এ'টা বছর আট-নয় আগে তোলা ছবি৷ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ওপর, শক্তিগড়ে৷ ল্যাংচার পীঠস্থান হলেও, ওই এলাকায় আমি গাড়ি দাঁড় করাতাম এক প্লেট ডিমরুটি আর কফির জন্য৷ অবশ্য মাঝেমধ্যে যে শিঙাড়া নেওয়া হত না তা নয়।
ডিম-পাউরুটি খাওয়ার সবচেয়ে উপাদেয় অংশটা হলো সে'টা বানাতে দেখা৷
১। ডিম ফাটিয়ে ছোট স্টিলের মগে নিয়ে নেওয়া।
২। তারপর পেঁয়াজকুচি লঙ্কাকুচি তুলে সেই গেলাসে ফেলে ঘুটঘুট করে নেড়া নেওয়া। এই পর্যায় অব্যর্থ ভাবে আমি একটু আব্দারের সুরে সামান্য বাড়তি পেঁয়াজকুচি দিতে বলব৷
৩। ও'দিকে বহু-ব্যবহারে খানিকটা জীর্ণ এবং সামান্য ত্যাড়াব্যাঁকা চাটুতে ততক্ষণে স্প্রাইটের বোতল থেকে ঢেলে নেওয়া সর্ষের তেল গরম হচ্ছে।
৪। তেল গরম হয়ে গেলেই ফেটানো ডিম ডাইরেক্ট চাটুতে পড়বে; সেই চড়চড়াৎ শব্দ যে কী মোহময়।
৫। এরপর হলুদ কাগজের মলাট খুলে বেরিয়ে আসবে লম্বাটে পাউরুটি৷ ছুরি দিয়ে মাথার দিকে কালো অংশটা ছেঁটে দেওয়া হবে৷
৬৷ তারপর দু'ফালি পাউরুটিকে চাটুতে ভাজা হতে থাকা ডিমের ওপর রাখা হবে৷
৭৷ মিনিট খানেক পর কাগজের প্লেটে সে ডিম পাউরুটি নামিয়ে নেওয়া হবে৷
৮। এরপর ছড়ানো হবে মশলা; এ'টা সাধারণত হত ওই চাটমশলা আর গোলমরিচ মেশানো একটা ব্যাপার।
৯। সবার শেষে একটা মারাত্মক স্ক্যান্ডালাস ব্যাপার ঘটবে। কুমড়ো গোলা লাল রঙ মেশানো সসকে টমেটো সস বলে চালানো হয়, সে কথা ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি৷ সে'টার স্বাদ আমার খুব একটা পছন্দসইও নয়৷ তবে কী অদ্ভুত ব্যাপার, ডিমপাউরুটির ওপর সেই সস ছড়িয়ে খেতে দিব্যি ভালো লাগে৷ ডিম পাউরুটির ওপর 'টমেটো সসে'র বোতল ঝাঁকিয়ে কয়েক ফোঁটা লাল ফেলে দেওয়া; মাস্টারস্ট্রোক।
১০। এরপর হাতের ওপর কাগজের প্লেটের উষ্ণতা অনুভব করা আর নাকে সর্ষের তেলে ভাজা ডিম আর সেঁকা পাউরুটির সুবাস৷
খাওয়া তো ছোটখাটো ব্যাপার, খাওয়ার আগের এই যে 'প্রসেস'; ও'টাই মূল উৎসব৷
No comments:
Post a Comment