Tuesday, July 16, 2024

বই পড়া ক্রিকেট দেখা



অরিন্দমদার সঙ্গে কথা হচ্ছিল বই পড়া আর ক্রিকেট দেখা নিয়ে৷ সুবিধের ব্যাপার হলো, আমাদের দু'জনেরই সাহিত্যজ্ঞান আর ক্রিকেটবুদ্ধিতে আদৌ তেমন গভীরতা নেই; যে'টা আছে সে'টা হলো মুগ্ধতা। এই দু'টো ব্যাপারেই মজে যেতে পারলে যে কী প্রবল আনন্দ অনুভব করা যায়; সে'টা নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল৷ ঘরে ভাজা ভালো শিঙাড়ার ওই একটা গুণ; আড্ডিয়েরা যতই খেলো হোক না কেন, আড্ডা অতি সহজেই ধারালো হয়ে ওঠে৷

আড্ডা শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে, সেই আহ্লাদ গিয়ে গড়িয়ে পড়ল ক্রিকেট বিষয়ক বইয়ে। তারপর কী'ভাবে যেন মতি নন্দী হয়ে শান্তিপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়ে নেমে ছেলেবেলায় পড়া গল্পের বইয়ে এসে পড়লো। আমরা বলছিলাম যে একবার বই পড়া বা ক্রিকেট দেখায় ডুব দিতে পারাটা যোগব্যায়ামের মত৷ অরিন্দমদা আমার ভাগের একটা শিঙাড়া খানিকটা ভেঙে নিয়ে একটা জরুরী কথা বললে, "ক্রিকেট বা বই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বুঝলি তো। আদত ব্যাপারটা হলো ডুব দিতে পারায়৷ যে কোনো বিষয়ে এক মিনিটের জন্যও ডুব যেতে বলে যে'টা দরকার সে'টা হলো সেল্ফ-ডিসিপ্লিন৷ কোনো কিছুকে দরদ দিয়ে কদর করতে হলে এই সেল্ফ-ডিসিপ্লিন অত্যন্ত জরুরী। অন্যের চাপিয়ে দেওয়া ডিসিপ্লিনে হাড় জ্বলে যায়, কিন্তু নিজের ভালো লাগাকে ডিসিপ্লিনে বেঁধে ফেলায় যে তৃপ্তি, তা তুলনাহীন"। এরপর বেহিসেবের শিঙাড়াটা পুরোটাই সাফ করে অরিন্দমদা যোগ করলে, "আরো একটা ব্যাপার আছে জানিস। রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্টের পরোয়া করলে সেই প্রোভার্বিয়াল ডুব দেওয়া যায় না৷ ইন ফ্যাক্ট, এ বই পড়ে কী হবে, ও ম্যাচ দেখে কী হবে; অত অঙ্ক করে বসলে সারাক্ষণ মনের মধ্যে খচখচ চলে। কিন্তু হাভাতের মত গা ভাসিয়ে দিতে পারাটাই হচ্ছে আদত থেরাপি"।

ম্যাটিলডার বাস রোল্ড ডাহলের কল্পনায়, কিন্তু ভদ্রলোকের লেখার গুণেই ম্যাটিলডা মেয়েটি জীবন্ত; প্রাণোচ্ছল। ছোট্ট ম্যাটিলডার জীবন না-পাওয়ায় ভরপুর অথচ সে'সব না-পাওয়া ছাপিয়ে ম্যাটিলডা আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে ডিকেন্সে৷ ম্যাটিলিডা জিনিয়াস বা সুপারগার্ল; বইয়ের মূল কথা সে'টা নয়। দু:খে জেরবার না হয়ে পুঁচকে একটা মেয়ে ডিকেন্সে ডুব দিয়ে আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে; আসল রূপকথা রয়েছে সেইখানে। অরিন্দমদার কথা শুনে মনে হলো অতটুকু মেয়ে ইয়াব্বড় সব বই পড়তে পারছে; সে'টা অবাক কাণ্ড বটে কিন্তু ম্যাজিক নয়৷ ম্যাজিক হলো ম্যাটিলডা এই যে মিসেস হ্যাভিশ্যাম, এস্টেলা আর পিপের জগতে হারিয়ে গিয়ে আনন্দ পাচ্ছে, সেই ব্যাপারটায়। আবার আহমেদনগর কেল্লায় বন্দী থেকে নেহেরু যতটুকু লেখালিখি করেছেন, সে'গুলো পড়েও স্পষ্ট যে ম্যাটিলডার মতই ভদ্রলোক পড়াশোনার ডিসিপ্লিনে ডুব দিয়ে নিজেকে মজবুত করছেন। সেই পড়া এবং লেখা কতটা ভালো এবং কতটা মন্দ হলো, সে হিসেবে না গিয়ে প্রসেসে গা ভাসাচ্ছেন।

আমি বা অরিন্দমদা ম্যাটিলডা বা জহরলালের নখের যোগ্য নই, তবে সামান্য গা-ভাসানোর সুযোগ আমাদেরও আছে, সে আনন্দ কম কীসে। সে আনন্দেই সে'দিন সেকেন্ড রাউন্ড শিঙাড়া ভাজতে গেছিলাম হয়ত।

No comments: