বান্দ্রা স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে স্লো বোরিভলি লোকাল ধরে যোগেশ্বেরী। ও পথে আমায় মাঝেমধ্যেই ভিড়তে হয়৷ অফিস-ফেরতা সন্ধ্যে, মারাত্মক ভিড়। সে ভিড়ের চাপ মজবুত ভাবে ঠেকিয়ে রাখতে আমার অস্ত্র হলো দশটাকার এক প্যাকেট গরম চীনেবাদাম।
বান্দ্রা-কুর্লা কম্পলেক্স থেকে আসা শেয়ারড ট্যাক্সিগুলো এসে দাঁড়ায় স্টেশন লাগোয়া চত্ত্বরে। সে ট্যাক্সি থেকে নামতেই পেটটা বাদামের খিদেতে চিঁচিঁ করে ওঠে। দু-তিনটে ঠেলা দাঁড়িয়ে থাকে, তারা বালিতে ভাজা বাদামের সুবাস উড়িয়ে প্ল্যাটফর্মমুখী জনসমুদ্রের মধ্যে চনমন ছড়িয়ে দেয়।
হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও একটা বাদামভাজা ঠেলার সামনে না দাঁড়ালেই নয়। ও'টা আমার অভ্যাস। তারপর টুপটাপ এক-একটা বাদাম মুখে ফেলে ওভারব্রিজের সিঁড়ি বেয়ে উঠে গিয়ে প্ল্যাটফর্ম নম্বর একে নেম পড়া।
কানের ইয়ারফোনে বাছাই করা গান, চোয়ালে বাদাম-চিবোনো দুলকি। গোটা ব্যাপারটা মিলিমিশে তৈরি হয় 'মিউজিক'। প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষা করতে করতে একটা ব্যাপার মাঝেমধ্যেই টের পাই; জামার ঘাম আর শরীরের ক্লান্তি ছাপিয়ে যে'টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে সে'টা হলো পেল্লায় শহরের পেল্লায় বোলচাল দেখে ভেবড়ে যাওয়া।
কলেজে ভর্তি হয়ে যখন মফস্বল থেকে কলকাতা এসেছিলাম; চোখে-প্রাণে ঝিলিক লেগে গেছিল। এত এত মানুষ, ইয়াব্বড় বড় রাস্তাঘাট, বিশাল বিশাল বাড়িঘরদোর। ঘিঞ্জি অথচ পিলে চমকে দেওয়া। সে ঝিলিক আজও ফিকে হয়ে যায়নি। তারপর এ শহর থেকে ও শহর তো নেহাৎ কম হলো না। কিন্তু এ বয়সেও শহুরে ভীড়ের বহর দেখলে পিলে চমকে ওঠে। মুগ্ধ হই, অল্পবিস্তর ভয়ও টের পাই৷
শহর ব্যাপারটাই বড্ড মায়ার। অথচ কোনো শহরেই আমার পাড়া নেই। স্রেফ মানুষজনের ভিড়ে, রাস্তাঘাটের হইহইরইরইতে আর ট্রেন-বাসের দৌড়ঝাঁপে আমার মুগ্ধতা আছে৷ আর আছে বিষণ্নতা।
No comments:
Post a Comment