো কালচারাল৷ সে অর্থে তো প্রণাম জানানোটাও অর্থহীন বাবা৷ সেলাম, হ্যান্ডশেক বা মিলিটারি স্যালুটও অদরকারি।
- আমি বাজে তর্কে সময় নষ্ট করতে চাইনা৷ যদি তুমি সত্যিই তর্পণ টুরিজমে যাও, তা'হলে আর বাড়িতে ফিরতে যেও না।
- দাদুরও কি তাই মত? বা বড়দাদুর?
- তুমি আমার ছেলে। দাদু বা বড়দাদুর নও। তোমার ব্যাপারে আমার মতামতটাই শেষ কথা।
- বেশ। আমি আসি বাবা।
- অমর, তোমার এত জেদ? কিছুতেই তুমি আমার কথা শুনবে না?
- অনুপ আজ তর্পণ করতে আসছে বাবা৷
- তোমার ছেলেটাও তো যা দেখি গোল্লায় গেছে। তা বলে তুমিও..।
- অনুপ ইজ আ বিলীভার। তবে ওর মধ্যে স্নেহমায়ার অভাব তো দেখিনা। আর আমার ব্যাপারে যদি আপনার মতামতটাই শেষ কথা হয়, তা'হলে অনুপের ব্যাপারেও শেষ কথাটা না হয় আমিই বলব।
- পুত্রস্নেহে তুমি অন্ধ হয়ে গেছ৷ রাস্কেল!
- গোঁড়ামিতে অন্ধ হওয়ার থেকে স্নেহে অন্ধ হওয়াটা অনেক ভালো।
- বাহ্। লজিকের প্রতি আমার আস্থাটা গোঁড়ামি হল? তোমায় সন্তান বলে পরিচয় দিতে আমার লজ্জা করে। শেষবারের মত বলছি, অনুপের তর্পণে যদি তুমি সাড়া দাও; সে'টা ঘোর অন্যায় হবে।
- স্নেহের টানে পাশে গিয়ে দাঁড়ানোটা অন্যায় হলে হোক৷ অনুপ সে টানেই আজ গঙ্গায় এসে দাঁড়াবে। জানেন বাবা, আজ আফশোস হচ্ছে একটা কথা ভেবে৷ হয়ত, আমি যদি বেঁচে থাকতে আপনার হয়ে তর্পণ করতাম, তা'হলে আপনার গোঁড়ামিটা একটু হলেও কমত। এই যেমন আমি জানি তর্পণ ব্যাপারটা ইলজিকাল হলেও, খোকার ডাকে সাড়া দেওয়াটা অনর্থক নয়৷ সে বোধদয় আর আপনার হবে না। আমি আসি, অনুপ জলে নামছে। এ সময়টা ওর পাশেপাশে হাওয়ার মত না থাকলে এমন সুন্দর সকালটাই মাটি।
No comments:
Post a Comment