একটা ভুল-ভুল রঙের টেবিল।
একটা কেতহীন ভুল-চেয়ারে বসে সে টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে ভুলকবিতার খাতায় খসখস করে লিখে যাচ্ছিলেন ভুলু দাস।
"ভুল" শিরোনামের একটা কবিতা মাথায় এসেছে। (জরুরী কথাটা বলতে ভুলে গেলে চলবে না; ভুলু আজ পর্যন্ত অন্তত তেরোশো কবিতা লিখেছেন - প্রত্যেকটার শিরোনামই "ভুল")। মাথায় কবিতা এলে, ভুলেও অন্যকোনোদিকে ঘেঁষেন না ভদ্রলোক। আর ভুলুবাবুকে যারাই ব্যক্তিগতভাবে চেনে তারা জানে যে কবিতা চেপে ধরলেই কেমন নেশাগ্রস্তের মত হয়ে পড়েন তিনি।
এই কবিতার নেশাটা সাধারণত এই "না বিকেল-না সন্ধে" গোছের সময়টাতেই চাগাড় দেয়৷ তাই দিনের এ সময়টাকে কিঞ্চিৎ সমঝে চলেন ভুলুকবি৷ আধ-বিকেল আধ-সন্ধে মার্কা এই সময়টাকে ভুললগ্ন বলাটা অত্যুক্তি হবে কি?
লেখা শেষ হতে কোনোদিন মিনিট পাঁচেক লাগে৷ কখনও পাঁচ মাস ধরে একই ভুলপদ্যে আটকে থাকেন ভুলু৷ আর ভুল-কবিতা লেখা শেষ হলেই একটা বিচ্ছিরি গ্লানি এসে গ্রাস করে ভুলুকবিকে৷ অনুভূতিটা ভারি অদরকারি কিন্তু কিছুতেই সেই গ্লানিবোধটুকুকে পাশ কাটিয়ে ভুলকবিতার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়তে পারেন না কবি।
কান্না আসে।
মায়াবোধ আসে৷
আহা, সে কী মায়া৷ যা কিছু চেনা, যা কিছু সুপরিচিত; তা সে'সবে যতই ভুলচুক-খুঁত থাক- সমস্ত কিছুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়তে ইচ্ছে করে৷ পুরনো বই, ফেলে আসা বন্ধু, মায়ের গন্ধ, অঙ্কভুলের খাতা; সমস্ত কিছুকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে৷
সেই ভুল-কান্নার ঘোর কেটে গেলে সদ্যলেখা ভুল-কবিতা প্রকাশ করার দিকে মন দেন ভুলু দাস৷ ভুল-কবিতার খাতা থেকে সদ্য লেখা "ভুল" শিরোনামের কবিতার পাতাটা ছিঁড়ে নিয়ে সে'টাকে দুমড়েমুচড়ে ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে ছুঁড়ে ফেলা।
ভুলুবাবু ওয়েস্টপেপার বাস্কেটটার একটা নির্ভুল নাম রেখেছেন; "ভুল প্রকাশনা"।
No comments:
Post a Comment