- ভালো করে সিচুয়েশনটা বুঝে নাও ভোম্বলকুমার৷ ওই দেখছ, রাস্তার ওপারে, আরে ওই যে সোজা; পেল্লায় একটা অ্যাপার্টমেন্ট, তাই তো? ওইয্যে, গোলাপি দেওয়াল?
- ও'টা গোলাপি নয়৷
- মানে? হলদে নাকি?
- বাঙলায় কী বলে?
- জানি না বগলাদা৷
- জানো যখন কাঁচকলা তখন কথার মধ্যে খামোখা ফুট কাটার কী দরকার? ওই গোলাপি বহুতল, ও'টার বারো তলায় দ্যাখো...।
- ওপরের দিক থেকে বারো না নীচের দিক থেকে?
- এ বুদ্ধি নিয়ে যে কী'ভাবে স্নাইপার হয়েছ কে জানে। নীচ থেকে গুনতে থাকো৷ এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট নয় দশ এগারো; তারপর ওই বারো..। এই, এই আমার তর্জনী বরাবর চোখ রাখো, রেখেছো?
- রেখেছি। দেখছি।
- গুড৷ ওই ফ্লোরে ক'টা ব্যালকনি দেখছে?
- সাতটা ব্যালকনি, বগলাদা।
- ভেরি গুড৷ এ'বার একদম মধ্যিখানের ব্যালকনিটায় ফোকাস করো৷ করেছ?
- টোটালি।
- ওই ব্যালনিটার ডান দিকে একটা জানালা দেখতে পাচ্ছ? ওই যেটার গায়ে একটা ফুলের টব রাখা আছে?
- হলুদ জবা।
- ভেরি ভেরি ভেরি গুড৷ আর মিনিট দশেকের মধ্যেই টার্গেট ও'খানে এসে দাঁড়াবেন৷
- ক্লীয়ার৷
- এলোপাথাড়ি ছুঁড়ো না যেন। একটা বুলেট চালিয়ে কাজ সেরে নীচে নেমে আসবে৷ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।
- একদম স্পষ্ট।
- বাহ্, বেশ চটপটে তো তুমি ভাই ভোম্বল৷ তবে আমি এখন আসি, কেমন? নীচে অপেক্ষা করছি৷ নীল মারুতি অলটো৷ ফোর থ্রি সেভেন সিক্স।
***
- হ্যালো! কী ব্যাপার ভায়া! তুমি অতক্ষণ আগে টেক্স করলে কাজ হাসিল এখনও এলে না কেন, আমি যে নার্ভাস হয়ে বসে আছি গাড়িতে..। বাধ্য হয়ে ফোন করে ফেললাম৷
- আপনার বাইনোকুলারটা আছে হাতের আছে?
- আছে।
- গাড়ির জানালা থেকে গোলাপি বাড়ির বারোতলার মাঝের ব্যালকনির পাশের জানালার ভ্যিউ পাওয়া যাচ্ছে কি?
- তা চেষ্টা করলে দেখতে পাবো হয়ত..কেন বলো দেখি ভোম্বল? কোনো গোলমাল হলো নাকি? পুলিশ ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে? তুমি যে বলেছিলে সাইলেন্ট এক্সেকিউশন হবে!
- আরে পুলিশ টের পেতে এখনও ঢের দেরী৷ কিন্তু অবজার্ভ করুন জানালাটা আগে৷ ক্যুইকলি।
- দাঁড়াও দেখি...কই...কিছুই তো..পিছনের দেওয়ালে রক্তের ছিঁটে কি? মনে হচ্ছে...লাশ নিশ্চয়ই মেঝেতে পড়ে তাই আউট অফ ভ্যিউ...কিন্তু আর তো কিছুই..।
- আরে। ভালো করে দেখুন বগলাদা।
- এই..এই ভোম্বল, ওই হলুদ জবার ফুলটা মিসিং কেন? টবটা তো আছে দেখছি৷ তবে কী...।
- হে হে হে৷ সে'খানে গেছিলাম৷ চিন্তা করবেন না৷ কোনো চিহ্ন ফেলে আসিনি। সে দায় আমার৷
- তুমি শালা দূর থেকে গুলি চালিয়ে তারপর সে বিল্ডিংয়ে ঢুকলে ফুল তুলতে? তুমি কি উন্মাদ?
- দূর থেকে স্নাইপিংটা বিজনেস৷ কিন্তু ও বাড়িতে ঢুঁ মারতে হলো অন্য কারণে। আমার সাত বছরের ছেলের খুব জ্বর বুঝলেন৷ সে আজ বেরোবার আগে আমায় বলে দিয়েছিল অফিস থেকে কিছু একটা ওর জন্য নিয়ে যেতে৷ ওর বন্ধুদের বাবারা বা মায়েরা নাকি প্রায়সই নিজেদের অফিস থেকে ওদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যায়; সস্তা স্টেশনারি, মিটিংয়ে পাওয়া রাইটিং প্যাড বা অফিস ক্যান্টিনের কচুরি। তা আমার পুত্রটি আমার অফিস সম্বন্ধে ঠিক ওয়াকিবহাল নয়৷ তা'বলে তার এ শখ অপূর্ণ রাখি কী করে বলুন, বগলাদা।
- তুমি ডোবাবে ভাই ভোম্বল। স্টেশনারি দোকান থেকে ডটপেন কিনে বাড়ি ফিরলেই ল্যাঠা চুকে যেত..।
- না। খোকার সঙ্গে ধোঁকা নয়৷ ম্যাটার অফ প্রিন্সিপল। আপনি এগিয়ে যান এ'বারে৷ আপনার অল্টোর দরকার আমার আপাতত নেই৷ ক্যাশটা আমি কাল তুলে নেব আপনার অফিস থেকে৷ আজ আসি।
No comments:
Post a Comment