বসার ঘরে জব্বর আড্ডা জমেছে। চা-য়ের কাপে দেদার চুমুকের পাশাপাশি তেলেভাজা চেবানোর কুচুরমুচুর সিম্ফনিতে সন্ধেটা ক্লাউড নাইনে চলে গেছে (মেজকাকার ভাষায়)।
মেজকাকা ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে।
বড়দা সোফায় টানটান হয়ে শুয়ে।
আমি সোফার পাশে মেঝেতে থেবড়ে বসে।
বড়দা: শীত শেষ হওয়ার আগে একটা হাইক্লাস পিকনিক করা দরকার৷
মেজকাকা: এই তোর এক বাজে বাতিক পিন্টু৷ কথায় কথায় পিকনিক বা ফিস্টি।
বড়দা: আর তোমার রোগ হলো যে কোনো ভালো প্ল্যান ফাঁদতে না ফাঁদতেই মুখ ভেটকে ফুট কাটা।
আমি: এই শুরু হলো।
বড়দা: তুই কি পিকনিকের ফরে না এগেন্সটে?
আমি: আমি খাওয়াদাওয়ার ফরে। অলওয়েজ।
মেজকাকা: খাওয়াদাওয়ার জন্য মাঠেঘাটের ধুলো খাওয়ার কী দরকার। সামনের রোববার আমি বাজার করব। তারপর কোমর বেঁধে হেঁসেলে ঢুকব, তোরা দু'জনে অ্যাসিস্ট করবি।
আমি: পয়েন্ট।
বড়দা: তুই থাম বিট্টু। ভারি এলে পয়েন্ট ধরে মাতব্বরি করতে। আচ্ছা মেজকা, একটা রোব্বার না হয় একটু বাইরে কাটালে। মনের জানালা খুলে দেবে, ফ্রেশ এয়ার এসে..।
মেজকা: ন্যাকা। মনের জানালা খোলার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ইউটিউব দেখা৷ পলিউটেড হাওয়ায় ব্যাডমিন্টন খেলে, দায়সারা রান্না করে হুজুগ সেলিব্রেট করার দলে আমি নেই।
বড়দা: কে দিব্যি দিয়েছে তোমায় ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য৷ তুমি না হয় সকাল থেকে কাঠের উনুনে মাঠে বসে রান্না কোরো৷।
আমি: পিকনিক, ঘাস-ফুল-হাওয়া, খাওয়াদাওয়া খুবই ভালো ব্যাপার৷ কিন্তু ব্যাডমিন্টন আবার কেন৷ বড্ড ধকল৷
বড়দা: সাধে কী আর বলি ভোঁদাচন্দ্র। মেজকার সেক্রেটারি হওয়া ছাড়া তোর দ্বারা আর কিস্যু হবে না।
মেজকাকা: পিন্টু৷ তুই কি বিট্টুকে ইনসাল্ট করলি না আমাকে?
বড়দা: আমি একাই পিকনিকে যাবো।
মেজকাকা: সেই ভালো৷ রোববার তুই একা মাঠে বসে রান্নাবাটি খেল। আমি আর বিট্টু সকালে চাইনিজ চেকার খেলে দুপুরে রেঁধেবেড়ে মাংসভাত খাবো।
বড়দা: ডিসগ্রেসফুল!
মেজকাকা: আহা চটছিস কেন।
বড়দা: বিট্টুটা দুধের শিশু৷ তুমি বুড়োহাবড়া। মাঝখান থেকে তোমাদের পাল্লায় পড়ে পিকনিকহীন শীত কাটিয়ে আমার যৌবন নষ্ট হচ্ছে।
আমি: হ্যাঁ রে বড়দা, এইত্তো তুই ইয়ারদোস্তদের সঙ্গে দীঘা ঘুরে এলি। এসেই আবার পিকনিক?
বড়দা: জ্যাঠামো করিস না৷ একটা ফ্যামিলি পিকনিক ছাড়া শীত চলে যাওয়া ব্যাপারটা খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়৷
আমি: ও মেজকা৷ চলো না৷ এক রাউন্ড পিকনিক করেই আসি৷ বড়দা এত করে বলছে..।
বড়দা: মেজকাকি থাকলে তোমরা আমায় এমন একঘরে করতে পারতে না৷
মেজকাকা: ন্যাকা! মেজকাকি বাপের বাড়ি গেছে, টেঁসে যায়নি৷ আর বলছি তো..সামনের রোববার তোকে আমি মাংস-ভাত খাওয়াব।
বড়দা: ধুস৷ বাদ দাও।
আমি: বড়দা, আর এক রাউন্ড তেলেভাজা নিয়ে আসি?
বড়দা: নাহ্৷ অম্বল।
মেজকাকা: দু'প্লেট তেলেভাজা খেয়েই অম্বল? ওই যৌবন দিয়ে হবেটা কী? বুড়োদের লাফিং ক্লাব জয়েন কর।
বড়দা: অন্যায় করেছি আমি পিকনিকের কথা বলে। প্রতিজ্ঞা করছি, আর কোনোদিন যদি তোমাদের আমি পিকনিকের কথা বলেছি..।
আমি: বড়দা, এই প্রতিজ্ঞা তুই এর আগে অন্তত বার সাতেক করেছিস।
মেজকাকা: শোন পিন্টু, পিকনিকের প্ল্যান কষা আর সেই কষা প্ল্যানে জল ঢালা - মনে রাখিস, সে'টাই হলো হাইয়েস্ট ফর্ম অফ পিকনিক।
বড়দা: ডিসগাস্টিং। আমি আসি।
মেজকাকা: যাবি? কিন্তু আমি যে ময়দা মেখে রেখেছি। আর ময়না ডুমো ডুমো করে আলু কুচিয়ে রেখে গেছে৷
বড়দা: চট করে ভাজো দেখি৷ লুচি খাওয়ার পর এই কূপমণ্ডূকদের আড্ডায় আমি আর পাঁচ মিনিটও বসতে চাই না৷
No comments:
Post a Comment