যৌবনের উচ্ছ্বাসে এক সময় মনে হত, দাড়ি কামানোর ব্লেডের ব্যাপারে মেজাজটা চরম শৌখিন পর্যায়ে রাখা উচিৎ। চরম ধারালো ব্লেড, এক তাল মাখনের মত গাল বেয়ে ওঠা নামা করবে। দাড়ি কাটার পর গালে হাত বোলালে নিজের খসখসে আঙুলের ডগার প্রতি মৃদু তিরস্কার বেরিয়ে আসবে আপনা থেকেই। আজকের তাজা ব্লেড, কাল হবে ব্রাত্য; তবেই না ঘ্যাম। সেই রঙিন বয়সে দাঁড়িয়ে বাবার পুরনো ব্লেড আঁকড়ে থাকার স্বভাবটাকে কী বিরক্তি নিয়েই না দেখতাম৷
অথচ নিজে মাঝবয়সে এসে দেখলাম নিজের চরিত্রে জমে থাকা যত কিপটেমো আর গড়িমসি- সব এসে জমা হয়েছে নতুন ব্লেড ব্যবহারে৷ কতবার গালে রেজার ছুঁইয়ে মনে হয়ে, "এহ্, ব্লেডটা এ'বারের পরেই রিজেক্ট করতে হবে"। অথচ পরের দিন নতুন ব্লেডের প্যাকেট হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে সরিয়ে রাখা; "এই তো সে'দিনই ব্লেডটা নামালাম, আর একদিন চলুন না হয়"৷ এইভাবে আরও দিন কতক সেই পুরনো ব্লেডে মাটি কোপানো৷ ঘর্ঘর, ঘসঘস।
কিন্তু৷
সমস্ত গড়িমসি পেরিয়ে যেতিন নতুন ব্লেডখানা প্যাকেট ঝেড়ে ফেলে সত্যিই রেজারে এসে বসবে; সে'দিনের দাড়ি কামানকোর যে সুপার-মসৃণ নবাবী, আহা। নতুন ব্লেডে দাড়ি কামানোর দিনটা রেজার হাতে একটু বাড়তি সময় কাটে আয়নার সামনে৷ বার বার মনে হয়, "মধ্যবিত্তের বেতনটার এমন মখমলে ব্যবহার আর দু'টি নেই"। অন্যান্য দিনে দাড়ি কামানোর পর ওই আফটার শেভ লোশন লাগানোর কথা তেমন মনে পড়ে না৷ নতুন ব্লেডে দাড়ি কামানোর শুভদিনে তাকের কোণ থেকে ওল্ড স্পাইসের শিশিটা শিস দিয়ে ডাকে "এইয্যে, এ'দিকে দ্যাখো একবার ভাইটি"।
নতুন ব্লেড নামানোর দিনটায় মনের মধ্যে বেশ একটা ফুরফুর থাকে৷ আর থাকে epiphany; এইভাবেই খোকা থেকে বাবা হয়ে বাবা-er হতে হতে বাবা-est হয়ে যাওয়ার রুটখানাকে ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই।
No comments:
Post a Comment