Tuesday, July 16, 2024

স্নাইপার



- ভালো করে সিচুয়েশনটা বুঝে নাও ভোম্বলকুমার৷ ওই দেখছ, রাস্তার ওপারে, আরে ওই যে সোজা; পেল্লায় একটা অ্যাপার্টমেন্ট, তাই তো? ওইয্যে, গোলাপি দেওয়াল?

- ও'টা গোলাপি নয়৷

- মানে? হলদে নাকি?

- ওই রঙটাকে ইংরেজিতে বলে পীচ।

- বাঙলায় কী বলে?

- জানি না বগলাদা৷

- জানো যখন কাঁচকলা তখন কথার মধ্যে খামোখা ফুট কাটার কী দরকার? ওই গোলাপি বহুতল, ও'টার বারো তলায় দ্যাখো...।

- ওপরের দিক থেকে বারো না নীচের দিক থেকে?

- এ বুদ্ধি নিয়ে যে কী'ভাবে স্নাইপার হয়েছ কে জানে। নীচ থেকে গুনতে থাকো৷ এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট নয় দশ এগারো; তারপর ওই বারো..। এই, এই আমার তর্জনী বরাবর চোখ রাখো, রেখেছো?

- রেখেছি। দেখছি।

- গুড৷ ওই ফ্লোরে ক'টা ব্যালকনি দেখছে?

- সাতটা ব্যালকনি, বগলাদা।

- ভেরি গুড৷ এ'বার একদম মধ্যিখানের ব্যালকনিটায় ফোকাস করো৷ করেছ?

- টোটালি।

- ওই ব্যালনিটার ডান দিকে একটা জানালা দেখতে পাচ্ছ? ওই যেটার গায়ে একটা ফুলের টব রাখা আছে?

- হলুদ জবা।

- ভেরি ভেরি ভেরি গুড৷ আর মিনিট দশেকের মধ্যেই টার্গেট ও'খানে এসে দাঁড়াবেন৷

- ক্লীয়ার৷

- এলোপাথাড়ি ছুঁড়ো না যেন। একটা বুলেট চালিয়ে কাজ সেরে নীচে নেমে আসবে৷ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।

- একদম স্পষ্ট।

- বাহ্, বেশ চটপটে তো তুমি ভাই ভোম্বল৷ তবে আমি এখন আসি, কেমন? নীচে অপেক্ষা করছি৷ নীল মারুতি অলটো৷ ফোর থ্রি সেভেন সিক্স।

***

- হ্যালো! কী ব্যাপার ভায়া! তুমি অতক্ষণ আগে টেক্স করলে কাজ হাসিল এখনও এলে না কেন, আমি যে নার্ভাস হয়ে বসে আছি গাড়িতে..। বাধ্য হয়ে ফোন করে ফেললাম৷

- আপনার বাইনোকুলারটা আছে হাতের আছে?

- আছে।

- গাড়ির জানালা থেকে গোলাপি বাড়ির বারোতলার মাঝের ব্যালকনির পাশের জানালার ভ্যিউ পাওয়া যাচ্ছে কি?

- তা চেষ্টা করলে দেখতে পাবো হয়ত..কেন বলো দেখি ভোম্বল? কোনো গোলমাল হলো নাকি? পুলিশ ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে? তুমি যে বলেছিলে সাইলেন্ট এক্সেকিউশন হবে!

- আরে পুলিশ টের পেতে এখনও ঢের দেরী৷ কিন্তু অবজার্ভ করুন জানালাটা আগে৷ ক্যুইকলি।

- দাঁড়াও দেখি...কই...কিছুই তো..পিছনের দেওয়ালে রক্তের ছিঁটে কি? মনে হচ্ছে...লাশ নিশ্চয়ই মেঝেতে পড়ে তাই আউট অফ ভ্যিউ...কিন্তু আর তো কিছুই..।

- আরে। ভালো করে দেখুন বগলাদা।

- এই..এই ভোম্বল, ওই হলুদ জবার ফুলটা মিসিং কেন? টবটা তো আছে দেখছি৷ তবে কী...।

- হে হে হে৷ সে'খানে গেছিলাম৷ চিন্তা করবেন না৷ কোনো চিহ্ন ফেলে আসিনি। সে দায় আমার৷

- তুমি শালা দূর থেকে গুলি চালিয়ে তারপর সে বিল্ডিংয়ে ঢুকলে ফুল তুলতে? তুমি কি উন্মাদ?

- দূর থেকে স্নাইপিংটা বিজনেস৷ কিন্তু ও বাড়িতে ঢুঁ মারতে হলো অন্য কারণে। আমার সাত বছরের ছেলের খুব জ্বর বুঝলেন৷ সে আজ বেরোবার আগে আমায় বলে দিয়েছিল অফিস থেকে কিছু একটা ওর জন্য নিয়ে যেতে৷ ওর বন্ধুদের বাবারা বা মায়েরা নাকি প্রায়সই নিজেদের অফিস থেকে ওদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যায়; সস্তা স্টেশনারি, মিটিংয়ে পাওয়া রাইটিং প্যাড বা অফিস ক্যান্টিনের কচুরি। তা আমার পুত্রটি আমার অফিস সম্বন্ধে ঠিক ওয়াকিবহাল নয়৷ তা'বলে তার এ শখ অপূর্ণ রাখি কী করে বলুন, বগলাদা।

- তুমি ডোবাবে ভাই ভোম্বল। স্টেশনারি দোকান থেকে ডটপেন কিনে বাড়ি ফিরলেই ল্যাঠা চুকে যেত..।

- না। খোকার সঙ্গে ধোঁকা নয়৷ ম্যাটার অফ প্রিন্সিপল। আপনি এগিয়ে যান এ'বারে৷ আপনার অল্টোর দরকার আমার আপাতত নেই৷ ক্যাশটা আমি কাল তুলে নেব আপনার অফিস থেকে৷ আজ আসি।

No comments: